সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঝাড়খণ্ডে সরকার গঠনের তৎপরতা শুরু। মুখ্যমন্ত্রীর দাবিদার নিয়ে কোনওরকম জল্পনা নেই। প্রাথমিকভাবে মন্ত্রিসভার রূপরেখাও তৈরি করে ফেলেছেন জোট নেতারা। জেএমএম এবং রাঁচির রাজভবন সূত্রে খবর, হেমন্ত সোরেনের শপথ গ্রহণ হতে পারে ২৭ ডিসেম্বর। জোটসঙ্গী কংগ্রেসকে উপমুখ্যমন্ত্রী পদ দিয়ে নিজে মুখ্যমন্ত্রিত্বে শপথ নেবেন হেমন্ত। কংগ্রেস হাইকমান্ডের সঙ্গে দপ্তর নিয়েও একদফা কথা বলে নিয়েছেন তিনি। এদিকে জেএমএমকে নিঃশর্ত সমর্থনের প্রস্তাব দিয়েছেন বাবুলাল মারান্ডির ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা।
সোমবার দুপুর পর্যন্ত বিজেপি আশায় ছিল, ফল হতে পারে ত্রিশঙ্কু। কিন্তু যত সময় গড়িয়েছে, পাল্লা ঝুঁকে পড়েছে জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডি জোটের দিকে। ৮১ আসনের ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় শেষ পর্যন্ত জোটের দখলে গিয়েছে ৪৭টি আসন। যার মধ্যে জেএমএম ৩০টি, কংগ্রেস ১৬টি এবং আরজেডি একটি আসন পেয়েছে। ফলে ম্যাজিক ফিগার ৪১ পেরিয়ে গিয়েছে অনায়াসে। পরিষ্কার হয়েছে সরকার গঠনের রাস্তা।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মঙ্গলবারই রাঁচিতে পরিষদীয় দলের বৈঠকে বসছেন শিবুপুত্র হেমন্ত। বৈঠকে থাকবেন ঝাড়খণ্ডের তিন বারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্তের বাবা শিবু সোরেনও। জেএমএম সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই বৈঠকেই হেমন্তকে পরিষদীয় দলনেতা নির্বাচিত করবেন দলের বিধায়করা। তার পর মঙ্গলবার কিংবা বুধবার রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের কাছে গিয়ে সরকার গঠনের দাবি করতে পারেন হেমন্ত সোরেন। মন্ত্রিসভা কেমন হতে পারে, তা একটা নকশা দিয়েছে তিনদলের তরফে। ঠিক হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী-সহ ছ’টি দপ্তর থাকবে জেএমএমের হাতে।
কংগ্রেসের হাতে থাকতে পারে বিধানসভার স্পিকার-সহ পাঁচটি দপ্তর। একটি দপ্তর দেওয়া হতে পারে লালুপ্রসাদের দল আরজেডিকে। মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সোমবারই রাজভবনে গিয়ে ইস্তফা দিয়ে এসেছেন রঘুবর দাস। তিনি নিজেই হেরে গিয়েছেন। ফলে বিরোধী দলনেতা হওয়ার দৌড়ে থাকতে পারবেন না তিনি। তাঁকে যিনি হারিয়েছেন, সেই নির্দল প্রার্থী সরযূ রায় বিজেপিতে ফিরতে পারেন বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেই কারণে তাঁকে বিরোধী দলনেতা করা হতে পারে বলে বিজেপি সূত্রে খবর। যদিও এ বিষয় নিয়ে এখনও আলোচনা শুরু হয়নি বলেই প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, হেমন্তের দল জেএএম ঝাড়খণ্ডে গতবারের ১৯টি আসন থেকে ১১টি বাড়িয়ে নিয়ে ৩০টি আসন পেয়ে সবথেকে বড় দল হয়েছে। কংগ্রেস পেয়েছে ১৬টি আসন। আরজেডির ঝুলিতে গিয়েছে ১টি আসন। সেখানে এবারে বিজেপির আসন সংখ্যা ২৫ যা গতবারের ৩৭টির তুলনায় ১২টি কম। বিজেপির পরাজয়ের পিছনে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসের খারাপ ভাবমূর্তির ভূমিকা রয়েছে মনে করছেন রাজনৈতিকমহল। খারাপ আচারণের জন্য দাসের কুখ্যাতি রয়েছে। দাসই হলেই ঝাড়খণ্ডের প্রথম পাঁচ বছরের পূর্ণ সময়ের মুখ্যমন্ত্রী। সেটাও আবার আদিবাসী নন এমন কেউ।
২০১৪ সালে দাস যখন মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেন তখন এই আদিবাসী, ও আদিবাসী নয় এমন ইস্যুটি জীবন্ত ছিল না। কিন্তু দাসের কর্মকান্ডের ফলেই এবারের নির্বাচনে এই ইস্যু প্রকট হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, হেমন্তের রাজনীতিতে আসা নিয়ে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়া হেমন্তের রাজনীতিতে আসা। শুরুর দিকে ‘গুরুজি’র রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে যাঁদের নাম উঠে এসেছিল, সেই তালিকায় কোথাওই ছিল না হেমন্তের নাম। বরং শিবু চেয়েছিলেন তাঁর পরে সেই কুর্সিতে বসুন তাঁর ভাই দুর্গা সোরেন। সেই মতো ভোটে জিতে বিধায়কও হন তিনি। কিন্তু, হঠাৎই ঘেঁটে যায় যাবতীয় হিসাব। মৃত্যু হয় শিবু সোরের ভাইয়ের। রাজনীতির ময়দানে একা পড়ে যান শিবু। তখনই ডাক পড়ে হেমন্তের। পাটনা থেকে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করা হেমন্ত তখন রাঁচিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন। দুর্গার মৃত্যুর মাসখানেকের মধ্যেই রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ হেমন্তের। ২০০৯ সালে তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করে দিল্লি পাঠায় দল। সেই শুরু। তার পর থেকে রাজনীতিই তাঁর ঠিকানা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.