স্টাফ রিপোর্টার, নয়াদিল্লি: বারবার বলা সত্ত্বেও স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপের (এসপিজি) নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশ মানছেন না। এই কারণ দেখিয়ে গান্ধী পরিবারের ‘হাই প্রোফাইল’ তিন সদস্য সোনিয়া, রাহুল ও প্রিয়াঙ্কার এসপিজি নিরাপত্তা তুলে নিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এখন থেকে তাঁরা পাবেন জেড প্লাস নিরাপত্তা।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেছে কংগ্রেস। দলের কর্মীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বাড়ির সামনে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। গান্ধী পরিবারের সদস্যদের উপর থেকে এসপিজি নিরাপত্তা প্রত্যাহার হতে পারে বলে এক মাস আগেই গুঞ্জন ছড়িয়েছিল রাজধানীতে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-সহ কংগ্রেসের শীর্ষনেতারা এই ব্যাপারে চিঠি লেখেন ক্যাবিনেট সচিবকে। যাঁর অধীনেই এসপিজি নিরাপত্তার বিষয়টি। সেই চিঠিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ইন্দিরা গান্ধী ও পরে আরেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর মৃত্যু হয় উগ্রপন্থীদের হাতে। এই পরিবারের সঙ্গে অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে, তাছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও বারবার তিনজনের প্রাণনাশের আশঙ্কার কথা বলেছে। তাই কোনও পরিস্থিতিতেই যেন তাঁদের নিরাপত্তা শিথিল করা না হয়। যদিও এর কোনও জবাব আসেনি বলেই দাবি কংগ্রেসের। এরপর এদিনের সিদ্ধান্ত। যার জেরে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদে মুখর হন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।
কংগ্রেসের দাবি, এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে একটি চিঠি আসে গান্ধী পরিবারের তিন সদস্যের কাছে। যেখানে অতীতের বিভিন্ন ঘটনার খতিয়ান তুলে দেখানো হয়েছে মোট কতবার এসপিজি-র নির্দেশ উপেক্ষা করে বুলেট প্রুফ গাড়ি ছাড়া যাতায়াত করেছেন এই তিন নেতা। অভিযোগের তালিকায় আছে বিদেশ সফরে এসপিজি নিরাপত্তা না নেওয়ার কথাও। বারবার কথা না শোনায় এসপিজি-কে গুরুত্ব দিচ্ছেন না এই তিনজন, এমনটাই মনে করছে এসপিজি তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তাই তাঁদের নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত। গত আগস্টে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়েরও এসপিজি নিরাপত্তা তুলে নেয় কেন্দ্র।
যদিও কংগ্রেসের দাবি আদৌ এসপিজি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে পড়ে না। তাই এই নিয়ে আইন অনুযায়ী তারা কোনও সিদ্ধান্ত নিতেই পারে না। এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে কংগ্রেসের অন্যতম প্রবীণ নেতা কে সি বেণুগোপাল ও রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেন, “নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ ব্যক্তিগত প্রতিশোধ এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় অন্ধ হয়ে গিয়েছেন। ওঁরা আজ গণতান্ত্রিক পরম্পরাকে হত্যা করলেন।” তাঁদের কথায় বারবার উঠে আসে ইন্দিরা ও রাজীব–হত্যার কথা। বলেন, “প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী এই কারণেই ইন্দিরা ও রাজীবের পরিবারকে এসপিজি নিরাপত্তা দেন। আরেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভি পি সিংও এই ভুল করেছিলেন। দেশকে তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়েছিল রাজীব গান্ধীকে হারিয়ে।”
এসপিজি নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার খবরে রাহুল গান্ধী এদিন টুইটারে লিখেছেন, ‘বছরের পর বছর যারা আমাকে ও আমার পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’ বাহিনীর সবার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎও কামনা করেছেন কংগ্রেস সাংসদ।
কংগ্রেস নেতারা যাই বলুন, যে তথ্য এসপিজি মারফত প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯২ বার বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করেননি রাহুল গান্ধী। সোনিয়া গান্ধীর ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৫০। যার মধ্যে একবার গাড়ি চালকের আসনে ছিলেন রাহুল নিজে। প্রিয়াঙ্কা এই সময়ে ৪০৩ বার বুলেটপ্রুফ গাড়ি না নিয়েই বেরিয়ে পড়েন রাজপথে। সঙ্গে রয়েছে বিদেশভ্রমণের সময় নিরাপত্তা না নেওয়ার প্রবণতাও। বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারে বারবার হুড খোলা গাড়িতে ঘুরে বেড়িয়েছেন রাহুল। একবার অজ্ঞাতপরিচয়দের ছোঁড়া পাথরে আহত হন এসপিজি’র এক পিএসও। এসপিজি-র বক্তব্য, সম্ভবত বারবার এই ধরনের অসহযোগিতা করে তাঁরা এসপিজি নিরাপত্তা নিতে চাইছেন না। এছাড়া নিরাপত্তায় থাকাকালীন নিজেদের মতো পথে বেরিয়ে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় নিতে নারাজ এসপিজি। তাই এই সিদ্ধান্ত।
কংগ্রেসের বক্তব্য, এসপিজি নিরাপত্তা দেওয়া হয় সেই ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কতটা, সেই কথা মাথায় রেখে। গত এক বছরে অন্তত ছ’বার নকশাল, খালিস্তানি উগ্রপন্থী ও ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনের ‘টার্গেটে’ আছেন রাহুল গান্ধী, এই আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তিন গান্ধীর নিরাপত্তা কমাতে পারে কেন্দ্র? নিজেদের বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি জে এস ভার্মার উদ্ধৃতিও তুলে ধরেন কংগ্রেস নেতারা। যেখানে তিনি বলেছেন, “রাজীব গান্ধীকে হত্যার ষড়ষন্ত্র চলছে এই খবর আগে থেকেই গোয়েন্দা বিভাগের কাছে ছিল।” সুরজেওয়ালার বক্তব্য অনুযায়ী প্রাক্তন বিচারপতি বলেছিলেন, রাজীব গান্ধীর হত্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের গাফিলতি ছিল। এবং তা রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির জন্যই হয়েছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.