সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মুঘলদের অধিক ও অন্যায্য গুরুত্ব দিয়েছেন ইতিহাসবিদরা। কিন্তু তাঁদের লেখনীতে স্থান হয়নি মৌর্য, গুপ্ত ও পাণ্ড্যদের। তাই প্রাচীন ভারতের ‘সঠিক তথ্য সম্বলিত’ চালচিত্র তৈরি করতে হবে। দিনকয়েক আগে এমনটাই মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তারপর থেকেই এনিয়ে শুরু হয়েছে জোর তরজা। একের পর এক তোপ দেগেছে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। এহেন পরিস্থিতিতে অমিত শাহকে একহাত নিয়েছেন বিহারে বিজেপির জোটসঙ্গী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।
সোমবার পাটনায় এক অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার (Nitish Kumar)। সেখানে অমিত শাহর ইতিহাসবিদদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগের প্রসঙ্গটি ওঠে। তারই প্রেক্ষিতে নীতীশ বলেন, “ইতিহাস যা আছে তাই থাকবে। কীভাবে কেউ ইতিহাস বদলে দিতে পারে। আমি বুঝতে পারছি না, আপনি (অমিত শাহ) কি ইতিহাস বদলে দিতে চাইছেন? ভাষাগত পার্থক্য অন্য বিষয়। কিন্তু আপনি মূল ইতিহাস বদলে দিতে পারেন না।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিহারে জোটসঙ্গী হলেও গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে নীতীশের সম্পর্কের ফাটল ক্রমশ চওড়া হচ্ছে। রাজনৈতিক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে বিজেপি ও জেডি (ইউ) একসঙ্গে থাকলেও নীতিগত দিক থেকে তাদের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন। সম্প্রতি, বিহারে ধর্মান্তকরণ বিরোধী আইন আনার দাবি জানিয়েছে বিজেপি। কিন্তু সেই দাবি মানতে নারাজ নীতীশ কুমার। শুধু তাই নয়, জাতপাতের ভিত্তিতে জনগণনা নিয়েও বিরোধ ছিল দুই পক্ষের।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার দিল্লিতে একটি বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অমিত শাহ (Amit Shah) বলেছিলেন, “ইতিহাসবিদরা শুধুমাত্র মুঘলদের গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তাদের বিষয়ে লিখেছেন। বাস্তবে, পাণ্ড্যরা প্রায় ৮০০ বছর রাজত্ব করেছে। অসমের আহোম সাম্রাজ্যের আয়ু ছিল অন্তত ৬৫০ বছর। আহোমরা বখতিয়ার খিলজি ও ঔরঙ্গজেবকে পরাজিত করেছে। পল্লব ও চোল সাম্রাজ্যের শাসনকাল ছিল প্রায় ৬০০ বছর। আফগানিস্তান থেকে লঙ্কা পর্যন্ত শাসন করেছে মৌর্যরা। চারশো বছর রাজত্ব করেছে গুপ্তরা। ‘অখণ্ড ভারত’ তৈরির প্রথম চেষ্টা করেন সমুদ্রগুপ্ত। কিন্তু তাদের নিয়ে কোনও বই নেই।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সম্প্রতি হজরত মহম্মদকে নিয়ে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার মন্তব্যে ব্যাকফুটে রয়েছে কেন্দ্র সরকার। ঘরে-বাইরে তুমুল সমালোচনার মুখে অনেকটাই সুর নরম করেছে দেশের শাসকদল। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, হজরত মহম্মদকে নিয়ে বিজেপির দুই নেতা-নেত্রী নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দলের কটূক্তি কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাত নয়। নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় আসা-ইস্তক বিজেপির শীর্ষ নেতাদের প্রশ্রয়ে দেশে উগ্র-হিন্দুত্ববাদের প্রসার যেভাবে ঘটে চলেছে, সংবিধান ও আইনের তোয়াক্কা না করে ঘৃণার বীজ যেভাবে বোনা হয়েছে, তাতে এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ গঠনের লক্ষ্য থেকে গরুয়া শিবির একচুলও নড়েনি তা শাহর মন্তব্যই স্পষ্ট জোরে দেয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.