গৌতম ব্রহ্ম, ভাগলপুর: বিহারের ভাগলপুর জেলার আদমপুর ঘাট রোডের ব্যাংক কলোনির যে বাড়িতে এক সময় কলমের ছোঁয়ায় সৃষ্টি হয়েছিল একের পর এক কালজয়ী উপন্যাস আজ সেখানেই কান পাতলে শোনা যায় কাঁচির শব্দ। বিরাট জমির উপর ঘোরানো দালান ঘেরা এই বাড়িতে এখন রমরমিয়ে চলছে বিউটি পার্লার। এক সময় এখানেই থাকতেন চিকিৎসক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। সাহিত্য জগৎ অবশ্য তাঁকে বনফুল নামে চেনে। সেই বাড়ি লাগোয়া জমিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে সারসার মালবাহী গাড়ি। তবে এটুকুও আর বেশিদিন দেখা যাবে না। কারণ এই বাড়ি ভেঙেই নাকি তৈরি হবে বহুতল।
১৯৬৮ সালে বিহার ছেড়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে এই বাড়ি বিক্রি করে গিয়েছিলেন বনফুল। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত তিনবার হাতবদল হয়েছে। শেষ মালিকের বর্তমান উত্তরসূরীরা এখন প্রোমোটারের হাতে সেই বাড়ি তুলে দিতে আগ্রহী। আর তাতেই মনোকষ্টে ভুগছেন স্থানীয় বাঙালিরা। তাঁদের কথায়, মালিকানা বদল হওয়ায় এই স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটিকে ‘হেরিটেজ’ স্থাপত্যের স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এমনকী রক্ষাও করা যাচ্ছে না। একমাত্র সরকার যদি চায় তবে শেষ রক্ষা হতে পারে। তাই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীই তাঁদের শেষ ভরসা।
[ আরও পড়ুন: রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি তুলে আত্মহত্যার পথে যুবক, পুলিশের তৎপরতায় উদ্ধার ]
শুধু বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় নন, এই ভাগলপুরের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের নাড়ির টান। এখানেই মামাবাড়িতে জন্ম হয়েছিল বাংলার কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের। এখানেই কেটেছিল তাঁর বাল্যকাল। এই পটভূমিতেই জন্ম হয়েছিল ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসের। সেই কচুরি-জিলিপির দোকান, গঙ্গার ঘাট, ইন্দ্রনাথের বাড়ি সবই এখনও রয়েছে। ঘুরিয়ে দেখালেন স্থানীয় শিক্ষক দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়। তাঁর বাইকে চেপেই গেলাম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মামাবাড়ি, বিখ্যাত গাঙ্গুলি বাড়ি। সেখানেই দেখা হল কথাশিল্পীর ভাইপো শান্তনু গাঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। জানালেন, এক সময় তাঁদের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল বনফুলের। কাটিহার জেলার মণিহারিতে জন্ম হলেও ভাগলপুরেই তাঁর সাহিত্য জীবনের স্বর্ণযুগ কাটে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করে পাটনা মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তার হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন বনফুল। আজিমগঞ্জ হাসপাতালে প্যাথলজিস্ট হিসাবে কর্মরত থাকলেও ভাগলপুরে প্র্যাক্টিস করতেন। দীর্ঘ ৩৯ বছরে জঙ্গম, স্থাবর, ভুবন সোম, হাটে বাজারের মতো অসংখ্য উপন্যাসের সৃষ্টি এখানেই। শুধু বনফুলই নন, এক সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে অনেক বাঙালিই ভাগলপুর ছাড়েন। এখন সেই পরিস্থিতি বদলেছে।
বর্তমানে ৭০ হাজার বাঙালি রয়েছেন ভাগলপুরে। ১৬৭টি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে বাঙালির নামে। অনেক সংগঠনের নেতৃত্বে বাঙালিরা ফিরে আসছেন। দেবজ্যোতিবাবু এমন কিছু কর্মসূচি নিয়েছেন যার জেরে এখানকার বাঙালিদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরছে। তাঁরা নতুন করে তাঁদের জন্মভূমিতেই ভাল থাকার মনোবল ফিরে পাচ্ছেন। দেবজ্যোতিবাবুই পরিচয় করিয়ে দিলেন বিহারে বাঙালি সমিতির ভাগলপুর শাখার সম্পাদক জয়জিৎ ঘোষের সঙ্গে। তিনি জানালেন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে তাঁর অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই রাস্তাগুলির নামফলক লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন তিনি।
[ আরও পড়ুন: বিজেপির ইস্তেহারে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির উল্লেখ, ‘আজাদি’র পক্ষে সুর চড়ালেন নেতারা ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.