ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: গঙ্গা এখন বৈদিকযুগের পূণ্যতোয়া। আটবছরে ‘নির্মল গঙ্গা’ প্রকল্পে কেন্দ্রের কোষাগার থেকে খরচ হয়েছে অন্তত সাড়ে সাতহাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বরাদ্দ ছিল প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। দীর্ঘমেয়াদি এই প্রকল্পে কতটা দূষণ কমেছে তা নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে। তবে টানা সাতাশ দিন লকডাউনের জেরে গঙ্গা ফিরে পেয়েছে হারানো নির্মলতা।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। কিন্তু সত্ত্বেও স্বচ্ছতা ফেরানো যায়নি গঙ্গার রূপে। এক ঝটকায় সাতাশ দিনের লকডাউন সেই মলিনতা কাটিয়ে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে তার উৎস লগ্নে। কারখানা, শিল্পতালুকগুলি বন্ধ। বন্ধ রয়েছে মানুষের নিত্যদিনের ব্যবহার। ফলে কমে গেছে দূষণের পরিমাণ। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকদের একাংশের অভিমত, ২৫ মার্চ থেকে টানা সাতাশদিন লকডাউনের ফলে গঙ্গার জল এখন অনেকটাই জীবানুমুক্ত। আরও বেশ কিছুদিন লকডাউন চললে গঙ্গার জল আঁজলা ভরে খাওয়াও যাবে। তবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কল্যাণ রুদ্রের কথায়, “টানা লকডাউনের ফলে পশ্চিমবঙ্গ-সহ যে পাঁচটি রাজ্যের উপর দিয়ে গঙ্গা বয়ে গিয়েছে সেখানেই কলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়ার প্রাদুর্ভাবও অনেকটাই কমেছে। তবে গঙ্গার জল সরাসরি পানযোগ্য হতে আরও বেশ কিছুদিন লকডাউনের প্রয়োজন।”
এখন দেখা যাক টানা সাতাশ দিন লকডাউনের পর গঙ্গার জলে কতটা দূষণ মুক্ত হয়েছে? কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, করোনা আবহে লকডাউনের জেরে গঙ্গার জলের পিএইচ (pH) ভ্যালু৬-৯ মিলিগ্রামের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট, ডায়মন্ডহারবার, ফারাক্কা থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করে দেকা হয় জলের মধ্য দূষণের পরিমাণ কতটা কমেছে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে লকডাউনের আগে গঙ্গার জলে প্রতিদিন গঙ্গার দলে ১১৮টি বড় শহরের প্রায় ছয়শো কেটি লিটার বর্জ্য-সহ জল এসে মিশত। এখন তা সম্পূর্ণ বন্ধ। তবে এখন তা বন্ধ থাকায় দূষণের মাত্রা কমেছে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক শীর্ষকর্তা জানান, লকডাউন থেকে আমাদের শিখতে আরও কী কী উপায়ে গঙ্গাকে দূষণ মুক্ত করা যায়।
তবে চিন্তার বিষয় হল লকডাউন উঠে গেলে ফের গঙ্গায় বাড়বে দূষণের মাত্রা। প্রতিটি বড় শহরের বর্জ্য এসে মিশবে গঙ্গার জলে। বস্তুত, গঙ্গার জলের ৮০ শতাংশ দূষিত হয় গৃহস্থালির দূষিত জলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.