বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: সবে শেষ হয়েছে সংসদের বিশেষ অধিবেশন। নতুন সংসদ ভবনেই হয় এই অধিবেশন। যেখানে পাস হয়েছে মহিলা সংরক্ষণ বিল। অধিবেশন শেষ হতেই নতুন ভবন নিয়ে শুরু হলো রাজনৈতিক চাপানউতোর। নতুন ভবনকে ‘মোদি মাল্টিপ্লেক্স’ বলে বলে কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস। ২০২৪ সালে ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে পুরনো ভবনেই ফিরে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস (Congress) সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ জয়রাম রমেশ (Jairam Ramesh)। তাঁর দাবি, ‘দমবন্ধ’ এই ভবনে অধিবেশন করবে না ইন্ডিয়া জোট।
সংসদের নতুন ভবন নিয়ে ঢাকঢোল পেটানো কম হল না। কংগ্রেসের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (PM Modi) উদ্দেশ্য কী ছিল তা এখন জলের মতোই স্বচ্ছ। জয়রামের কথায়, “এই মোদি মাল্টিপ্লেক্সে দম বন্ধ লাগছে। রাজ্যসভা ও লোকসভার মধ্যে যে সহজ সমন্বয় ছিল পুরনো সংসদ ভবনে তা নতুন ভবনে গোলকধাঁধায় হারিয়ে গিয়েছে। কোনও স্থাপত্য যদি গণতন্ত্রকে হত্যা করতে সফল হয়, তাহলে বুঝতে হবে নতুন করে সংবিধান না লিখেও মোদি তাতে সফল হয়েছেন।”
ভারতীয় গণতন্ত্রের এই নয়া পীঠস্থানকে বৃহস্পতিবার সাত তারা হোটেল বলে কটাক্ষ করেছিলেন সপা সাংসদ জয়া বচ্চন। প্রবীণ সাংবাদিক থেকে শুরু করে দল নির্বিশেষে বহু সাংসদ নতুন পার্লামেন্ট ভবনকে নিষ্প্রাণ বলতে শুরু করেছে। জয়রামের কথায়, নতুন ভবন এমনই যে পরস্পরকে দেখতে বাইনোকুলার লাগবে। পুরনো ভবনের ঐতিহ্য ছিল শুধু তা নয়, সেখানে পারস্পরিক আলোচনার অপার সুযোগ ছিল। গণতন্ত্রের মেরুদণ্ডই হল আলোচনা ও বিতর্ক। এ কথা বলেই কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এদিন বলেছেন, ২০২৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতা পরিবর্তন হবে।
তার পর এই নতুন ভবনকে অন্য কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেটা ভাবতে হবে। অর্থাৎ সরকার বদল হলে পুরনো সংসদ ভবনে ফিরে যাওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে রাখতে চেয়েছেন জয়রাম। পুরনো সংসদ ভবনের অলিন্দ বা লবি যাঁরা ঘুরে দেখেননি তাঁদের কাছে এই ফারাক বোঝা সম্ভব নয়। আসলে পুরনো ভবনের অলিন্দ ও লবি ছিল যেন এক মিলনক্ষেত্র। দেখা যেত, অলিন্দের ইতিউতি সাংসদরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। বা দোতলার বারান্দায় এক কাপ চা হাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন। নতুন ভবনে সেই সব সুযোগ কম।
প্রশস্ত করিডর এমন ভাবে সাজানো যে বাকি সব কিছু কেমন আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন রাজনীতিক ও সাংবাদিকদের অনেকেই। জয়রামের কথায়, এটা শুধু আমার মত নয়, বিজেপির অনেক সাংসদও তাই মনে করেন। সংসদ ভবনের কর্মীদের বেশিরভাগেরই মতো তাই। এই ভবন দেখে কেবল তাঁরাই আহা আহা করতে পারেন, যাঁরা জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন। পর্যবেক্ষকদের মতে, পুরনো ভবন হল নেতা, সাংবাদিক, আমলাদের কাছে বহুদিনের এক অভ্যাস। তার প্রতিটা ঘর, অলিন্দ, লবি, সেন্ট্রাল হল, উঠোন, গান্ধী মূর্তির পাদদেশ মায় একটা ছন্দ রয়েছে। পরতে পরতে লেগে রয়েছে ইতিহাস। সেই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা মুশকিল। জয়রামদের নতুন ভবন স্বাভাবিক কারণেই যান্ত্রিক মনে হচ্ছে। যদিও কংগ্রেসের এই অবস্থানের বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি গেরুয়া শিবির।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.