Advertisement
Advertisement

Breaking News

Odisha

জগন্নাথই জয়ের রাস্তা, ‘কলিঙ্গ যুদ্ধে’ পুরীর মন্দির ঘিরেই রণকৌশল বিজেপি-বিজেডির

'ধর্ম'-কাঁটায় নবীন পট্টনায়েককে বিঁধতে মরিয়া গেরুয়া শিবির।

Here is how BJP-BJD battle lines intersect at Jagannath's Puri
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:May 30, 2024 9:13 pm
  • Updated:May 30, 2024 9:13 pm

অরিঞ্জয় বোস, পুরী: দেখতে দেখতে লোকসভা নির্বাচন পৌঁছে গিয়েছে শেষ ধাপে। ১ জুন সপ্তম তথা শেষ দফার ভোটাভুটি। যার মধ্যে রয়েছে ওড়িশাও। চার দফার ভোটে এবার নবীন পট্টনায়েকের দলকে কি টেক্কা দিতে পারবে বিজেপি (BJP)? সেকথা জানা যাবে ৪ জুন। কিন্তু তার আগেই যেটা হলফ করে বলা যায় তা হল ওড়িশার ভোটে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর রামমন্দির নয়, পুরীর জগন্নাথ মন্দির (Jagannath Mandir)। আর সেই লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছিল বছরের গোড়া থেকেই। তার পর যত সময় এগিয়েছে তত এরাজ্যের ভোটপ্রচারে জগন্নাথ দেবই থেকেছেন একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে।

গত ১৭ জানুয়ারি উদ্বোধন তথা ‘লোকার্পণ’ হয় দ্বাদশ শতাব্দীর পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের হেরিটেজ করিডরের। উদ্বোধন করেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। ৮০০ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি ওই করিডর তৈরি করা হয়েছে। এর ঠিক পাঁচদিন পরই ছিল ১২০০ কিমি দূরে অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন তথা রামলালার ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’। তার আগে করিডর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে ওড়িশা সরকার প্রচারে কোনও খামতি রাখেনি। সংবাদপত্রে পাতাজোড়া বিজ্ঞাপন। গ্রাম পঞ্চায়েত ও ব্লক সদর দপ্তরে বড় পর্দা লাগিয়ে ‘লাইভ’ সম্প্রচার। গোটা দেশের প্রায় একহাজার মন্দিরের ধর্মীয় প্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো। পাশাপাশি সেলেব্রিটি ও শিল্পপতিদেরও উদ্বোধনের মুহূর্তে উপস্থিত থাকার আহ্বান। দোরে দোরে ঘুরে প্রচার তো ছিলই। গোটা ওড়িশা মেতে উঠেছিল ‘লোকার্পণ’কে ঘিরে। রামমন্দিরের উদ্বোধনের ঠিক পাঁচদিন আগের দিনটিকে করিডর উদ্বোধনের দিন হিসেবে বেছে নেওয়াটা যে একেবারেই সমাপতন নয়, সেবিষয়ে নিশ্চিত ওয়াকিবহাল মহল। আসলে ওড়িশায় পায়ের তলার জমি ক্রমশই শক্ত করতে মরিয়া বিজেপি। আর সেদিকে তাকিয়েই তাদের টক্কর দিতে ‘হিন্দুত্বে’ই জোর দিতে চেয়েছেন নবীন পট্টনায়েক। আর ওড়িশায় জগন্নাথ মন্দিরের ঐতিহ্য ও তীর্থস্থান হিসেবে এর গুরুত্বই যে ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে শক্তিশালী, তা নিয়ে কোনও তর্কের অবকাশ নেই। তাই ভোটপ্রচারে জগন্নাথ মন্দির ও করিডর উদ্বোধনকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন নবীনরা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: পুঞ্চ হাইওয়ে থেকে খাদে পড়ল যাত্রীবাহী বাস, কাশ্মীরের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত কমপক্ষে ১৫]

নতুন সহস্রাব্দ থেকেই এরাজ্যে নবীন পট্টনায়েক ও তাঁর দল বিজেডি ক্ষমতায়। এত দীর্ঘ সময়ের ক্ষমতাসীন দলকে শিকড় উপড়ে সরিয়ে দিতে মরিয়া গেরুয়া শিবিরও তাই তাদের প্রচারে জগন্নাথ মন্দিরকেই কেন্দ্রে রেখেছে। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ বলছে, ওড়িশার উপকূলবর্তী অঞ্চলে রামমন্দির প্রভাব ফেলেছে। ২২ জানুয়ারি রাম-হনুমানের ছবি লাগানো গেরুয়া পতাকা উড়তে দেখা গিয়েছে সেখানে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, বিজেপি ছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু জগন্নাথের ‘বাড়ি’ পুরী ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে রামমন্দির কোনও ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠতে পারেনি বলেই মত অনেকের। গত ২৫ মে ছিল পুরীর ভোট। ১৯৯৮ সাল থেকে এই লোকসভা কেন্দ্রে হারেনি বিজু জনতা দল। ২০১৯ সালে এখানকার সাতটি বিধানসভা অঞ্চলের মধ্যে পাঁচটিতেই এগিয়েছিল বিজেডি। বিজেপি মাত্র দুটিতে। এবার কি সমীকরণ বদলাবে?

