সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বাধীনতার ৭৫ বছর পেরিয়ে কতখানি অগ্রগতি হয়েছে দেশের? স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প, শক্তি, পরিকাঠামো- কোন ক্ষেত্রে কতটা উন্নতির মুখ দেখেছে ভারতবর্ষ? বিজেপি সরকারের হাত ধরে ঠিক কতটা এগোতে পেরেছে এই দেশ, লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণে সে সব দিকই তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। চলুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক তাঁর ভাষণের ১০টি পয়েন্ট।
সেনা স্কুলে মেয়েরাও: এতদিন পর্যন্ত দেশের সেনা স্কুলে ছেলেরাই পড়ার সুযোগ পেতেন। তবে এবার প্রতিটি সেনা স্কুলে পড়তে পারবে মেয়েরাও। স্বাধীনতা দিবসে বড় ঘোষণা মোদির। যেভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে মেয়েরা অভূতপূর্ব উন্নতি করছে, তারই স্বীকৃতিস্বরূপ এই ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর। টোকিও অলিম্পিকে মহিলা অ্যাথলিটদের সাফল্যকেও কুর্নিশ জানান তিনি।
রপ্তানিতে উন্নতি: রপ্তানি ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে দেশ। বর্তমানে তিন বিলিয়ন ডলারের মোবাইল রপ্তানি করছে ভারত। দেশীয় পণ্য গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। স্টার্ট-আপের পাশে দাঁড়ানো থেকে কর ছাড়- সবরকমভাবে উৎসাহ দেবে সরকার। জানান প্রধানমন্ত্রী।
কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতি: ‘দেশ কি শান, ছোটা কিষান’। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক অর্থাৎ যাঁদের ২ হেক্টরের কম জমি, তাঁরাই দেশের গর্ব। মোদি বলেন, “বর্তমানে ৮০ শতাংশ কৃষকেরই ২ হেক্টরের কম জমি রয়েছে। তাই তাঁদের কীভাবে সাহায্য করা যায়, সেটাই আমাদের ফোকাস হওয়া উচিত। সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁদের সবরকম সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে। বর্তমানে ১০ কোটি কৃষক পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেড় লক্ষ কোটি টাকার বেশি জমা পড়েছে।”
বন্দে ভারত: দেশের পরিবহণ ব্যবস্থাকে আমুল বদলে দিতে ১০০ কোটি টাকারও বেশি খরচে ‘প্রধানমন্ত্রী গতিশক্তি’ প্রকল্পের ঘোষণা করেন তিনি। ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নয়া পদক্ষেপ। মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচিতে আগামী ৭৫ সপ্তাহে ৭৫টি বন্দে ভারত ট্রেন দেশের প্রতিটি কোণকে জুড়ে দেবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন বিমানবন্দরও। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে অনায়াসে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হবে। বলেন মোদি। দাবি করেন, এই প্রকল্পের ফলে দেশের পরিকাঠামো ক্ষেত্র আমুল বদলে যাবে। যা আগামীদিনে বিপুল রোজগারের রাস্তা খুলে দেবে। ১০০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি এই প্রকল্প মূলত রাস্তা, রেললাইন, বিমান পরিষেবার উন্নয়নের জন্য।
বদলে যাওয়া কাশ্মীর: ৩৭০ ধারা বাতিলের দু’বছরেরও বেশি সময় পর কাশ্মীরে (Kashmir) ফিরছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অর্থাৎ নির্বাচন। ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলকে নিজের সরকারের সাহসী সিদ্ধান্ত হিসাবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, এর ফলে কাশ্মীর এবং লাদাখ (Ladakh) দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলই শান্তি এবং সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে চলেছে। মোদির ঘোষণা, কাশ্মীরে ডিলিমিটেশন কমিশন গঠন হয়েছে। শুরু হয়েছে সীমানা পুনর্বিন্যাসের কাজ। এই কাজ শেষ হলেই দ্রুত নির্বাচন হবে। লাদাখও উন্নয়নের পথে দ্রুত এগোচ্ছে।
অমৃতকাল: আগামী ২৫ বছরে ভারতে আসবে ‘অমৃতকাল’। অর্থাৎ স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তিতে সাফল্যের নয়া শিখর ছুঁয়ে ফেলবে দেশ। যেখানে দেশে কোনও পরিকাঠামোর অভাব থাকবে না। তার জন্য অবশ্য এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। দেশকে বদলাতে হবে এবং নাগরিক হিসেবে নিজেদেরও বদলে ফেলতে হবে। ভারতের বিকাশ যাত্রার কারিগর হয়ে উঠতে হবে নিজেদেরই। বলেন নরেন্দ্র মোদি।
সবকা প্রয়াস: সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত এদিন প্রধানমন্ত্রী যোগ করলেন ‘সবকা প্রয়াস’। আত্মনির্ভর ভারত তৈরির জন্য প্রত্যেকের যোগদান প্রয়োজন বলেই জানালেন প্রধানমন্ত্রী।
টার্গেট ১০০ শতাংশ: আয়ুষ্মান ভারত, উজ্জ্বলা যোজনা, পেনশন যোজনা, আবাস যোজনা-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের একশো শতাংশ নাগরিককে এক সুতোয় বেঁধে ফেলাই সরকারের লক্ষ্য বলে জানান মোদি। তাঁর কথায়, “একশো শতাংশ গ্রামে রাস্তা, সব মানুষের স্বাস্থ্য কার্ড, উজ্জ্বলার সংযোগ, সবার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকুক। সবার কাছে সুযোগ সুবিধা পৌঁছে যাক। তবে এর জন্য সময়সীমা দীর্ঘ করা যাবে না। কয়েক বছরের মধ্যেই এই স্বপ্ন সত্যি করতে হবে। আমি খুশি জল জীবন শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই সাড়ে সাত কোটি মানুষের ঘরে জল পৌঁছে যাচ্ছে। এই একশো শতাংশ টার্গেটের একটাই সুবিধা হল, এতে কেউ সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন না। দেশের প্রত্যেক নাগরিক যদি এই সুবিধা পায়, তাহলে কোনও বিভেদ, কোনও দুর্নীতির সুযোগই থাকে না। এবার থেকে গরিবদের কাছে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন চাল পৌঁছে দেওয়া হবে।” বলেন, মোদি। পাশাপাশি প্রত্যেক বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে জল। দুবছরের মধ্যে আড়াই কোটি ঘরে পাইপ লাইন পৌঁছে গিয়েছে বলেও জানান তিনি।
করোনা মোকাবিলা: প্রধানমন্ত্রী জানান, শক্ত হাতে দেশ কোভিড অতিমারীর মোকাবিলা করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকাকরণ অভিযান চলছে। এখনও পর্যন্ত যেখানে ৫৪ কোটিরও বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি করোনা মোকাবিলার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি।
বিভাজন বিভীষিকা স্মরণ দিবস: দেশভাগের যন্ত্রণাকে কোনওভাবেই ভোলা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi) তাই ঘোষণা করলেন প্রতি বছর ১৪ আগস্ট ‘বিভাজন বিভীষিকা স্মরণ দিবস’ (Partition Horrors Remembrance Day) হিসেবে পালন করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.