প্রাক্তন ব্রিগেডিয়ার চন্দ্রকান্ত সুদ
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একবার নয়, সাহসিকতার জন্য দু’বার সেনা বীরত্বের অন্যতম বড় সম্মান গ্যালান্ট্রি পেয়েছিলেন তিনি। কিছুদিন আগেই সহকর্মীদের বলেছিলেন, ‘আমার লক্ষ্য লস্কর কম্যান্ডার হায়দরকে নিকেশ করা।’’ লক্ষ্য তিনি পূরণ করলেনও। দেশের জন্য আত্মত্যাগের বিনিময়ে। কাশ্মীরের হান্দেয়ারায় জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত কর্নেল আশুতোষ শর্মার এই সাহসিকতাকে আজ কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা দেশ। অসম সাহসের পরিচয় দিয়ে একা হাতে জঙ্গি দমন করে দু’বার সহকর্মীদের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন তিনি। সাহসিকতার পুরস্কার পেয়েছিলেন। কিন্তু, এবার নিজের জীবনের বিনিময়ে তেরঙ্গার সম্মান আরও বাড়িয়ে গেলেন কর্নেল আশুতোষ শর্মা।
চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (CDS) বিপিন রাওয়াত কর্নেল আশুতোষের আত্মবলিদানকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। তাঁর আত্মত্যাগ বিফলে যাবে না বলেও মন্তব্য করেছেন। এদিকে, সেনার তরফে জানানো হয়েছে, ২১ নম্বর রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের কম্যান্ডিং অফিসার কর্নেল আশুতোষ গার্ড রেজিমেন্টে ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরে জঙ্গি দমনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। বহুবার প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। একবার কাপড়ের নিচে গ্রেনেড লুকিয়ে এক জঙ্গিকে তাঁর সহকর্মীদের দিকে ছুটে আসতে দেখে একদম সামনে থেকে গুলি করে তাকে খতম করেন কর্নেল আশুতোষ।
তাঁর এক সহকর্মী বলেন, ‘কিছুদিন আগেই কর্নেল স্যার বলেছিলেন, তাঁর একমাত্র লক্ষ্য লস্কর কম্যান্ডার হায়দরকে যেভাবেই হোক খতম করা। স্যার নিজের কথা রাখলেন। কিন্তু, নিজেকে বাঁচাতে পারলেন না।’ ২০১৮ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসে জীবনের প্রথম গ্যালান্ট্রি সম্মান পান আশুতোষ। ওই সময় তিনি ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও ২১ নম্বর রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড। উপত্যকায় এক জঙ্গি দমন অভিযানে সাফল্য মেলার পরেই এই সম্মান দেওয়া হয় তাঁকে। দ্বিতীয় গ্যালান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন গত বছর ২০১৯ সালে। আরও একটি দুর্ধর্ষ অভিযানে জঙ্গিদের নিকেশ করে এই সম্মান পেয়েছিলেন কর্নেল আশুতোষ।
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পাঁচ বছরে আশুতোষ শর্মাই প্রথম কর্নেল র্যাঙ্কের কমান্ডিং অফিসার যিনি জঙ্গিদের গুলিতে শহিদ হলেন। তাঁর স্ত্রী ও ১২ বছরের মেয়ে আছেন। আশুতোষের স্ত্রী পল্লবী জানিয়েছেন, ‘তাঁর স্বামী প্রায়ই বলতেন, আমাকে দেড় হাজার মানুষের খেয়াল রাখতে হবে। পরিবারের দিকে তুমি নজর রাখবে।’
কর্নেল আশুতোষের সঙ্গেই শহিদ হয়েছেন তাঁর অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ৩১ বছরের ঝকঝকে যুবক মেজর অনুজ সুদও। গোটা দেশ যখন তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকাহত, তখন ছেলের আত্মবলিদানের কথা স্মরণ করে গর্বে বুক ফুলে উঠছে বাবা চন্দ্রকান্ত সুদের। রবিবার সকালে হরিয়ানার পাঁচকুল্লা জেলার পিনজোড় ব্লকের অমরাবতীর এনক্লেভের ফ্ল্যাটে এই খবর এসে পৌঁছয়। আর তারপর থেকেই ছেলের জন্য তাঁর মাথা উঁচু হয়ে গিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সন্তান হারানোর ভয়াবহ যন্ত্রণাকে সহ্য করে ভারতীয় সেনার ওই অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার বলেন, ‘বড় স্বার্থত্যাগ করেছে আমার ছেলে। দেশসেবার যে শপথ ও নিয়েছিল নিজের প্রাণের বিনিময়ে তা পূরণ করেছে। শুধু কষ্ট হচ্ছে বৌমার কথা ভেবে। মাত্র তিন মাস আগেই তো বিয়ে হয়েছিল ওদের।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.