সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভোটের মরশুমে নির্বাচনী উত্তাপের পারদ ছিল তুঙ্গে। ব্যক্তি আক্রমণের সব সীমা লঙ্ঘন করেছে দুপক্ষই। তৃণমূল-বিজেপির সংঘাতে যে ভাষার প্রয়োগ হয়েছিল তা ছিল বেনজির। কিন্তু ভোট শেষে সৌজন্য বিনিময়ে অন্য মাত্রা পেল প্রধানমন্ত্রী ও তৃণমূলের সংসদীয় দলের বৈঠক। রাজ্যের নামবদল নিয়ে ছিল বৈঠক। পশ্চিমবঙ্গের নাম পালটে বাংলা করার দাবি নিয়ে তৃণমূলের সংসদীয় দল যান নরেন্দ্র মোদির কাছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য বিনিময়ে আপ্লুত হয়ে যান তৃণমূলের সাংসদরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর বিজেপিকে বলা ভাল নরেন্দ্র মোদিকে সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করেছিলেন যিনি, সেই সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও চমকে গেলেন প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য বিনিময়ে। বৈঠক শেষে যখন নরেন্দ্র মোদি জানতে চাইলেন, ‘আপনার চোখ কেমন আছে?’ রীতিমতো অবাক হয়ে গেলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।
অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘বাংলা’ হোক। এমনই দাবি নিয়ে বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করে তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় দল। সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১২ জনের একটি প্রতিনিধি দল এদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে। জানা গিয়েছে, এই বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, দেশে একতরফাভাবে বেসরকারিকরণ কখনওই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সূত্রের খবর, গত বছর থেকেই বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে রুগণ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির নতুন তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে কেন্দ্র। চলতি অর্থবর্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ খাতে ৮০ হাজার কোটি টাকা তোলার লক্ষ্য নিয়েছে মোদি সরকার। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরির বিলগ্নিকরণ ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জানা গিয়েছে, তৃণমূলের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা শেষ হওয়ার পর বেরিয়ে যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন করমর্দনের জন্য। দু’জনে হাত মেলান। তার পরে অভিষেককে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনার চোখ কেমন আছে?’’ অভিষেক জানান যে, চোখ এখন ভালই আছে। তবে দু’বার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে বলেও তিনি জানান। এদিন বৈঠকের শুরুতেও নির্দিষ্ট হলে ঢুকে প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই তৃণমূল সাংসদদের তাঁর পাশে বসতে বলেন বলে খবর। প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার টেবিলের যে দিকে, সাংসদরা সবাই মিলে তার উলটো দিকে কেন বসেছেন? প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর পাশের চেয়ারেই বসতে বলেন। ‘পাশে বসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাগ করবেন না’- হাসতে হাসতে এ রকমও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আহত হন যুব তৃণমূল সভাপতি। তাঁর চোখ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপর দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। চোখের সমস্যা কমেছে এখন। কিন্তু সে খবর যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানেন তা ভাবতেই পারেননি তৃণমূল সাংসদ। নির্বাচনী প্রচারের উত্তাপের রেশ কেটে এখন তৃণমূল সাংসদদের সম্পর্ক অনেকটাই মেঘমুক্ত তা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। এবং তাঁর সৌজন্য বিনিময়ও অবাক করেছে তৃণমূলের সাংসদদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.