Advertisement
Advertisement

ফতোয়া কী? এদেশে ফতোয়া দেওয়া কি আইনি?

যে কেউ ফতোয়া দিতে পারেন কি?

How clerics misinterpret Fatwa to manipulate masses?
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:April 20, 2017 11:16 am
  • Updated:April 20, 2017 11:16 am  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফতোয়ার পালে যেন লেগেছে জোর হাওয়া৷ ধর্ম থেকে রাজনীতি- যে কোনই ইস্যুতে ইদানিং তার ডাক পড়ছে ঘনঘন৷ এমনকী নেটদুনিয়ায় কিডস-ম্যান-লেজেন্ডস জোকসের পৃথিবীতের জায়গা করে নিয়েছে ফতোয়া৷ বলা হচ্ছে, কিডস বা ম্যান নয়, একমাত্র লেজেন্ডসরাই নাকি ফতোয়া দেন৷ সাম্প্রতিক অতীতে ফতোয়া শব্দটির যে বাড়বাড়ন্ত হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অজুহাতে প্রায়শই জারি হচ্ছে ফতোয়া৷ তার মধ্যে এসে মিশেছে রাজনীতিও৷ রাজনৈতিক বিরোধিতার আবহে একে অন্যের মাথার দাম ধার্য করছে৷ এমনকী প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীরাও এ থেকে বাদ যাননি৷ এই মৃত্যু হুমকিও ধরা হচ্ছে ফতোয়া হিসেবেই৷ তবে ফতোয়া যেন অনেকটা আতসবাজির মতো৷ খানিকটা হইচই ফেলে শেষমেশ স্তব্ধ হয়ে যায়৷ সম্প্রতি অবশ্য এর মোক্ষম জবাব দিয়েছেন গায়ক সোনু নিগম৷ আজান নিয়ে টুইট বিতর্কে তাঁর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিলেন এক মৌলবি৷ মাথা কামিয়ে ছেঁড়া জুতো পরে দেশ ঘোরালে দশ লক্ষ টাকা ইনাম ঘোষণা করেছিলেন তিনি৷ তা সোনু নিজেই মাথা কামিয়ে সে টাকা চেয়েছেন৷ যে হেয়ার স্টাইলিস্ট তাঁর মাথা কামিয়েছেন সেই আলিম ভাই জানিয়েছেন, এ টাকা জনকল্যাণে দান করবেন তিনি৷ এর জেরেই ফতোয়া আবার খবরের শিরোনামে৷

তা কী এই ফতোয়া?  

Advertisement

কারও মাথার দাম ধার্য করা বা কাউকে মৃত্যু হুমকি দেওয়া কি ফতোয়া? শব্দটি যে অর্থে ব্যবহৃত হয় ইসলাম দুনিয়ায়, তাতে অবশ্য এ মানে দাঁড়ায় না৷  বলা যায়, ফতোয়া হল একরকমের ধর্মীয় বিধান৷ যা ইসলাম ধর্মে শিক্ষিত ব্যক্তিই একমাত্র জারি করতে পারেন৷ তাঁদেরকে মুফতি বলা হয়৷ ধর্ম ব্যাপারে কোনও জিজ্ঞাসু কোনও সংশয়ের মুহূর্তে এই মুফতিদের দ্বারস্থ হতে পারেন৷ তিনি তাঁর বিধান বা ফতোয়া দেন৷ ব্যাপারটা কীরকম? ধরা যাক, পাঁচ ওয়াক্ত নমাজ পড়ার বিধান আছে ইসলামে৷ কিন্তু নমাজের সময় কেউ বিমানে আছেন৷ তাহলে তিনি কী করবেন?  এই প্রশ্নের উত্তরে মুফতি ফতোয়া জারি করতে পারেন৷ কোনও বিকল্প উপায় বা বিধান নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন৷

কে দিতে পারেন ফতোয়া?

যে কেউ অবশ্য মুফতি হতে পারেন না৷ অর্থাৎ ফতোয়া দেওয়ার অধিকার সকলের নেই৷ যে অর্থে ফতোয়া শব্দটি ব্যবহৃত হয়, তাতে তা সম্ভবও নয়৷  কেননা মুফতি হতে গেলে তাঁকে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞানী হতে হবে৷ কোরান, হাদিশ-সহ অন্যান্য বিষয়ে পর্যাপ্ত দখল থাকতে হবে৷ এর জন্য ইসলামে বেশ কিছু নিয়ম ধার্য আছে৷ কারা কারা ফতোয়া দিতে পারেন, তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিধিও আছে৷ ইসলামীয় বিচারনীতি ‘উসুল-আল-ফিক’ অনুযায়ী, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বা সুযোগসন্ধানী হওয়ার কারণে ফতোয়া জারি করা যাবে না৷ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতো তো নয়ই৷ মুফতির নিজের আইন বা ভাবনাচিন্তা অনুযায়ীও তা জারি করা যাবে না৷ তা কোরান বা হাদিশ অনুযায়ীই হতে হবে৷

তাহলে এত ফতোয়া কেন?

কালে কালে অবশ্য সে অর্থ পাল্টে গিয়েছে৷ এত নিয়ম নীতিও মানা হয় বলে মনে হয় না৷ তাই ফতোয়ার রমরমা৷ এছাড়া ফতোয়া শব্দটির অর্থও ব্যহারের নিরিখে পাল্টে গিয়েছে৷ এখন যে কোনও মৃত্যুদণ্ড বা হুমকিকেও ফতোয়ার তকমা দেওয়া হয়৷ ফলে ফতোয়ার বাড়াবাড়ি ইদানিং বেশি৷

তা ফতোয়া কতটা আইনি?

ইসলামিক সুপ্রিম কাউন্সিল অফ আমেরিকা জানাচ্ছে, ফতোয়ার মর্যাদা অনেকটা হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মতোই৷ তবে দেখতে হবে, যে মুফতি ফতোয়া দিচ্ছেন তিনি কতটা যোগ্য? কিন্তু আদতে এ দেশের সুপ্রিম কোর্ট ফতোয়াকে আইনি স্বীকৃতি দেয়নি৷ ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট এক মামলার প্রেক্ষিতে রায়ে জানিয়েছিল, স্বাধীন ভারতে ফতোয়ার কোনও জায়গা নেই৷ নির্দোষদের শাস্তিবিধানদের জন্য ফতোয়ার ব্যবহারকেও বেআইনি বলেছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত৷ সেইসঙ্গে ফতোয়া দেওয়া কিছু সংগঠনের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছিল, দেশের আইন এ ধরনের সংগঠনের কার্যবিধিকে সমর্থন করে না৷ যদিও দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি না থাকায় এ নিয়ে খানিক সমস্যা আছে৷ বাংলাদেশেও অবশ্য ফতোয়াকে নিষিদ্ধ ও বেআইনি ঘোষণা করেছিল আদালত৷

তাহলে থাকল কী?

ফতোয়া কতটা আইনসিদ্ধ সে নিয়ে সংশয় থাকলই৷ এদিকে যে কেউ যে ফতোয়া জারি করতে পারেন না, তাও স্পষ্ট৷ তবু ফতোয়ার রমরমা চলছেই৷ আর তাতে আসল অর্থ নিয়ে ফতোয়াই যেন কোথায় মুখ লুকিয়েছে৷ বরং পরিবর্তিত বলা ভাল খানিকটা ভেজাল ফতোয়াই বাজার দখল করেছে৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement