স্ত্রী কল্পনার সঙ্গে হেমন্ত সোরেন। ফাইল ছবি
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যা যা প্রত্যাশিত ছিল তাই তাই হল। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে হল হেমন্ত সোরেনকে। তাঁকে গ্রেপ্তার করল ইডি। আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্যটি পেতে চলেছে নতুন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু চমকটা দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীর নাম প্রকাশ্যে আসার পর। গোটা ঝাড়খণ্ড তথা দেশের রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছিল হেমন্ত গ্রেপ্তার হলে মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন তাঁর স্ত্রী কল্পনা। বিহারের লালু-রাবড়ি মডেলের পুনরাবৃত্তি হতে পারে পড়শি রাজ্যে। কিন্তু সেটা হল না। মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য চম্পাই সোরেনকেই বেছে নিয়েছে জেএমএম।
হেমন্ত কিন্তু স্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী করার ভালো মতো চেষ্টা করেছিলেন। সেই মতো ছকও করেন। সোমবার তিনি দিনভর নিখোঁজ ছিলেন। সেসময় ছিলেন দিল্লিতে। যোগাযোগ করেন কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে। তারপর একপ্রকার লুকিয়ে ১৩০০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে চলে যান রাঁচিতে। মঙ্গলবার রাঁচির বাড়িতে ফিরেই দলের মন্ত্রী, বিধায়ক ও দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানেই তিনি জানিয়ে দেন, তাঁর গ্রেপ্তারি অবধারিত। সেক্ষেত্রে তাঁর স্ত্রী কল্পনাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মেনে নিক দল। সূত্রের খবর, কংগ্রেস-জেএমএম জোটের অধিকাংশ বিধায়ক সেই প্রস্তাব মেনেও নেন। কিন্তু হেমন্তের ডাকা ওই বৈঠকে দলের অন্তত জনা আটেক বিধায়ক গরহাজির ছলেন।
সেখান থেকেই ভাঙনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। পরে জানা যায় নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন হেমন্তেরই ভাই বসন্ত সোরেন। আসলে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুপ্ত বাসনা ছিল তাঁর মধ্যেও। সূত্রের খবর, তলে তলে তিনিও যোগাযোগ করেন দলের বিধায়কদের সঙ্গে। অন্তত ১৫-১৮ জন বিধায়কের সমর্থন জোগাড়ও করে ফেলেন তিনি। সোজা চলে যান শিবু সোরেনের দ্বারে। শিবুর কাছে গিয়ে দরবার করেন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য। বসন্তকে সমর্থন করেন শিবুর আরেক পুত্রবধূ জটিলতা বাড়ে। বড় বউমা নাকি ছোট ছেলে, কাকে মুখ্যমন্ত্রী বাছা হবে তা নিয়ে সংশয়ে পড়ে যান শিবু নিজেও। তাছাড়া যাকেই মুখ্যমন্ত্রী বাছা হোক, দলে ভাঙনের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠে।
অন্য একটি সূত্রের দাবি, রাজ্যে রাবড়ি মডেল বাস্তবায়িত না হওয়ার নেপথ্যে রয়েছেন চার বিধায়ক। তাঁরা কল্পনার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া আটকে দিয়েছেন। সেই ‘বিদ্রোহী’ গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন হেমন্তেরই বৌদি তথা জেএমএম বিধায়ক সীতা সোরেন। ‘গুরুজি’ বা শিবু সোরেনের প্রয়াত বড় ছেলে দুর্গা সোরেনের স্ত্রী সীতা।
তার পরই ঠিক হয়, পরিবারের অন্দরে এই ঝামেলার ঊর্ধ্বে গিয়ে বাইরের কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করা হোক। তারপরই ভেসে আসে সোরেন পরিবারের বিশ্বস্ত চম্পাই সোরেনের নাম। বস্তুত পারিবারিক সংঘাতে ঝাড়খণ্ডে লালু-রাবড়ি মডেল কার্যকর না হলেও বিহারেরই আরেক মডেল কার্যকর হয়েছে।
বলে রাখা ভাল, ৮১ আসনের ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ‘জাদু সংখ্যা’ ৪১। জেএমএমের সরফরাজ আহমেদের ইস্তফার কারণে এখন বিধায়ক সংখ্যা ৮০। শাসক জোটের রয়েছে ৪৮ জন বিধায়ক। জেএমএম ২৯, কংগ্রেস ১৬, আরজেডির ১ এবং সিপিআইএম লিবারেশন ১। বিরোধী শিবিরে রয়েছেন ৩২ বিধায়ক। বিজেপি ২৫, আজসু ৩, এনসিপি (অজিত) ১, নির্দল ৩। অর্থাৎ আট জন বিধায়ক ভাঙাতে পারলেই ঝাড়খণ্ড বিজেপির দখলে চলে আসবে। শেষ পাওয়া খবর মোতাবেক এখনও চম্পাইকে সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানাননি রাজ্যপাল। বিরোধীদের একাংশের আশঙ্কা, বিধায়ক কেনাবেচার ‘সময়’ করে দিতেই আমন্ত্রণে কালক্ষেপ করা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.