সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত ষোলো দিন যাবৎ উত্তরকাশীর (Uttarkashi) সুড়ঙ্গ থেকে শ্রমিকদের উদ্ধারে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন উদ্ধারকারীরা। শুরু থেকে ভরসা রাখা হয়েছিল যন্ত্রের উপরেই। যদিও কাজ হয়নি ‘অত্যাধুনিক’ ড্রিলিং মেশিনে। এমনকী আমেরিকায় তৈরি অগার মেশিন প্রথমে কাজ করলেও শেষকালে ভেঙে দলা পাকিয়ে যায়। সুড়ঙ্গ থেকে সেই ‘আবর্জনা’ বের করতে খানিক সময় নষ্ট হয়। শেষ পর্যন্ত কাজে লাগানো হচ্ছে সাবেকি পদ্ধতি। হাতে হাতে খননের রাস্তায় হাঁটেন উদ্ধারকারীরা। ‘ব়্যাট-হোল মাইনিং’ (Rat-hole Mining) নামের হাতে হাতে খননের নিষিদ্ধ পদ্ধতিতেই আশার আলো দেখছেন উদ্ধারকারীরা। ঠিক কেমন এই পদ্ধতি? কেনই বা তা নিষিদ্ধ?
ঠিক ধরেছেন, ইঁদুর যেভাবে মাটিতে গর্ত খোঁড়ে, সেই পদ্ধতিতে মাটিতে খনন প্রক্রিয়া চালানো হয় ‘ব়্যাট-হোল মাইনিং’ পদ্ধতিতে। উত্তর-পূর্বের রাজ্য মেঘালয়ের খনিগুলিতে এই বিপজ্জনক প্রক্রিয়ায় খনন চলে। এই কৌশলে মাত্র একজন ব্যক্তি নামার মতো গর্ত খোঁড়া হয়। এর পর দড়ি বা বাঁশের মই ব্যবহার করে গর্তে নেমে বেলচা দিয়ে ঝুড়িতে কয়লা তোলেন শ্রমিকরা। রয়েছে সাইড কাটিং পদ্ধতি। এর জন্য পাহাড়ের ঢালে সরু সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়। এবং বক্স-কাটিং পদ্ধতি, এক্ষেত্রে ১০ থেকে ১০০ বর্গ মিটারের একটি আয়তাকার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। সেখানে উল্লম্বভাবে গর্ত খনন করা হয়। যা ২০০ ফুট অবধি গভীর হতে পারে। ঠিক ইঁদুরের গর্তের আকারে একাধিক অনুভূমিক সুড়ঙ্গ খনন করা হয়।
নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে ব়্যাট-হোল মাইনিং পদ্ধতির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। এই পদ্ধতি কেবল শ্রমিকদের জন্য বিপজ্জনক নয়, পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। ভূমি ক্ষয়, বনভূমি ধ্বংস, স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের ব্যাঘাতের মতো পরিবেশগত বিপদ দেখা দেয় ইঁদুরের গর্তের মতো খনন প্রক্রিয়ায়। এই পদ্ধতিকে অ্যাসিড মাইন ড্রেনেজ বলেও ডাকা হয়। ব়্যাট-হোল মাইনিং-এর ফলে মেঘালয়ের খনি থেকে অ্যাসিডের স্রোত ভারতের সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশের নদীগুলিরও ক্ষতি করেছে বলে অভিযোগ।
যদিও বিপজ্জনক সেই পদ্ধতিতেই সাফল্যের খোঁজে সিল্কিয়ারা-বারকোট সুড়ঙ্গে কাজ করা উদ্ধারকারীরা। মার্কিন অগার ড্রিলিং মেশিন ভেঙে যাওয়ার পরেই হাতে হাতে খননের সিদ্ধান্ত হয়। তার পর থেকেই চলছে ব়্যাট-হোল-মাইনিং। এই পদ্ধতিতে ম্যানুয়াল ড্রিলিংয়ে ৪১ শ্রমিকের দুঃস্বপ্নের অবসানের অপেক্ষায় গোটা দেশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.