Advertisement

বিজেপি চেষ্টার কসুর করেনি। জগন্নাথ মন্দিরের রহস্যময় রত্নভাণ্ডারকে ইস্যু করে তুলেছেন মোদি। ২০১৮ সাল থেকে রত্নভাণ্ডারের একটি চাবি পাওয়া যাচ্ছে না। পুরীর জগন্নাথদেবের রত্নভাণ্ডার খোলার জন্য দরকার মোট ৩টি চাবি। ১টি চাবি থাকে গজপতি রাজার কাছে, ১টি চাবি থাকে মন্দিরের সেবায়ত ভাণ্ডারে। আরেকটি অর্থাৎ তৃতীয় চাবি থাকে পুরীর জেলাশাসকের দায়িত্বে। এই তৃতীয় চাবিটি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী এই তৃতীয় চাবিটি হারানোর নেপথ্যের রহস্য নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। ওড়িশার বিজেডি (BJD) সরকারের ভূমিকা এক্ষেত্রে সন্দেহজনক বলে মনে করছেন মোদি (PM Modi)। কেবল মোদিই নন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও একই ভাবে রত্নভাণ্ডারের চাবির উল্লেখ করে আক্রমণ শানিয়েছেন। পুরীর বিজেপি প্রার্থী সম্বিৎ পাত্রর হয়ে প্রচারে এসে এই ইস্যুতেই বেশি জোর দিয়েছেন তাঁরা। আসলে পুরীর ধর্মভীরু মানুষের কাছে রত্নভাণ্ডারের চাবি হারানোটা একটা সংবেদনশীল বিষয়। বিজেপি ভালো করেই তা বুঝে গিয়েছে।

[আরও পড়ুন: ভোটগণনায় কড়া নজরদারির সিদ্ধান্ত, বাংলায় আসছে ১৩৮ জন পর্যবেক্ষক]

এদিকে আরও একটি বিষয় বিজেপির পক্ষে যেতে পারে বলে মত অনেকের। আসলে পুরী থেকে দূরবর্তী অঞ্চলের মানুষরা করিডর নিয়ে খুশি। কিন্তু স্থানীয়দের মধ্যে এ নিয়ে নানা মত। অনেকেরই দাবি, যেভাবে নয়া করিডর গড়তে বহু পুরনো মঠ (যার অনেকগুলোই ৪০০-৫০০ বছরের পুরনো) ভেঙে ফেলা হয়েছে তা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। পথের ধারের বহু দোকানদারকে উৎখাত করা হয়েছে। কোনও বিকল্প দোকানও দেওয়া হয়নি। পুরীর এক সমাজকর্মী বলছেন, ”সিংহদুয়ার কু সিঙ্গাপুর কোরো না।” অর্থাৎ মন্দিরের ঠিক বাইরের যে সিংহদুয়ার অঞ্চল, তাকে ‘সিঙ্গাপুর’ বানাতে চাইছে নবীন পট্টনায়েক সরকার। একে কেবলই এক টুরিস্ট হাব করে তোলায় আপত্তি ওই সমাজকর্মীর। মন্দির চত্বরে ঘুরে বেড়ালে স্থানীয় এমন বহু মানুষের দেখা মিলবে যাঁরা একই মত পোষণ করেন। অর্থাৎ এই ফ্যাক্টরগুলো বিজেডির জন্য ‘কাঁটা’ হয়ে উঠতে পারে। আবার বিজেপি সেই ‘ইস্যু’গুলোকে কাজে লাগিয়ে কেল্লাফতে করবেই এটাও বলা মুশকিল। কাজেই ‘শেষ হাসি’ কে হাসবে তা জানা যাবে মঙ্গলবারই। কিন্তু সেই হাসির প্রেক্ষাপটে যে দ্বাদশ শতাব্দীর জগন্নাথ মন্দির ও জগন্নাথদেবই প্রধানতম ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে থাকবেন তা একশো শতাংশ নিশ্চিত।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