সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘জায়ান্ট-কিলার’। ‘দল-বদলু’। আর এখন ‘বিতর্কের অন্য নাম’।
তিনি হরিয়ানার মহেন্দ্রগড়ের বিজেপি সাংসদ ধরমবীর সিং (Dharambir Singh)।
‘লিভ-ইন’ তথা একত্রবাসের বিরুদ্ধে সরব হয়ে সম্প্রতি তিনি সংবাদ-শিরোনামে। বৃহস্পতিবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে তাঁর একটি দাবি হুলুস্থুল বাঁধিয়েছে। সাংসদ বলেছেন, ‘লিভ ইন’ (Live In) একটি বিপজ্জনক ব্যধি। এর প্রকোপে ভারতীয় সমাজ-সভ্যতা-সংস্কৃতি ধ্বংসের মুখে। তাই, গোত্রে ‘পশ্চিমী’ এই জটিল ‘অসুখ’-এর বিরুদ্ধে লড়তে অবিলম্বে আইন চালু হওয়া দরকার। নচেৎ এ দেশে হাজার হাজার ‘শ্রদ্ধা ওয়ালকার’কে খুন করবে আফতাব পুনাওয়ালারা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ‘লিভ ইন’ নিয়ে সংসদে এহেন মন্তব্যে বিতর্কের ঝড় তুলে দেওয়া ধরমবীর কিন্তু রাজনীতির জগতে একজন ‘জায়ান্ট-কিলার’।
একার দাপটেই সামাল দিয়েছেন জীবনের বহু ঝড়। ঠিক তাঁর নামের মতো। বিজেপির এই নেতার রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই বর্ণময়। তবে গোড়া থেকে কিন্তু পদ্ম-পন্থী ছিলেন না ধরমবীর। উল্টে, ছিলেন হাত শিবিরের অনুগত সৈনিক। বলা ভাল, হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুডার ‘ডান হাত’ ছিলেন ধরমবীর। একার ক্যারিশমায় পরাস্ত করেছিলেন হরিয়ানার প্রখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারের তিন-তিনটি প্রজন্মকে। অথচ, ২০১৪ লোকসভা ভোটের সময় থেকে ছবিটা বদলে যায়।
কেমন ছিল তাঁর সেই রাজনৈতিক যাত্রা? লোকসভায় ‘প্রোমোশন’ পাওয়ার আগে চার বার হরিয়ানা বিধানসভা ভোটে বাজিমাত করেছেন ধরমবীর। এর মধ্যে তিন বার কংগ্রেসের টিকিটে। গোটা ভিওয়ানিজুড়ে তাঁর নাম বিখ্যাত ছিল ‘বংশী লাল’ পরিবারের চরম শত্রু হিসাবে। বংশী লাল ছিলেন ছিলেন হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর পরিবারের অনেকেই সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই পরিবারের তিন-তিনটি প্রজন্মকে ভোটে হারান ধরমবীর। প্রথম বার বংশী লালকে।
সময়টা ১৯৮৭-র বিধানসভা ভোট। লোক দলের টিকিটে সেবার লড়েছিলেন ধরমবীর। ২০০০ সালে কংগ্রেসের প্রতীক নিয়ে লড়ে লালের পরিবার থেকে প্রার্থী হওয়া সুরিন্দর সিংকে পরাস্ত করেন ধরমবীর। সুরিন্দর বংশী লালের পুত্র। আবার ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের বিধানসভা ভোটে ভিওয়ানি-মহেন্দ্রগড় কেন্দ্র থেকে লালেরই নাতনি শ্রুতি চৌধুরীকে হারান ধরমবীর। সময় যত এগোতে থাকে, ততই রাজ্যের হাত শিবিরে প্রাধান্য বাড়তে থাকে ধরমবীরের। হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুডার অন্যতম প্রধান সহযোগী হয়ে ওঠেন তিনি। সে সময় রাজ্যে কংগ্রেসের তৃতীয় বড় নাম ছিলেন তিনি, রাও ইন্দরজিৎ সিং এবং বিনোদ শর্মার পরেই।
২০০৫ সালে যখন ভূপিন্দর সিং হুডা প্রথম বার হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী হন, ধরমবীর পান ‘চিফ পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি’র দায়িত্ব। ২০০৯ সাল পর্যন্ত সেই পদ ছিল তাঁরই হাতে। ২০০৯ বিধানসভা ভোটে ধরমবীর লড়েন সোহনা থেকে, কংগ্রেসের টিকিটে। ফের হুডা তাঁকে একই পদ দেন। হুডার দ্বিতীয় দফার মুখ্যমন্ত্রিত্বে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই পদেই ছিলেন ধরমবীর।
অথচ ওই বছরই ছন্দপতন। কংগ্রেস টিকিট দিতে অস্বীকার করে ধরমবীরকে। বদলে বেছে নেয় শ্রুতি চৌধুরীকে। প্রতিবাদে কংগ্রেস ছাড়েন ধরমবীর, হাত ধরেন গেরুয়া শিবিরের। বিজেপি তাঁকে তাঁর কাঙ্খিত আসন থেকেই লড়ার টিকিট দেয়। শ্রুতি চৌধুরীকে হারিয়ে জয়ের ধারা বজায় রাখেন ধরমবীর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.