Advertisement
Advertisement
শ্রমিক

জায়গা পেয়েও হল না ফেরা, মুম্বই থেকে হাওড়ার ট্রেন ধরতে পারলেন না ৬০০ শ্রমিক

মহারাষ্ট্রে আটকে বাংলার হাজার হাজার শ্রমিক।

Hundreds of Bengal migrants fail to catch shramik train

ছবি- প্রতীকী

Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:May 18, 2020 4:11 pm
  • Updated:May 18, 2020 4:11 pm  

সুব্রত বিশ্বাস: দীর্ঘ দু’মাস কাজ বন্ধ। পকেটের টাকা শেষ। ভিন রাজ্যে ধার কে দেবে। তার উপর লকডাউনের কষাঘাত। প্রায় অভুক্ত শরীরটাকে কোনও মতে সোজা রাখার চেষ্টা করিম শেখের। আর কয়েক ঘণ্টা কাটলেই বাড়ি ফিরতে পারবেন এটাই স্বস্তি। মুম্বই থেকে শ্রমিক ট্রেনে রাজ্যে  ফিরেও যেন স্বস্তি পাচ্ছেন না। পাবেনই বা কী করে। মুর্শিদাবাদের গ্রাম ছেড়ে বেশ কয়েক মাস আগে চার বন্ধু পাড়ি দিয়েছিলেন মুম্বই। নির্মাণ কাজে যুক্ত সবাই থাকতেন শহরের নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে। করিম থানে এলাকায় থাকলেও বন্ধুরা থাকতেন দশাই, বিরার অঞ্চলে। করিম ট্রেন ধরতে পারলেও বন্ধুরা যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে না পারায় আটকে থেকেছে সেখানেই। সবার একই অবস্থা। অর্থসংকট। বাড়ি ফিরতে পারলে তবুও স্বস্তি মিলতো, এই আক্ষেপ নিয়ে হাওড়া স্টেশনের বাইরে অপেক্ষমান সরকারি বাসে উঠলেন তিনি। বারবার একই কথা বলতে থাকেন, “ওঁদের বাড়ির লোকজন জিজ্ঞাসা করলে কি উত্তর দেব?”

[আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় পরপর তিন দুর্ঘটনা উত্তরপ্রদেশে, হাসপাতালে ৫০ পরিযায়ী শ্রমিক]

শুধু করিম নয়, মুম্বইয়ে বসবাসকারী হাওড়ায় ফেরা শ্রমিকদের একই আক্ষেপ সঙ্গে দুশ্চিন্তা। তাঁদের অনেকেরই বন্ধু বা পরিজনদের এক সঙ্গে হাওড়াগামী প্রথম ট্রেনে ফেরার কথা থাকলেও অধিকাংশকে ফিরতে হয়েছে একা একাই। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্রেনটিতে ১ হাজার ৪০০ জন পরিযায়ী শ্রমিক আসার কথা থাকলেও ছশোরও বেশি শ্রমিক ট্রেনটি ধরতে পারেন নি। শ্রমিক ট্রেনে হাওড়ায় আসা যাত্রীদের কথায়, মুম্বইয়ের থানে, দশাই, বিরার, ভিবান্ডি, দমবিবলী, বাদলাপুর, মাথেরান, কারজাতের মতো শহরতলি এলাকায় বাংলার লক্ষ লক্ষ শ্রমিক রয়েছেন, যাঁদের অনেকেই এদিন ফেরার কথা ছিল। নির্মাণ শ্রমিক ছাড়া অনেকেই নানা শিল্প কারখানায় কাজ করে, সোনা-রুপা, হিরে বসানোর কাজেও লিপ্ত অনেকেই। লকডাউনে কাজ নেই। বাড়ি ভাড়া দিতে পাড়ছেন না অনেকেই। টাকা না থাকায় খাবার জটানো মুশকিল। বাড়তি করোনার ভয় রয়েছে। এই অবস্থায় ঘরে ফেরা ছাড়া বিকল্প পথ ছিল না।

Advertisement

শনিবার সকাল সওয়া আটটা নাগাদ মুম্বই থেকে হাওড়াগামী প্রথম ট্রেনে প্রায় আটশো শ্রমিক যাত্রা করেন। যাদের মধ্যে প্রায় দুশো জন শ্রমিক খড়গপুরে নেমে যান। যাদের মধ্যে ছিল দুই মেদিনীপুরের বসবাসকারী শ্রমিক। বিকেল ৩.৪৪ মিনিটে ট্রেনটি হাওড়া ২১ নম্বর প্লাটফর্মে এসে ঢোকামাত্র জয়ধ্বনি দিয়ে ওঠেন যাত্রীরা। এ যেন বেঁচে ফেরার আনন্দ। আরপিএফ ও জিআরপি কর্মীদের নির্দেশমতো দূরত্ব রেখে কামরা থেকে একে একে বেরিয়ে আসেন প্রায় ৬৮০ জন শ্রমিক ও পরিবারের সদস্যরা। এক একজনকে স্বাস্থ্যপরীক্ষার পর দেওয়া হয় ছাড়পত্র। যা নিয়ে তাঁরা গ্রামে ঢুকতে পারবেন। ঘর ফেরতাদের মধ্যে হাওড়া, হুগলি, দুই চব্বিশ পরগনা, মেদিনীপুর, নাদিয়া ও মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা রয়েছেন। রাজ্যের তরফে পঞ্চাশটি বাস অপেক্ষা করছিল। যাতে এক এক করে শ্রমিকরা উঠে বসেন। দেওয়া হয় খবরের প্যাকেট। বাস রওনা দেওয়ামাত্র কপালে নমস্কার ঠুকে দেবতার নামে আরও একবার জয়ধ্বনি দিয়ে ওঠেন সবাই। যেন মহা সংকট থেকে মুক্তির সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়ানো।

[আরও পড়ুন: গন্তব্য এটাওয়া, রেললাইন ধরে হেঁটে ১৭ দিনে সুরাট থেকে কোটা পৌঁছলেন শ্রমিকরা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement