সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একদিনের ব্যবধানে পুরোপুরি বদলে গেল জম্মু- কাশ্মীরের ছবি। কাল পর্যন্ত যে উপত্যকা কার্যত স্বায়ত্বশাসনের সুবিধা পেত তা আর রইল না। সেইসঙ্গে একসময়ের অঙ্গরাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর এখন ভেঙে দু’টুকরো। দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে গোটা রাজ্যকে। একনজরে দেখা যাক এর সম্ভাব্য প্রভাব কী হতে পারে।
রাজ্যের মর্যাদা হারিয়ে কাশ্মীর দু’ভাগে বিভক্ত। একটি জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। যার আলাদা সরকার থাকবে। কিন্তু, সেই সরকার নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। সেই অধিকার ন্যস্ত থাকবে কেন্দ্রের হাতে। অন্যদিকে, লাদাখ হবে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। যার আলাদা কোনও সরকার থাকবে না দমন-দিউ বা আন্দামানের মতোই এই এলাকার পুরো প্রশাসনই থাকবে কেন্দ্রের হাতে। এর ফলে কাশ্মীরের নিরাপত্তা বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কেন্দ্র।
যার সবচেয়ে সুবিধাজনক দিক হল, অভ্যন্তরীণ বিচ্ছিন্নতাবাদ বা সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণের জন্য আর রাজ্য সরকারকে বারবার হুঁশিয়ার বা সতর্ক করতে হবে না কেন্দ্রকে। এর ফলে সরাসরি কেন্দ্রের ‘আয়রন হ্যান্ড’ পলিসিতে কাজ করতে আর কোনও বাধা রইল না।
কাশ্মীর প্রশাসনের রাশ কেন্দ্রের হাতে চলে আসায় পাথরবাজদের দমন এবং নিয়ন্ত্রণ করা আগের তুলনায় অনেক সহজ হবে বলে মনে করছেন অনেকে। যে সব বিচ্ছিন্নতাবাদীরা রাজনৈতিক আশ্রয়ে সন্ত্রাসের বীজ বপন করছিল, তাদেরও দমন করা যাবে। সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতায়ন আইন চালু থাকলেও রাজ্য প্রশাসনের ‘অসহযোগিতা’র জন্য অনেকাংশে সেনাকেও সন্ত্রাস দমনে বাধাপ্রাপ্ত হতে হত।
কাশ্মীরে পৃথক প্রশাসন না থাকায় সীমান্তের ওপারের গতিবিধির উপর সরাসরি নজর রাখতে পারবে নয়াদিল্লি।
স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় না থাকায় পাকিস্তান থেকে অনুপ্রবেশকারী জঙ্গিরা অনেক সময় কোনওপ্রকারে সীমান্ত পেরিয়ে প্রবেশ করতে পারলেই কাশ্মীরে অবাধ বিচরণ করতে পারত। তা আর সম্ভব হবে না। ফলে একই সঙ্গে অনুপ্রবেশ এবং সন্ত্রাসবাদ একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
এবার আসা যাক আর্থিক সুবিধার দিকে। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা উঠে যাওয়ায় উপত্যকার বাজার খুলে গেল গোটা দেশের জন্য। এর ফলে কাশ্মীরে পর্যটন ব্যবস্থা এবং ব্যবসাবাণিজ্যের উন্নতি হবে বলে দাবি করছে কেন্দ্র। তাছাড়া আলাদা আইন থাকার জন্য দেশের অন্য প্রান্তে চালু থাকা সংরক্ষণের সুবিধা কাশ্মীর পেত না। তাও এবার থেকে পাবেন কাশ্মীরবাসী। যা ঐতিহাসিক বলে দাবি কেন্দ্রের। কাশ্মীরের চাকরি এবং জমির বাজার খুলে যাওয়া আর্থিক লেনদেন বাড়বে, যার সুবিধাও কাশ্মীরবাসী পাবেন।আন্তঃরাজ্য বিবাহ, বাণিজ্য ইত্যাদি সুবিধা মিলবে৷
তবে, এই সিদ্ধান্তের ফলে সাময়িক কিছু সমস্যাও হতে পারে। কাশ্মীরে ব্যাপক বিক্ষোভের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পাথরবাজদের দৌরাত্ম্য কিছুটা বাড়তে পারে সাময়িকভাবে। তবে, এসব দমন করার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত আছে কেন্দ্র। এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হল কাশ্মীরের দুই রাজনৈতিক পরিবার। আবদুল্লা এবং মুফতি। কারণ, কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হয়ে যাওয়ায় রাজনৈতিকভাবে তাঁদের আর কোনও ক্ষমতাই রইল না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.