বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, মাদুরাই: রাজনীতিতে আনকোরা হয়েও নেতা ধরে অনায়াসে ঢুকে পড়ছে পার্টির কমিটিতে। শৃঙ্খলাবদ্ধ পার্টিতে এই ধরনের প্রবণতা ভবিষ্যতে মারাত্মক হতে পারে। পার্টির অভ্যন্তরে গণতন্ত্র বা শৃঙ্খলা না থাকলেই এমন ঘটনা ঘটে। মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, কনীনিকা ঘোষ বা সমন পাঠকদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্তিতে বেশকিছু প্রশ্ন ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সিপিএমে। সিনিয়রদের টপকে কেন জুনিয়রদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে ক্ষোভ চরমে উঠেছে।
রবিবারই তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে শেষ হয়েছে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস। সেখানে মীনাক্ষী সহ পাঁচজনকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পাঁচজনের অধিকাংশই এখনও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নন। জেলা ও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী বা পার্টির পলিটব্যুরো নীতি নির্ধারক কমিটি না হলেও সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। জেলা, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে সম্পাদকমণ্ডলী ও পার্টির পলিটব্যুরো। নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবিকে ঘিরে উচ্ছ্বাস সিপিএম কর্মীদের। সোমবার তিরুবনন্তপুরমে।
সেক্ষেত্রে জেলা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ও অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন সদস্যরাই সম্পাদকমণ্ডলী বা পলিটব্যুরোতে জায়গা পেয়ে থাকেন। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই পার্টির অভ্যন্তরে নিয়ম ও শৃঙ্খলা জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে বলে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে সিপিএমের একাংশ। তাঁদের ক্ষোভের কারণ, পার্টির মধ্যে কোনওরকম আলোচনা ছাড়াই মীনাক্ষী, কনীনিকা, সৈয়দ হোসেন বা সমন পাঠকদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠান হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত পার্টির গঠনতন্ত্র মেনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেওয়া হয়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছে একতরফা। নেতা ধরে কমিটিতে জায়গা পাওয়া দক্ষিণপন্থী দলে হয়ে থাকে। বামপন্থী কোনও দলে এই ধরনের প্রবণতা সাধারণত দেখা যায় না বলে অভিমত পার্টির সিংহভাগ অংশের। এরকম চলতে থাকলে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নয়, নেতা ধরে পার্টির কমিটিতে জায়গা করে নেওয়ার প্রবণতা বাড়বে। তবে এই রোগ নতুন নয়, ক্ষমতায় থাকাকালীনও নেতা ধরে কমিটিতে জায়গা করে নেওয়া হতো বলে জানান পার্টির বঞ্চিত এই অংশ। কোন যুক্তিতে পলাশ দাস, কল্লোল মজুমদার, গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বা তাপস সিনহাদের টপকে এঁদেরকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা করে দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সাধারণত পার্টি কংগ্রেসের পর শীর্ষনেতৃত্বের উপস্থিতিতে রাজ্য কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে তিনবছরের জন্য সম্পাদকমণ্ডলী গঠন হয়ে থাকে। চলতি মাসেই রাজ্য কমিটির বৈঠক হবে বলে সিপিএম সূত্রে খবর। সেখানে নয়া সম্পাদকমণ্ডলীতে মীনাক্ষী, কনীনিকা বা সমন পাঠকদের অন্তর্ভুক্ত করা হব। তবে আগে কেন্দ্রীয় কমিটি ও পরে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে জায়গা দেওয়া পার্টিতে এক নতুন পদ্ধতির জন্ম দিল বলে মনে করছেন পার্টি কংগ্রেসে যোগ দিতে আসা বাংলার প্রতিনিধিরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.