নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: দ্বিতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার জন্য নরেন্দ্র মোদিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দু’দিন আগেই ফোন করেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সেই ফোনালাপেই উপমহাদেশে সন্ত্রাস রুখতে ইমরানকে বার্তা দিয়েছিলেন মোদি। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার আগে ইমরানের সঙ্গে মোদির একপ্রকার কড়া সুরে কথা নিয়ে জল্পনা শুরু হয় কূটনৈতিক মহলে, পাকিস্তান ইস্যুতে কি তবে আরও কড়া অবস্থান নিতে চলেছে মোদি-২ সরকার? সেই আলোচনাই যে সোমবার দিনের শেষে সত্যি হয়ে উঠবে তা তখন অনেকেরই ভাবনার মধ্যে আসেনি। প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিতের তালিকা থেকে বাদ পড়ল পাকিস্তান। আপাতত আমন্ত্রিতদের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে নেই পাক প্রধানমন্ত্রী। অথচ পাঁচ বছর আগে ২০১৪ সালের ২৬ মে মোদির প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের সময়ে রাষ্ট্রপতিভবনে হাজির ছিলেন তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।
লোকসভা নির্বাচনের মাসখানেক আগেই পুলওয়ামার জঙ্গি হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাক সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছিল। বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযান নিয়েও দুই দেশের মধ্যে চাপানউতোর চলেছিল বিস্তর। এই সবকিছুর জেরেই শপথ গ্রহণে আমন্ত্রিতের তালিকা থেকে পাকিস্তান তথা ইমরানের নাম বাদ পড়ল বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, আগামী দিনে পাকিস্তানের জন্য ভারত যে কড়া মনোভাব নিয়েই চলবে সেই বার্তাই আমন্ত্রিতের তালিকা থেকে পাকিস্তানকে ছেঁটে ফেলে দিয়ে স্পষ্টভাবে দিয়ে দেওয়া হল। আবার পুলওয়ামা ও তার পরে বালাকোটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে লোকসভা নির্বাচনে জাতীয়তাবাদকে ইস্যু করে তুলছিল বিজেপি। তাই নির্বাচনের পরে পরেই ইমরানকে আমন্ত্রণ জানালে বিরোধীরা প্রথম থেকেই মোদি সরকারের দিকে আঙুল তোলার সুযোগ পেয়ে যাবে, সেই হিসেবকেও বিজেপি মাথায় রেখেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। শুধু বিরোধীরাই নয়, ইমরানের সঙ্গে সখ্যর বার্তা গেলে দেশের সাধারণ মানুষের মনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, সেই সম্ভাবনাকেও খারিজ করে দেওয়া যায় না। এই সমস্ত কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক জটিল অঙ্ক হিসেব নিকেশ করেই পাকিস্তানের থেকে দূরত্ব বজায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বললে ভুল হবে না। পাকিস্তান নিয়ে মোদি সরকারের যে ঘোষিত নীতি, সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না-সেই রাস্তাতেই যে নয়াদিল্লি অবিচল রয়েছে, ইসলামাবাদকে বাদ দিয়ে তাতেই মোদি আবার সিলমোহর দিলেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
সোমবার বিদেশমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ‘বে অফ বেঙ্গল ইনিসিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক কো-অপারেশন (বিমস্টেক)-এর অন্তর্গত দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের খাঁড়ির সঙ্গে যুক্ত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশ, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, তাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটানের রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর বাইরে আরও কিছু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদেরও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে, সূত্রের খবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শপথ অনুষ্ঠানে আসতে পারবেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.