সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ক্যাফে কফি ডে’র কর্ণধার ভি জে সিদ্ধার্থর মৃত্যু নিয়ে তদন্তে যত এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে নতুন নতুন তথ্য। প্রাথমিক তদন্তেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পাহাড়প্রমাণ ঋণের বোঝা নিয়ে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল সিসিডি’র মালিকের৷ সঙ্গে ছিল আয়কর দপ্তরের চাপ।
একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে উঠে আসছে, বিপুল কালো টাকা রাখার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। আয়কর রিটার্নের সঙ্গে কোম্পানির ব্যবসায়িক লেনদেনে বিশাল ফারাক ধরা পড়েছিল গত তিন বছর ধরে। অর্থ সংক্রান্ত একটি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সিদ্ধার্থের নিজের ব্যক্তিগত দেনার পরিমাণ ছিল এক হাজার কোটি টাকার কিছু কমবেশি। তার চেয়েও বড় কথা, কফি রিটেল চেন হিসাবে সিদ্ধার্থের সংস্থা ‘কফি ডে এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড (সিডেল)’-এর বাজারে দেনার পরিমাণ ৫২৫১ কোটি টাকা। এক বছর আগে বাজারে এই সংস্থার দেনা ছিল ২৪৫৭ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা।
মনে করা হচ্ছে, এই বিশাল পরিমাণ ধার শোধ করতে না পারার মারাত্মক চাপ ছিল ৬০ বছরের এই কফি ব্যারনের উপর। একইসঙ্গে ছিল আয়কর দপ্তরের চাপ। সন্দেহ, তিনি নেত্রবতী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি সাঁতার জানতেন না। ভরা বর্ষায় ফুলেফেঁপে ওঠা নদীতে ঝাঁপ দেওয়া মাত্র তিনি ডুবে যান। ৩৬ ঘণ্টা পর তাঁর দেহ উদ্ধার করেন ডুবুরিরা। সুইসাইড নোটে তিনি বারবার যে মারাত্মক মানসিক চাপ ও হেনস্তার কথা বলে গিয়েছেন, তার সঙ্গে বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝার বিষয়টি মেলানোর চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
যদিও ম্যাঙ্গালোর পুলিশ কমিশনার সন্দীপ পাতিল এখনই আত্মহত্যা বলতে নারাজ। তিনি বলেছেন, ‘শিল্পপতি সিদ্ধার্থর মৃত্যুরহস্য ভেদ করতে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের নেতৃত্বে পুলিশের তদন্তকারী দল গঠিত হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই জানা যাবে কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। তবে আমরা এই মৃত্যুর তদন্তে আগামী দিনে সিদ্ধার্থর ঘনিষ্ঠ ও পারিবারিক সদস্যদের জেরা করতে পারি। সিদ্ধার্থ যেখানে তাঁর গাড়ির চালককে ছেড়ে দিয়ে তাঁকে চলে যেতে বলেন, সেখান থেকে দুটি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেগুলির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে।’
প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণর জামাই ৬০ বছর বয়সী সিদ্ধার্থর দেহ পাওয়া যায় দক্ষিণ কন্নড় জেলার নেত্রবতী নদীতে। কোম্পানির কর্মীদের উদ্দেশে লিখে যাওয়া চিঠিতে আয়কর বিভাগের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে হেনস্তার অভিযোগ তুলেছিলেন সিদ্ধার্থ। এ দিন তাঁর দেহ উদ্ধারের পরে নরেন্দ্র মোদি জমানায় ‘আয়কর সন্ত্রাস’ নিয়ে সরব হয়েছে শিল্পমহল ও বিরোধী দলগুলি।
এবারের বাজেটে অতি-ধনীদের উপর আয়করের বাড়তি বোঝা চাপানোয় মোদি সরকারের উপর শিল্পপতিরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছিলেন। সিদ্ধার্থর দেহ উদ্ধারের ঘটনায় এ বার সেই ক্ষোভের আগুনেই ঘৃতাহুতি পড়ল। সিদ্ধার্থের অভিযোগ ছিল, আয়কর দপ্তরের প্রাক্তন ডিজি তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা মাইন্ড ট্রি-র শেয়ার বিক্রি আটকাতে শেয়ার বাজেয়াপ্ত করেন। পাওনা আদায় করতে সিসিডি-র শেয়ারও দখল করা হয়। সে কারণেই তিনি আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েন। আয়কর কর্তাদের অবশ্য দাবি, সিদ্ধার্থ নিজেই তদন্তে উদ্ধার কালো টাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। সবমিলিয়ে, ক্যাফে কফি ডে’র মালিকের মৃত্যুরহস্যের জট খুলতে কিছুটা বিপাকে তদন্তকারীরা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.