সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশের টেলিকম সার্কেলে শুরু হয়ে গিয়েছে জোর লড়াই! শিল্পমহল ও বিশেষজ্ঞদের অনুমান, রিলায়েন্স জিও ইনফোকম বাজারে এসে যাওয়ায় প্রবল চাপের মুখে ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন ও আইডিয়া-র মতো প্রথম সারির টেলি কমিউনিকেশন সংস্থাগুলি। গ্রাহক ধরে রাখতে একধাক্কায় মাশুল কমাতে পারে সংস্থাগুলি। জিও-র পরিষেবার গুণমান বজায় থাকলে, আগামী দু’বছরের মধ্যে দেশের টেলিকম গ্রাহকদের মধ্যে প্রায় নব্বই শতাংশ রিলায়েন্স জিও-র দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন৷
মোবাইলকে সকলের হাতের মুঠোর মধ্যে এনে দিতে বছর দশেক আগেই উদ্যোগ নিয়েছিল রিলায়েন্স৷ মোবাইল বিষয়টিই যখন ভারতে নতুন আমদানি হয়েছে, ইনকামিংয়ের জন্য গ্রাহকদের যখন গুনতে হত গাঁটের কড়ি, তখন নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে ফ্রি ইনকামিংয়ের কথা ঘোষণা করে আম্বানিদের রিলায়েন্স৷ এমনকী রিলায়েন্স নেটওয়ার্কের মধ্যে ঘোষণা করা হয় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কথা বলার পরিষেবা৷ সেই পথেই আরও কয়েক কদম হেঁটে বৃহস্পতিবার রিলায়েন্স কর্তা জানালেন, তাঁদের নতুন ‘জিও’ পরিষেবায় যে কোনও নেটওয়ার্কেই আগামী চারমাসের জন্য কথা বলা যাবে কোনও খরচ ছাড়াই৷ এমনকী এই সময়ে যথেচ্ছ মোবাইল ইন্টারনেটও ব্যবহার করতে পারবেন গ্রাহকরা৷ এমনকী তার জন্য দামি কোনও মোবাইল সেটও কিনতে হবে না গ্রাহককে৷ ন্যূনতম তিন হাজার টাকার স্মার্ট ফোন হাতে থাকলেই যে কোনও ব্যক্তি এই জিও পরিষেবা ব্যবহার করতে পারবেন৷
এদিকে, রিলায়েন্স তাদের নতুন মোবাইল পরিষেবা ঘোষণা করতেই ধস নামে শেয়ার বাজারের টেলিকম সেক্টরে৷ সকালে যতক্ষণ শেয়ার হোল্ডারদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছিলেন রিলায়েন্স কর্তা, ততক্ষণে ভারতী এয়ারটেল, আইডিয়ার মতো বাজারের অন্যান্য টেলিকম সংস্থার শেয়ার দর পড়ে যায় হু হু করে৷ ক্ষতির অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় ১৭ হাজার কোটি৷ যদিও রিলায়েন্সের সঙ্গে পাল্লা দিতে ভারতী এয়ারটেলও ১৩৫ এমবিপিএস গতির ফোর জি নেটওয়ার্ক পরিষেবা আনার কথা জানিয়ে দিয়েছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ টেলিকম সংস্থার কর্তার বক্তব্য, “এখন ট্যারিফের খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। অম্বানিরা ১০০ মিলিয়ন গ্রাহক তৈরির টার্গেট নিয়ে নেমেছে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অন্যান্য সংস্থাগুলি ট্যারিফ কমাতেই হবে!”
সেলুলার অপারেটার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর জেনারেল রাজন ম্যাথিউজ মনে করেন, রিলায়েন্সের প্রোমোশনাল অফারের সঙ্গে টক্কর দেওয়া কঠিন হবে প্রতিযোগী সংস্থাগুলির। সস্তায় গ্রাহকদের আরও উন্নত পরিষেবা দেওয়ার লড়াই এখন ভোডাফোন, এয়ারটেল, আইডিয়া, এয়ারসেল ও এমটিএস-কে বাস্তবের শক্ত জমিতে আছড়ে ফেলবে! ইতিমধ্যেই একাধিক টেলিকম সংস্থা ইন্টারনেটের মাশুল কমানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। বাকিরাও তৈরি হচ্ছে। রাজন বলছেন, “জিও বাজারে আসার দু’বছর আগে থেকেই অন্যান্যরা সতর্ক হচ্ছিল। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, জিও এখনও সব কার্ড খেলেনি। সামনে আরও চমক অপেক্ষা করে থাকতে পারে।”
আগামী সোমবার বাজারে আসছে জিও৷ তার পর থেকে এই বছরের শেষ দিন অর্থাত্ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জিও নম্বর থেকে দেশের যে কোনও নেটওয়ার্কের যে কোনও নম্বরে ফোন করতেই কোনও টাকা লাগবে না৷ রোমিংয়ে গেলে, অর্থাত্ নিজের নেটওয়ার্কের বাইরে গেলেও কোনও অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে না৷ ইন্টারনেট মিলবে ‘ফোর-জি’ গতিতে৷ মেসেজ করতেও লাগবে না কোনও টাকা৷ এমনকী নববর্ষ, পুজো, দীপাবলি, বড়দিনের মতো ‘ব্লক ডে’-গুলোতে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হবে না৷ এর উপরে আবার পড়ুয়াদের জন্য থাকছে ২৫ শতাংশের বিশেষ অতিরিক্ত ছাড়৷ মুকেশের এই পরিষেবা ঘোষণাই দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিষেবা ক্ষেত্রে ঝড় তুলেছে৷
কয়েকটি বড় সংস্থা আবার এখনই ফোন কল, ডেটা সার্ফিংয়ের খরচ না কমিয়ে ধৈর্য ধরে রাখতে চাইছে। তেমনই একটি সংস্থার কর্তা নাম গোপন রেখে জানিয়েছেন, এখনই কোনও সিদ্ধান্ত না নিয়ে কয়েকদিন অপেক্ষা করে দেখতে হবে রিলায়েন্সের পরিষেবা গ্রাহকদের কতটা সন্তুষ্ট করে। কারণ, কম দামে উন্নত পরিষেবা দেওয়ার ঘোষণা করা ও সেই পরিষেবা অব্যাহত রাখা দুইয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে।” তবে শীর্ষ টেলিকম সংস্থাগুলির এই প্রবল লড়াইয়ের ফলে আখেরে লাভ গ্রাহকদেরই হবে বলে অনুমান বিশেষজ্ঞ মহলের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.