সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: দাঁত-নখ ক্ষয়ে এখন অনেকটাই দুর্বল করোনাসুর (Coronavirus)। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন সকলে। এসে গিয়েছে দুর্গাপুজোও (Durga Puja)। এই পুজোকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অস্থায়ী শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার মানুষগুলোর মুখে উঁকি দিচ্ছে শরতের আকাশের মতো উজ্জ্বল হাসি। কিন্তু হঠাৎ করে কোথা থেকে যেন হাজির হয়েছে নতুন ভিলেন। গত সপ্তাহ জুড়ে দিল্লি (Delhi) ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দাপট দেখাচ্ছেন বরুণদেব। অঝোর বৃষ্টিতে তাই বেজায় বেকায়দায় রাজধানী এলাকার পটুয়া থেকে শুরু করে পুজো উদ্যোক্তা সকলে। বৃষ্টির বাধা কাটিয়ে এখন মা দুর্গাকে মণ্ডপে পৌঁছে দেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দিল্লির মিনি পশ্চিমবঙ্গ, চিত্তরঞ্জন পার্কের দুই প্রখ্যাত ও ব্যস্ত পটুয়া গোবিন্দ পাল ও মানিক পাল। এই দু’জনের স্টুডিওয় ২০১৯ সাল পর্যন্ত তৈরি হত শতাধিক প্রতিমা। দু’বছর ধরে কোভিডের ফাঁস কাটিয়ে এবার দিল্লি, নয়ডা, গ্রেটার নয়ডা, গাজিয়াবাদ, ফরিদাবাদে পুজোর ঢাকে কাঠি পড়েছে ঠিক, কিন্তু স্পনসরশিপ থেকে শুরু করে অন্যান্য বাজেট একধাক্কায় অনেকটা কমে যাওয়ায় এবার বাজার তুলনামূলক খারাপ দুই পালের। বেশিরভাগ পুজো কমিটি তুলনায় ছোট প্রতিমা বানিয়েছে। কেউ আবার পটুয়াদের কাছ থেকে দামই জানতে চাইছেন না। উলটে নিজেদের বাজেট শুনিয়ে বলেছেন, তার মধ্যেই প্রতিমা বানিয়ে দিতে। তা শুনে শুকনো মুখে প্রতিমা তৈরির পারিবারিক নেশা আর দু’বছর চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে সংসার চালানোর হাত থেকে মুক্তির কথা ভেবে কম লাভেই মূর্তি তৈরিতে লেগে পড়েছেন সবাই।
সবই চলছিল ঠিকঠাক। কিন্তু একেবারে লাস্ট ল্যাপে এসে আবার আবির্ভূত নতুন সমস্যা। লাগাতার বৃষ্টির জেরে শুকোচ্ছে না প্রতিমার মাটি। করা যাচ্ছে না রং। সবমিলিয়ে একেবারে নাজেহাল অবস্থা পটুয়াদের। উল্টোদিকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফোন আসছে উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে। সময়মতো প্রতিমাকে প্যান্ডেলে পৌঁছে দেওয়ার তাড়া। নাওয়াখাওয়া ভুলে রাত জেগে করতে হচ্ছে কাজ।
তারই মাঝে বন্ধ হয়ে যাওয়া চন্দ্রলোক সিনেমার স্টুডিওতে মানিক পালের ভাই গোপাল বলছিলেন, “খুব সমস্যায় পড়ে গেছি। কিন্তু কিছু তো করার নেই। ঠাকুর তো নির্দিষ্ট সময়েই ফিনিশ করে দিতে হবে। কীভাবে রাত জেগে জেগে কাজ করছি না দেখলে বুঝবেন না।” গোবিন্দ পাল বলছিলেন, “কাঁচামালের দাম বাড়ছে। অথচ কমিটিগুলো বলছে বাজেট নেই। ওরাই বা কী করবে? স্পনসরশিপ আসছে কম। যার রেশ পরছে সবের উপর। তবে মন্দের ভাল হল, দু’বছর বাদে চাকাটা অন্তত গড়াল।”
দু’বছর থমকে যাওয়া চাকা গড়ানোতেই সুদিন দেখছেন প্রত্যেকে। অপেক্ষা শুধু ধীরে ধীরে টপ গিয়ারে ওঠার। দুগ্গা মায়ের কাছে সেই প্রার্থনাই করছেন প্রত্যেকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.