সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিলতর হচ্ছে। হিংসাত্মক কোটা আন্দোলনে মৃতের সংখ্যা শতাধিক। আহত অসংখ্য। শাসক শিবিরের অভিযোগ, এই ছাত্র আন্দোলনের আড়ালে ষড়যন্ত্রে শামিল বিএনপি ও জামাত-ই-ইসলামি মতো মৌলবাদী বিরোধী গোষ্ঠী। দাবি, ছাত্র আন্দোলনকে নাকি ‘হাইজ্যাক’ করে নিচ্ছে তারা। স্লোগানে ভারতবিরোধী আওয়াজও উঠতে দেখা গিয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কার্যত মুছে ফেলার মধ্যে দিয়েই ভারতের অবদানকে অস্বীকার করতে চায় তারা। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেই উঠে আসছে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা। জন্মের মুহূর্ত থেকেই প্রতিবেশী দেশের পাশেই দাঁড়িয়েছে নয়াদিল্লি। ফিরে আসছে সেই ইতিহাস।
আসলে জামাত বা বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ, বাংলাদেশকে (Bangladesh) এক কট্টরপন্থী ইসলামিক দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায় তারা। এমনকী এর পিছনে পাকিস্তান তথা আইএসআইয়ের মদতও পুরোদমে রয়েছে বলে শোনা যায়। আর সেই অবস্থায় ভারতকে ‘শত্রু’ ও ‘হিন্দু দেশ’ বলে দাগিয়ে দেওয়াই লক্ষ্য জামাত-বিএনপির। কিন্তু জনমানসে ছড়িয়ে থাকা ইতিহাসের শিকড়কে উপড়ে ফেলা সহজ নয়। ১৯৭১ সালের সেই দিনগুলি আজ পাঁচ দশক পিছনে চলে গেলেও একই রকম জ্বলজ্বলে হয়ে রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জনগণকে আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা দেওয়াই কেবল নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া কিংবা বাংলা ও অসমের বহু অঞ্চলে তাদের ঘাঁটি গড়ার অনুমতি দিয়েছিল সেদিনের ইন্দিরা গান্ধী সরকার। বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছিল এই লড়াইয়ের পাশে। এমনকী, এদেশের কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীরাও নিজেদের জড়িয়ে রেখেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে। সর্বোপরি ভারতীয় সেনা সরাসরি অংশ নিয়েছিল যুদ্ধে। যা না হলে শক্তিশালী খান সেনাকে কেবল গেরিলা যুদ্ধে হারানো সম্ভব হত না বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, একাত্তরের সেই পরিস্থিতিতে ভারত তৎকালীন পূর্ববঙ্গকে এক অঙ্গরাজ্য হিসেবে না চেয়ে, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মই দেখতে চেয়েছিল। পরবর্তী সময়েও তাদের দিকে বার বার সাহায্যের হাতই বাড়িয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি। যেমন, বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের হত্যার ষড়যন্ত্রের আঁচ আগেই পেয়েছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। সেই সময় ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে ভারতে সাময়িক ভাবে আশ্রয় নেওয়ার প্রস্তাবও দেন। যদিও মুজিব রাজি হননি। এই ঘটনায় প্রমাণ হয়ে যায়, প্রথম থেকেই ভারত চেয়ে এসেছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ এক ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ হিসেবে থাকুক।
হাল আমলে করোনা পরিস্থিতিতে যখন সংক্রমণের ধাক্কায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশ, তখনও সেদেশের পাশে ছিল ভারত। সেসময় সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি করোনা টিকা ঢাকাকে সরবরাহ করেছিল মোদি সরকার। অন্যদিকে আলু থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীও বাংলাদেশকে বরাবর সরবরাহ করে এসেছে নয়াদিল্লি। গত এপ্রিলেই ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছিল বিএনপি (BNP)। কিন্তু সেই আন্দোলন তুড়ি মেরে উড়িয়ে ভারত থেকেই বাংলাদেশে ১ হাজার ৬৫০ টন পিঁয়াজ পৌঁছে যায়। ইদ তখন একেবারে সামনে। দেশবাসীকে স্বস্তি দিতে ভারত থেকে দ্রুত আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় হাসিনা সরকার। ভারতীয় জিনিস ব্যবহারে আপত্তি জানালেও আলু-পিঁয়াজ আমদানি নিয়ে যদিও একটি শব্দও খরচ করেনি বিএনপি। কিন্তু সেক্ষেত্রে শব্দ না করলেও ‘ইন্ডিয়া আউট’-এর ডাক দিতে দেখা গিয়েছে তাদের।
প্রসঙ্গত, হাসিনা সরকারও কিন্তু পাশে থেকেছে ভারতের। অসমের উলফার জঙ্গি গোষ্ঠী ঘাঁটি গাড়তে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করেছিল। সেই সময় হাসিনা সরকার শক্তহাতে তা দমন করে। এবং শীর্ষ জঙ্গিনেতারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিলে তাদের আটক করে ভারতের হাতেও তুলে দেয় বাংলাদেশ প্রশাসন। আবার হাসিনাকে এও বলতে শোনা গিয়েছে, তিনি চান তিস্তা চুক্তি চিন নয়, ভারতের সঙ্গেই হোক ঢাকার।
কিন্তু হাসিনা সরকার ভারতের ‘বন্ধু’ থাকলেও বিরোধী বিএনপি-জামাতের সুর একেবারেই ভিন্ন। এর পিছনে বিদেশি শক্তির হাতও দেখছেন অনেকে। একদিকে পাকিস্তান। অন্যদিকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে সেনাঘাঁটি বানানোর মার্কিন আর্জি খারিজ করেছে ঢাকা। স্বভাবতই যা পছন্দ হয়নি ওয়াশিংটনের। প্রশ্ন উঠছে, এর পরেই কি পাকিস্তান লবির পাশাপাশি সিআইএও সক্রিয় হয়েছে পদ্মাপাড়ে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.