সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: আবাস যোজনায় ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ তুলে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির (BJP) নেতারা। যার প্রেক্ষিতে কেন্দ্র প্রথমে রাজ্যেকে পাঠায় ৪৯৩ পাতার চিঠি, পরে পরিদর্শনে হাজির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। কিন্তু জেলায় জেলায় ঘুরে আবাস যোজনায় সেই অর্থে কোনও গরমিলই খুঁজে পেলেন না সেই দলের সদস্যরা। মালদহ থেকে পূর্ব বর্ধমান–সর্বত্র এক ছবি। বিজেপি নেতাদের তোলা বেশিরভাগ নালিশই ‘ভুয়া’ প্রমাণিত হওয়ায় কার্যত শীতের পর্যটকে পরিণত বনে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। এমনই কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। এরই মধ্যে গেরুয়া শিবিরের অস্বস্তি বাড়িয়ে শুক্রবারই আবাস যোজনা নিয়ে রাজ্যের পদক্ষেপের প্রশংসা করলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিদের একাংশও স্বীকার করেছেন, প্রতি জেলায় আবাস নিয়ে রাজ্যের কড়া মনোভাবেরই প্রমাণ মিলেছে। কেন্দ্রের শর্ত মেনে রাজ্য কড়া হওয়ায় বেশ কিছু নাম বাদ পড়েছে।
এখানেই গোল বেঁধেছে। আসলে
আবাস যোজনায় (Awas Yojona) কারা অন্তর্ভুক্ত হবেন তার জন্য ১৫ দফা শর্ত বেঁধে দিয়েছিল কেন্দ্র। বলা হয়েছে, এই ১৫টি জিনিসের যে কোনও একটি থাকলে উপভোক্তা আবাস যোজনায় বাড়ি পাবেন না। যা একপ্রকার অবাস্তব বলে অভিযোগ। সেই শর্তের পাহাড় পেরিয়ে, ত্রিস্তরীয় ছাকানিতে সাড়ে ১১ লক্ষ উপভোক্তাকে বাছাই করেছে রাজ্য।
কী সেই শর্ত?
১। পাকা বাড়ি থাকা চলবে না।
২। পরিবারে যদি অন্য কোনও সরকারি যোজনায় বাড়ি পেয়ে থাকে।
৩। বাইক, গাড়ি, যন্ত্রচালিত ভ্যান, মাছ ধরার ট্রলার থাকা চলবে না।
৪। পরিবারের যদি তিন বা চার চাকার ট্রাক্টর বা চাষের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রচালিত গাড়ি থাকে।
৫। পরিবারের যদি ৫০ হাজার টাকা বা তার বেশি ঋণ পাওয়ার যোগ্য কিষান ক্রেডিট কার্ড থাকে।
৬। পরিবারের কেউ যদি সরকারি চাকুরে হয়।
৭। পরিবারের যদি সরকারি নথিভুক্ত অ-কৃষি উদ্যোগ সংস্থা থাকে।
৮। পরিবারের কোনও একজন সদস্য যদি ১০ হাজার টাকার বেশি বেতন পায়।
৯। পরিবার যদি আয়কর দিয়ে থাকে।
১০। পরিবার যদি বৃত্তি কর দিয়ে থাকে।
১১। পরিবারের যদি নিজস্ব ফ্রিজ থাকে।
১২। পরিবারের যদি ল্যান্ডলাইন ফোন থাকে।
১৩। পরিবারের যদি ২.৫ একরের বেশি সেচযুক্ত জমি ও সেচের কোনও হাতিয়ার থাকে।
১৪। পরিবারের যদি ৫ একরের বেশি সেচযোগ্য জমি থাকে ও তাতে দু’টি মরশুমে চাষ হয়ে থাকে।
১৫। পরিবারের যদি অন্তত ৭.৫ একর জমি অথবা সেচের অন্তত একটি হাতিয়ার থাকে।
বিজেপির মুখরক্ষায় সেই অবাস্তব শর্তের কথাই বারবার টেনে আনছে দফায় দফায় রাজ্যে আসা কেন্দ্রীয় দলের একাংশ। যা শুনে পঞ্চায়েত দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘কেন্দ্রও জানে, ওই শর্তাবলি অবাস্তব। পুঙ্খানুপুঙ্খ মানতে গেলে একজনও বাড়ি তৈরির টাকা পাবেন না।’’ এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের ‘স্ববিরোধিতা’ নিয়ে সরব সংশ্লিষ্ট মহল। বলা হচ্ছে, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি করে রাজ্য চেষ্টা করছে মার্চের মধ্যে বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করার। অন্যদিকে, নানা অজুহাতে কেন্দ্র সেই প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দিচ্ছে।