সংবাদ প্রিতিদন ডিজিটাল ডেস্ক: মহিলাদের ঋতুস্রাবের মতো শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া এখনও নিষেধের গণ্ডিতে বেঁধে রাখে হিমাচলের প্রত্যন্ত গ্রামগুলি।যার ফলেই ২১ শতকের প্রায় দুটো দশক ছুঁয়ে এসেও পাহাড়ি মহিলারা আরও অন্ধকারেই ডুবে যাচ্ছে। সামাজিক নিয়মের বাঁধনে হাসফাঁস করছে মানবিকতা। মহিলাদের এ হেন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতেই এবার তৃণমূল স্তরে সচেতনামূলক প্রচার শুরু করল হিমাচলের কুলু প্রশাসন। দুর্গম পাহাড়ি পথ পেরিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অঙ্গনওয়াড়ি ও আশাকর্মীরাই সচেতনতামূলক প্রচার করবেন। মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব যে একটা শারীরবৃত্তীয় স্বাভাবিক নিয়ম বৈ অন্যকিছু নয়, তাই বোঝানো হবে গ্রামের মাথাদের। ঋতুস্রাব হলেই মহিলারা অশুদ্ধ হয়ে যাবেন, এমনটা নয়। পুরুষদের মতো এই সময় তাঁরাও বাড়িতেই থাকতে পারবেন। পারিবারিক বাথরুমে স্নান করতে পারবেন। মাইল কে মাইল পায়ে হেঁটে গিয়ে গ্রামের অদূরের বাথরুমে স্নান করতে হবে না। নারীপুরুষ নির্বিশেষে যাতে মাসিক ঋতুস্রাবকে স্বাভাবিক হিসেবে ভাবতে পারে সেজন্যই চলবে প্রচার। মহিলাদের সম্মানের প্রশ্ন জড়িয়ে থাকায় এই প্রচারের নাম দেওয়া হয়েছে নারী সম্মান।
[বিয়েতে নারাজ পরিবার, মোবাইল টাওয়ারে উঠে পড়লেন যুবক!]
হিমাচলের বেশিরভাগ পাহাড়ি গ্রামেই মহিলাদের ঋতুস্রাব একটি নিষিদ্ধ বিষয়। ঋতুস্রাব হলে সেই মহিলাকে অশুদ্ধ ধরে নিয়ে বাড়ির বাইরে গোয়ালের মতো জায়গা বানিয়ে থাকতে দেওয়া হয়। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা কোনও ঋতুতেই ঋতুস্রাব চলাকালীন বাড়িতে থাকার সুযোগ পান না মহিলারা। সন্তান জন্মানোর পরেও বেশ কিছুদিন বাড়ির বাইরের চালাতেই থাকতে হয়। ঋতুস্রাব, ও এই সময় বাড়ির পুরুষ ও গরুকে ছোঁয়ার অনুমতি থাকে না মহিলাদের। কুলুর ২০৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে অন্তত ৯২টিতে এই নিয়মের প্রচলন রয়েছে। ১ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে নারী সম্মান প্রচার। সচেতনামূলক প্রচারটি উল্লেখিত গ্রামগুলিতে ৬ মাস ধরে চলবে। দুর্গম পাহাড়ি গ্রামগুলিতে পৌঁছনোটাই সবথেকে দূরূহ হবে বলে জানিয়েছেন নারী অধিকার কর্মী সুভাষ মেনধাপুরকর। আশাকর্মীদের সঙ্গে সরকারি আধিকারিকরাও যাবেন গ্রামে। দূরের পথ অতিক্রম করার জন্য ঘোড়াকেই বাহন হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ঘোড়া নয় পা-ই একমাত্র ভরসা। এমনও অনেক গ্রাম রয়েছে যেখানে নারী সম্মান প্রচারের জন্য পায়ের উপরেই ভরসা রাখতে হবে। ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছতে গ্রামে।
মহিলাদের এ হেন পরিস্থিতর জন্য সরকারকেই দায়ী করেছেন ওই সমাজকর্মী। কাঙ্গরা, সিরমাউর, কিন্নৌর জেলার গ্রামগুলিতে এখনও মহিলাদের ঋতুস্রাবকে বিষ হিসেবেই দেখা হয়। ঋতুস্রাব চলাকালীন তাদের বাড়ি থেকে দূরে আলাদাভাবে রাখা হয়। স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারেও রয়েছে বাধা। গোটা বিষয়টিকে কোথাও সামাজিক নিয়ম হিসেবে দেখানো হয়। কোথাও বা ধর্মীয় নিয়ম। এই পরম্পরা কিন্তু চলেই আসছে। প্রশাসনিক উদ্যোগের আগেই নিজে থেকে সচেতনতার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। লিখে ফেলেছেন সচেতনতা সংক্রান্ত বই, ‘বেটি বড়ি হো গয়ি হ্যায়’। তবে শিক্ষার হার বৃদ্ধির কারণে হিমাচলের সোলান, সিরমাউর, উনা, বিলাসপুর জেলায় ঋতুস্রাব সংক্রান্ত বৈষম্যের হার কমেছে। কোনওরকম আইন এই বৈষম্যকে সরিয়ে দিতে পারবে না। একমাত্র শিক্ষাই এ হেন অন্ধকার দূর করে আলো আনতে পারবে। যেটা নেপালে হয়েছে। ঋতুস্রাবের সময় মহিলাদের বাড়ি থেকে দূরে রাখা বেআইনি ঘোষিত হয়েছে নেপালে। যদি কেউ কোনও মহিলাকে ঋতুস্রাব চলাকালীন বাড়ি থেকে বের করে দেয় তাহলে তার তিনমাসের জেল ও তিন হাজার টাকা জরিমানা হবে। কোনও ক্ষেত্রে শুধু জরিমানা বা জেল হতে পারে। কোনও ক্ষেত্রে দুটো শাস্তিই হতে পারে। সবটাই পরিস্থিতি বিবেচনা করেই ঠিক করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.