সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিগড়ে গিয়েছে বিশ্বব্যাপী জল-চক্রের ভারসাম্য। মানব ইতিহাসে এই প্রথম ঘটেছে এমন ঘটনা। ফলে, অচিরেই তীব্র জলসংকটের(Global Water Scarcity) মুখে পড়তে চলেছে বিশ্ব। সবচেয়ে বেশি এই ‘ক্ষতি’র মাশুল গুনতে হবে বিশ্বের সেই সমস্ত দেশগুলিকে, যেগুলি হয় কৃষিপ্রধান, আর নয় সেখানে জনঘনত্ব বেশি। তালিকায় রয়েছে ভারত, চিন এবং ইউরোপের বেশ কিছু দেশ। সম্প্রতি প্রকাশিত গ্লোবাল কমিশন অন দ্য ইকোনমিক্স অফ ওয়াটার-এর একটি রিপোর্ট থেকেই জানা গিয়েছে এমন ভয়ংকর সত্য।
শুধু তাই নয়, আরও জানা গিয়েছে যে, বিশ্বব্যপী জলচক্রের সাম্য নষ্ট হওয়ার এই ঘটনা কিন্তু একদিনে ঘটেনি। এর সূত্রপাত হয়েছিল বহু আগে। এই নিয়ে পরিবেশবিদরা সময়ে সময়ে, নানাভাবে সতর্কও করেছেন বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলিকে। কিন্তু সেই হুঁশিয়ারি এড়িয়ে গিয়েছে প্রায় সব দেশই। ফলত, কমতে কমতে বর্তমানে প্রায় তলানিতে এসে পৌঁছেছে ভূ-গর্ভস্থ জলস্তর। রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, আর যতটুকু জল সঞ্চিত আছে, তা অত্যন্ত অস্থিতিশীল এবং বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ এবং অর্থনীতি-নির্ভর দেশগুলিতে তা ক্রমশ আরও কমছে।
উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে উত্তর-পশ্চিম ভারত, উত্তর-পূর্ব চিন এবং ইউরোপের দক্ষিণ এবং পূর্বাংশের দেশগুলির কথা। ঝুঁকি এই সব অংশেই বেশি বলে অভিহিত করা হয়েছে রিপোর্টে। আরও বলা হয়েছে যে, বিশ্বের দরিদ্রতম দেশের জনসংখ্যার অন্তত ১০ শতাংশ, পুকুর-নদী-নালা-খাল-বিলে সঞ্চিত জলরাশির উপর নির্ভর করে, যেগুলির ৭০ শতাংশই বার্ষিক বৃষ্টি-নির্ভর।
বনচ্ছেদনের ফলে এমনিতেই জল সংকটের সমস্যা বাড়ছে। উষ্ণায়নের জেরে গরমের সময় বহু দেশে বর্তমানে জল সংকট চরম চেহারা নেয়। তার উপর যে সমস্ত জায়গায় সেচের কাজ বেশি হারে হচ্ছে, সেখানে অন্যান্য জায়গার তুলনায় আরও বেশি দ্রুত কমছে ভূ-গর্ভস্থ জলের পরিমাণ। এইভাবেই চলতে থাকলে তীব্র যে জল সংকট দেখা দেবে, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে বিশ্বব্যাপী দানাশস্যের উৎপাদন।
রিপোর্ট অনুযায়ী, গোটা বিশ্বের সমস্ত দেশের স্বার্থে তাই অবিলম্বে উচিত, এই সমস্যার নিরসনের রাস্তা খোঁজা। জল সংকট সমাধান করে, সঞ্চিত জলের পরিমাণ প্রাকৃতিকভাবে বৃদ্ধি করার জন্য নতুন এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আবিষ্কার করা। বিশ্বের জলচক্রের গতি যাতে সুগম হয়, বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল থেকে তাকে যাতে রক্ষা করা যায়, রিপোর্টে অতি দ্রুত তার পথের সন্ধান পেতে প্রভাবশালী দেশগুলিকে আলোচনার টেবিলে আসার ডাকও দেওয়া হয়েছে রিপোর্টে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বে চলচক্রের এই পরিবর্তন প্রসঙ্গে আগে থেকেই বার বার সতর্ক করে আসছেন বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক সময় পরিবেশগত কারণে একাধিকবার শঙ্কার কথা শোনা গিয়েছে। এবার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন। সন্দেহ নেই শুধু ভারত বা চিন নয়, পরিবেশের এই পরিবর্তন প্রসঙ্গে এখনই সতর্ক না হলে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.