প্রণব সরকার, আগরতলা: কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে আটকে থাকা ত্রিপুরার নাগরিকরা ফিরলেন নিজেদের রাজ্যে। বৃহস্পতিবার আগরতলা – আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে রাজ্যে প্রবেশ করলেন শতাধিক মানুষ। এদিন যাবতীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা তদারকি করতে ত্রিপুরা ভূখণ্ডে পা রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গঙ্গোপাধ্যায় দাস। সীমান্তে রাজ্যের নাগরিকদের উষ্ণ সংবর্ধনা দিয়ে স্বাগত জানান সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক। সেখানেই যাত্রীদের যাবতীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
COVID-19 মহামারী পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ২৪ মার্চ দেশজুড়ে জারি হয় লকডাউন। যে কারণে রেলপথ, সড়কপথ এবং আকাশপথে সমস্ত ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এক রাজ্যের মানুষ আটকে পড়েন অন্য রাজ্যে। এর পাশাপাশি প্রতিবেশী বাংলাদেশ-সহ বিদেশের মাটিতে আটকে পড়েন লক্ষ লক্ষ ভারতীয় নাগরিক। করোনা পরিস্থিতিতে গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশেও লকডাউন জারি হলে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ত্রিপুরার কয়েক শতাধিক মানুষও বিভিন্ন কাজে গিয়ে সেখানে আটকে পড়েন। তাঁদেরও ফিরিয়ে আনার জোরাল দাবি উঠেছিল। আটকে থাকা নাগরিকদের মধ্যে ছাত্রছাত্রী, ব্যবসায়ী, পর্যটক-সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন।
ত্রিপুরা সরকারের অনুরোধে অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশে আটকে পড়া নাগরিকদের নিজ রাজ্যে ফেরাতে তৎপর হয়। সেইমতো ২৮ মে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিন লকডাউনে আটকে পড়া নাগরিকদের প্রথমবারের মতো প্রতিবেশী দেশ থেকে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন অফিস অনলাইনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে। এদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সড়কপথে বেলা ১১টা নাগাদ আগরতলা -আখাউড়া সীমান্তে হাজির হন আটকে থাকা নাগরিকেরা। এরপর দু’দেশের সীমান্তে তাঁদের প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। সীমান্তে যাবতীয় প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে তাঁদের নিজের রাজ্যের ভূখণ্ডে নিয়ে আসা হয়। ত্রিপুরার নাগরিকদের ফেরাতে যাবতীয় তদারকি করতে খোদ আখাউড়া সীমান্তে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত রিভা গঙ্গোপাধ্যায় দাস।
হাইকমিশনার রিভা গঙ্গোপাধ্যায় দাস সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ত্রিপুরা থেকে শতাধিক, অসমের আরও ১০০ জন-সহ প্রায় ২৩০ জনকে এদিন বাংলাদেশ থেকে ফেরানো হচ্ছে। এছাড়া মেঘালয় ও মণিপুরের নাগরিকও রয়েছেন। এদিকে দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস বা ৩ মাস বাদে নিজ ভূখণ্ডে ফিরে আসতে পেরে উচ্ছ্বসিত প্রকাশ করেন বাংলাদেশে আটকে থাকা ত্রিপুরার বাসিন্দারা। ফিরে বাংলাদেশ প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন তাঁরা। ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশের পর সমস্ত যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মীরা। এর পাশাপাশি সরকারি নির্দেশিকা মেনে তাঁদের সোয়াব টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তাঁদের প্রত্যেককেই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়েরেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করবে প্রশাসন। সংবাদ মাধ্যমে সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক গোটা বিষয়টি নিয়ে সার্বিক তথ্য তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশে আটকে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের ফেরাতে আগামীতেও এই প্রক্রিয়া জারি থাকবে বলে হাইকমিশন সূত্রে খবর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.