সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘কবচ’ কি কাজ করেনি? সিগন্যালিং ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে? বালেশ্বরের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর নানা প্রশ্ন, নানা সম্ভাবনার তত্ত্ব উঠে আসছে। সব সম্ভাবনাই একদিকে ইঙ্গিত করছে, রেল দপ্তরের চূড়ান্ত অব্যবস্থা এবং সমন্বয়ের অভাব। স্বাভাবিকভাবেই দাবি উঠছে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের (Ashwini Vaishnaw) পদত্যাগের। তৃণমূল ইতিমধ্যেই রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সুর চড়িয়েছে। অশ্বিনী বৈষ্ণব কি সেই দাবি মেনে সরে দাঁড়াবেন? নাকি এই দুর্ঘটনার দায় পুরোপুরি সাধারণ কোনও কর্মী বা আধিকারিকের উপর চাপানো হবে।
ইতিহাস বলছে, এর আগে মাত্র দু’জন রেলমন্ত্রী দুর্ঘটনার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন। প্রথমজন লালবাহাদুর শাস্ত্রী। ১৯৫১ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত রেলমন্ত্রী ছিলেন শাস্ত্রী। এই কয়েক বছরের মধ্যে দু’বার পদত্যাগ করেন তিনি। প্রথমবার অন্ধ্রপ্রদেশের মাহবুবনগরের দুর্ঘটনায় ১১২ জনের মৃত্যুর পর। সেবার শাস্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু (Jawaharlal Nehru)। কিন্তু ১৯৫৬ সালের নভেম্বরে তামিলনাড়ুর আরিয়ালুরে ফের দুর্ঘটনা হয়। এবার প্রাণ যায় ১৪৪ জনের। ফের পদত্যাগ করেন লালবাহাদুর শাস্ত্রী। এবার শুধু পদত্যাগ করা নয়, সেই সঙ্গে নেহেরুকে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেন সেটা যেন গ্রহণ করা হয়। পদত্যাগপত্রে লালবাহাদুর শাস্ত্রী (Lal Bahadur Shastri) লিখেছিলেন,”আমার মনে হয় আমার মাথা নীচু করে রেলমন্ত্রক থেকে বেরিয়ে যাওয়া উচিত।” দীর্ঘ টানাপোড়েনের সেটি গৃহীত হয়।
এরপর বহু মর্মান্তিক রেল দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছে দেশ। ১৯৮১ বিহার ট্রেন বিপর্যয়ে পাঁচশোর বেশি মানুষ মারা যান। ১৯৯৫ ফিরোজাবাদ রেল বিপর্যয়ে অন্তত ৩৫৮ জনের মৃত্যু হয়। এমন ছোটবড় বহু দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনও রেলমন্ত্রী তার দায় নেননি। এরপর ১৯৯৯ গাইসাল ট্রেন বিপর্যয়ের পর পদত্যাগ করেন আরেক রেলমন্ত্রী। গায়সালের দুর্ঘটনায় ২৯০ জন প্রাণ হারান। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন সেনাকর্মী। সেই ঘটনার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী নীতীশ কুমার। এরপরও বহু মর্মান্তিক রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০০২ হাওড়া-নিউ দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস, ২০১০ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস বিপর্যয়, ২০১৬ ইন্দোর পাটনা দুর্ঘটনার মতো বিপর্যয়ে সব মিলিয়ে পাঁচশোর বেশি মানুষের প্রাণ গিয়েছে। কিন্তু কোনওক্ষেত্রেই ঘটনার দায় নেননি রেলমন্ত্রীরা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অশ্বিনি বৈষ্ণব কি বালেশ্বরের ঘটনার দায় নেবেন?
বিরোধীরা ইতিমধ্যেই বৈষ্ণবের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তৃণমূলের (TMC) বক্তব্য রেলের সমন্বয়ের অভাব স্পষ্ট, এমনকী সংঘর্ষ প্রতিরোধের ব্যবস্থাও ছিল না। প্রশ্ন হল বৈষ্ণব কী বলছেন? রেলমন্ত্রী শনিবার ভোররাত থেকেই ঘটনাস্থলে। ইস্তফা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি জবাব এড়িয়ে বলেছেন, আপাতত তাঁর লক্ষ্য উদ্ধারকাজ দ্রুতগতিতে শেষ করা। তবে রেল সূত্র বলছে, এই ঘটনার দায় নিয়ে অশ্বিনির পদত্যাগের সম্ভাবনা কার্যত নগণ্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.