সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কথায় বলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু। গঙ্গাস্নানে সব পাপ ধুয়ে যায়। শরীরের সঙ্গে পবিত্র হয় মনও। এই বিশ্বাসেই লক্ষ লক্ষ হিন্দু গঙ্গাস্নানে নিজেকে শুদ্ধ করে নিতে চান। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা এক্কেবারে উলটো। গঙ্গাস্নানে আপনার শরীরে অজান্তেই ঢুকছে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া। যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর।
২০১৭ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, গঙ্গায় স্নান করলে শরীরে ৫ থেকে ১৩ গুন বেশি ফেসিয়াল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে। ১০০ মিলিমিটার জলে কলিফর্মের মাত্রা ৫০০ এমপিএন থাকলে তাকে স্বাভাবিকই ধরা হয়। সেখানে গঙ্গার জলে সেই পরিমাণ আড়াই হাজার এমপিএন। তাই গঙ্গার জলে স্নান করা বিপজ্জনক বলেই জানানো হয়েছে। কিন্তু কেন এই পরিমাণ ব্যাকটেরিয়ায় ভরেছে গঙ্গা? আসলে গঙ্গাজলে স্নান ছাড়াও আরও নানা কাজকর্ম করে থাকেন সাধারণ মানুষ। কোথাও মূর্তি বিসর্জন দেওয়া হয় তো কোথাও কারখানার বর্জ্যপদার্থ ও তেল এসে মেশে গঙ্গায়। যার ফলে দিনের পর দিন গঙ্গায় দূষণের মাত্রা বাড়ছে। সরকার নানাভাবে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করে চলেছে। গঙ্গায় আবর্জনা ফেললে মোটা অঙ্কের জরিমানার কথাও ঘোষণা করা আছে। কিন্তু আইনের ফাঁক গলেই নিত্যদিনের সব কাজ হয়ে চলেছে।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে, এলাহাবাদের মতো তীর্থস্থানে গঙ্গাস্নানে তীর্থযাত্রীদের ভিড় বেশি হয়। আর সেখানেই বেশি দূষিত হচ্ছে গঙ্গা। উত্তরপ্রদেশের কানপুর, এলাহাবাদ, বারাণসীতে দূষণের পরিমাণ তুলনামূলক অনেক বেশি। বারাণসীর মালব্য সেতুর কাছে কলিফর্মের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৯-২০ গুন বেশি। বিহারের ছবিটাও একইরকম। গত বছর বক্সারের পানীয় জলে ৬৪০০ গুন বেশি কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া ধরা পড়েছিল। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী নয় এ রাজ্যও। ২০১৬ সাল থেকেই গঙ্গার জলে স্বাভাবিকের তুলনায় ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেশি দেখা গিয়েছিল। যা বর্তমানে আরও বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড জানাচ্ছে, বর্ষায় জলের স্রোত বাড়লে কলিফর্মের মাত্রার তারতম্য ঘটে। তবে দূষণ এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে যমুনার মতো শান্ত নদী সারা বছরই ব্যাকটেরিয়ায় ভরপুর থাকে। বিহারের জনপ্রিয় স্বেচ্ছাসেবক আর কে সিনহা অবশ্য এসব তথ্য মানতে নারাজ। তিনি বলছেন, “গঙ্গাকে পরিষ্কার রাখার অভিযান অনেকদিনই শুরু হয়েছে। তাই বোর্ডের এই তথ্যে কতটা সত্যতা রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাছাড়া আর কারও কাছে এসব তথ্য নেই। তাই বোর্ডকে পালটা চ্যালেঞ্জও জানানো যাবে না।” তবে এসব সমীক্ষা ও রিপোর্ট হিন্দুদের গঙ্গাস্নানে কতটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.