নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি : দেশে করোনা (Coronavirus) পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দেশে শেষবার দৈনিক করোনা সংক্রমণ নব্বই হাজারের গণ্ডি পার করেছিল। শুক্রবার দৈনিক করোনা সংক্রমণ সেই সংখ্যার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গিয়ে ৮৯ হাজার ১২৯ হয়েছে। দৈনিক সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাও। এরই সঙ্গে কেন্দ্রের উদ্বেগ যা আরও বাড়াচ্ছে তা হল করোনার টিকাকরণ (COVID vaccine)। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফ থেকে শনিবার সকালে যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে তাতে উল্লেখ রয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ৭১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের অক্টোবর মাসের ২১ তারিখের করোনায় মৃত্যু হয়েছিল ৭১৭ জনের। এতদিন পরে আবার মৃতের সংখ্যা সাতশো পার করল।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়লেও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা কেন্দ্রকে ক্ষুব্ধ করেছে। শনিবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, যেসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকার জন্য নাম নথিভুক্ত করেননি, তাঁরা আর তা করতে পারবেন না। দেশে এখন ৪৫ ঊর্ধ্বদের টিকাদানের কর্মসূচি চলছে। এই কর্মসূচিতে গতি আনতে চায় কেন্দ্র। সেই কারণে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আর সময় নষ্ট করতে চায় না সরকার। প্রথম দফাতেই প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা হিসাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকাদান করা হয়েছিল সরকারের তরফে। গোটা দেশে প্রায় ৮৯ লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী টিকা গ্রহণ করেন। কিন্তু বহু স্বাস্থ্যকর্মী তখন টিকা নিতে অনীহা দেখান। এঁদের মধ্যে অনেকে কোউইন অ্যাপে নাম নথিভুক্ত করে রেখেছেন। যাঁদের নাম নথিভুক্ত রয়েছে, তাঁরা টিকা পাবেন। কিন্তু যেসব স্বাস্থ্যকর্মীর নাম নথিভুক্ত করা নেই, তাঁদের আর টিকা গ্রহণের সুযোগ নেই।
দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই নিরিখেই একক মহারাষ্ট্র অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে রেখেছে। শুক্রবার শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রেই ৪৯ হাজার ৪৪৭ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে। করোনায় প্রাণ হারিয়েছে ২২৭জন। এর মধ্যে মুম্বইতেই আক্রান্তের সংখ্যা ন’হাজারের বেশি। যা অতিমারীকালে এই প্রথম। পাশাপাশি পাঞ্জাব, কর্নাটক, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, দিল্লি এবং ভোটমুখী রাজ্য কেরল ও তামিলনাডুতেও করোনা সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। দেশের মোট করোনা সংক্রমণ এবং মৃতু্যর ৯০ শতাংশই এই ১১টি রাজ্যই দখল করে রয়েছে। রাজধানী দিল্লিতেই আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার পার করেছে।উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ অবস্থা ছত্তিশগড়েরও।
এই নতুন সংক্রমণ ঠেকাতে টিকাকরণকেই হাতিয়ার করতে চাইছে কেন্দ্র। গোটা এপ্রিল জুড়ে প্রতিদিন টিকাকরণ চালাতে হবে বলে কেন্দ্রের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে, শুধুমাত্র টিকাকরণকে হাতিয়ার করে সংক্রমণ কতটা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে সে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে। করোনা টিকাকরণের ক্ষেত্রে ভারত যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে তা পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। দেশে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১ কোটি ১৩ লক্ষ মানুষকে টিকার দুটি ডোজ দেওয়া সম্ভবপর হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। দেশের জনসংখ্যার নিরিখে যা এক শতাংশেরও কম। যেখানে সেশেলসে ৩৯ শতাংশ, আমেরিকায় ১৭ শতাংশ এবং ইজরায়েলের ৫৯ শতাংশ মানুষের টিকাকরণের পুরো ডোজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
টিকাকরণে গতি আনতে সরকার ৪৫-এর বেশি সকলকেই টিকার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার মাত্র ৩৪ কোটি মানুষই করোনা টিকা পাবেন। বাকি মানুষ, যাদের সংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি তারা কবে টিকা পাবে বা খোলা বাজার থেকে মানুষ কবে টিকা কিনতে পারবে, তা এখনও অনিশ্চিত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.