বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: বিহারের লালুপ্রসাদের পথেই ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন (Hemant Soren)? স্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী করতে তৎপর হেমন্ত। সোমবার নিখোজ থাকার পর মঙ্গলবার রাঁচির বাড়িতে ফিরেই দলের মন্ত্রী, বিধায়ক ও দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ঝাড়খন্ডের (Jharkhand) মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন। ইডি (ED) তাঁকে গ্রেপ্তার করলে পরবর্তী কৌশল ঠিক করতেই বৈঠক। সেক্ষেত্রে স্ত্রী কল্পনাকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসাতে পারেন। মন্ত্রী ও বিধায়কদের সম্মতি আদায়ে আলোচনা করেন। তবে বৈঠকে দলের চার বিধায়ক অনুপস্থিত ছিলেন। দলের মন্ত্রী ও বিধায়কদের পাশাপাশি কংগ্রেস ও বাম বিধায়কদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। মনে করা হচ্ছে, আজ বুধবার হেমন্ত ইডি দপ্তরে হাজিরা দিতে গেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাঁচির বাড়িতে ফিরে এসেছেন ঝাড়খণ্ডের ‘নিখোঁজ’ মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। দুপুর আড়াইটে নাগাদ রাঁচির বাড়িতে ফেরেন। এরপরেই সন্ধ্যায় বিধায়ক ও মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। মনে করা হচ্ছে গ্রেপ্তার এড়ানো কঠিন মনে করেই পরিষদীয় দলের বৈঠক ডেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট হেমন্ত সরেনকে গ্রেপ্তার করলে মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে তাঁর স্ত্রী কল্পনাকে। লাভদায়ক পদে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বছর বিধায়ক পদ খারিজের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠলে স্ত্রী’র নাম পরিষদীয় দলে পাশ করিয়ে রেখেছিলেন জেএমএম নেতা। যদিও পরে ওই ব্যাপারে রাজ্যপাল আর এগোননি।
মঙ্গলবার সকালে ইডি সরকারিভাবে জানায়, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীকে পাওয়া যাচ্ছে না। সোমবার রাত পর্যন্ত তিনি দক্ষিণ দিল্লির বাড়িতে ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে গিয়ে তাঁকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। ছিলেন না রাঁচির বাড়িতেও। মুখ্যমন্ত্রীর অফিস ও বাড়ি থেকে জানানো হয় সোরেন কোথায় আছেন তাঁরা জানেন না। যদিও সরেনের ঘনিষ্ঠরা দাবি করে আসছিলেন, নেতার সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ আছে। তবে অনুমান করা হয়েছিল সরেন গোপনে সড়ক পথে রাঁচির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তিনি আসলে দিল্লিতে গ্রেপ্তার হতে চাইছেন না। গ্রেপ্তার করা হলে তাঁর দল ও জোট বড়মাপের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে। ইডি সূত্রের খবর, জমি বেদখল এবং বেআইনি লেনদেনের ঘটনায় সরেন অনেক প্রশ্নের উপযুক্ত জবাব দিতে পারেননি।
পারেননি নিজের অবস্থানের জবাবে নথিপত্র দিতে। ফলে তাঁকে গ্রেফতারের সম্ভাবনা প্রবল হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে সেই কারণেই রাঁচি ফিরে পরিষদীয় দলের বৈঠকে বসে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরেনের ঘনিষ্ঠ লোকজনও দাবি করেছে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ আছে। তিনি নিরাপদেই আছেন। ইডিকে এড়াতে বেপাত্তা হয়েছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে ফের জেরা করা নিয়ে অবশ্য ইডিকে মেল পাঠিয়ে সোরেন জানান, ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ঝাড়খণ্ড বিধানসভার বাজেট অধিবেশন শুরু হবে। তিনি বাজেট নিয়ে ব্যস্ত আছেন। এখন আর ইডির মুখোমুখি হওয়া সম্ভব নয়।
দিল্লির বাড়ি থেকে ৩২ লাখ টাকা নগদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থাটি। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের বিরুদ্ধে ইডির তদন্ত নিয়ে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে বলেন, “আমি রাজ্যপালকে সংবিধানের ৩৫৫ অনুচ্ছেদের অধীনে একটি রিপোর্ট পাঠাতে অনুরোধ করছি। হেমন্তের ভাই এবং ভগ্নিপতি আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা সবাই দুঃখিত যে এই দলটি শিবু সরেন এবং দুর্গা সোরেন দ্বারা গঠিত হয়েছিল। কিন্তু তিনি তাঁর স্ত্রীকে দায়িত্ব দিতে চান কেউ এতে রাজি হচ্ছেন না। তিনি পলাতকের মতো তার স্ত্রীর জন্য দায়িত্ব নেওয়ার চেষ্টা করছেন।আমি মনে করি এটি রাষ্ট্রপতি শাসনের জন্য সঠিক সময়।”
আবার ইন্ডিয়া জোটের শরিক সিপিএমের তরফে জানান হয়েছে, নীতিশ কুমারের জেডিইউ ছেড়ে যাওয়ায় জোটে কোনও প্রভাব পরবে না। তবে অন্যান্য শরিক যেমন আরজেডি ও জেএমএমের ওপর যেভাবে তদন্তকারী সংস্থাকে নামান হয়েছে তা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলেই মনে করছে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.