ছবি: প্রতীকী
বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা পশ্চিমবঙ্গ হয়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এঁদের অনেকের কাছে জাল শংসাপত্র রয়েছে। এই অনুপ্রবেশকারীরা দেশের অভ্যন্তরে নাশকতা চালাতে পারে বলে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত রাজ্যের ডিজিদের সতর্কবার্তা পাঠাল কেন্দ্রীয় সরকার। মূলত দক্ষিণ ভারতের দুই রাজ্য কেরল ও তামিলনাড়ু ছাড়াও গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশে, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি সহ-১৪টি রাজ্যে অনুপ্রবেশকারীরা ছড়িয়ে পড়েছে বলে কেন্দ্রের পাঠান সতর্কবার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এর পিছনে কেন্দ্রের অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এবার অনুপ্রবেশকারী ইস্যুকে সামনে এনে বাংলার শাসকদলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি, সিবিআই ও এনআইকে ব্যবহার করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, সীমান্ত প্রহরার দায়িত্ব বিএসএফের। এই কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারছে না প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। কেন্দ্রের পাঠান সতর্কবার্তা নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র ও রাজ্য সাধারন সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি জানান, নয়ের দশক থেকেই আল কায়দা ধরা পড়ে। অভিযোগ ওঠে বাংলাদেশ পেরিয়ে এসেছে। সীমান্ত দেখে কেন্দ্রের বাহিনী বিএসএফ। কেন্দ্রের রিপোর্ট ১৪ রাজ্যে অনুপ্রবেশকারীরা ছড়িয়ে আছে। তার মধ্যে অনেক বিজেপিশাসিত রাজ্যও রয়েছে বলে অভিযোগ কুণালের।
বাংলার বিরুদ্ধে নয়া চক্রান্ত কেন্দ্রের। এবার অনুপ্রবেশ ইস্যুকে হাতিয়ার করে বঙ্গের বিরুদ্ধে ঘুটি সাজানোর পরিকল্পনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের। সম্প্রতি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে সব রাজ্যের ডিজিদের সতর্কবাতা পাঠায় কেন্দ্র। সতর্কবাতায় উল্লেখ করা হয়, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে প্রচুর বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ করছে। অনুপ্রবেশকারীদের সাহায্য করছে রাজ্যের এক শ্রেণির দালাল। ভারতে প্রবেশ করার পরই এঁদের আধার কার্ড পাইয়ে দিতে সাহায্য করছে দালালরা। আধার কার্ড হাতে আসতেই কাজের খোঁজে দেশের বিভিন্নপ্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। এই অনুপ্রবেশকারীদের অনেকেই বাংলাদেশের জামাতের মতো জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নির্দেশ দিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সতর্কবার্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ বাংলা ছাড়াও বিজেপিশাসিত ত্রিপুরা, অসম ও মেঘালয়ের মতো রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত রয়েছে। এইসব রাজ্যের সীমান্ত দিয়েও অনুপ্রবেশ হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে পুলিশ প্রধানদের কাছে পাঠানো বার্তায় কেন শুধু পশ্চিমবঙ্গে নাম উল্লেখ করা হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এছাড়াও সীমান্ত পাহারার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বাহিনীর। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তাঁরা কী করছে। যদি সত্যিই এমন হয়ে থাকে তাহলে অনুপ্রবেশের দায় কেন্দ্রকেও নিতে হবে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বাংলাভাগের চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। উত্তরবঙ্গকে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার প্রক্রিয়া গোপনে শুরুও হয়েছে বলে মন্ত্রক সূত্রে খবর। এবার অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে রেখে আরও একটি চক্রান্ত চলছে। এক্ষেত্রে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে কেন্দ্র বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থাকে নামানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। বিষয়টি প্রকাশে্য আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
বিজেপি সাংসদ ও দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, পশ্চিমবাংলায় উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বীরভূম, হাওড়া, মালদাহ ছাড়াও উত্তরবঙ্গের আরও দুই-একটা জেলা জঙ্গিদের ঘাঁটি হয়ে গিয়েছে। পুলিশ সব জেনেও এঁদের গায়ে হাত দেবে না। কারণ এর সঙ্গে রাজনীতি যুক্ত আছে বলে মনে করেন তিনি। পালটা তোপ দেগে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, এই সমস্যা আজকের নয়। ন’য়ের দশক থেকেই জঙ্গিদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। আর সীমান্ত পাহারার দায়িত্ব যাঁদের সেই বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স কেন ব্যর্থ হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.