বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, ভোপাল: ভোট বড় বালাই। যার তাগিদে অসম্ভবও সম্ভব হয়! অন্তত নির্বাচনমুখী মধ্যপ্রদেশে (Madhya Pradesh)!
মা দুর্গার অকালবোধন বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। কিন্তু লক্ষ্মীর অকাল বোধন! কোনওদিন হয়েছে বলে জানা ছিল না। জানা গেল, বাঘ ও বাগীর তল্লাটে এসে। ভোটের দায়ে অসময়ে লক্ষ্মী আরাধনায় মেতেছে মধ্যপ্রদেশের ভোট ময়দানের খিলাড়িরা। কোথাও লক্ষ্মীমন্দিরে পুজো দিয়ে প্রচার শুরু, কোথাও মহিলা ভোটারদের লক্ষ্মীরূপে ভজনা।
কারণ একটাই। এবার সরকার গড়ার মুখ্য কারিগর হবেন মহিলা ভোটাররা। তাই আগেভাগেই মহিলাদের জন্য সব পক্ষ ঢালাও দান-খয়রাতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে। সেখানেও দুর্দম টক্কর। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) স্বপ্নের প্রকল্পের অনুকরণে কংগ্রেস (Congress) মহিলাদের মাথাপিছু ১,৫০০ টাকা মাসিক অনুদানের ঘোষণা করতেই গেরুয়া শিবির ২,০০০ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তার পরেই কংগ্রেস অনুদান ১,০০০ টাকা বাড়িয়ে করেছে আড়াই হাজার। আবার কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে রান্নার গ্যাসের দাম ৫০০ টাকা করার প্রতিশ্রুতি দিতেই বিজেপির (BJP) ঘোষণা, তারা কুর্সিতে এলে ৪৫০ টাকায় আমজনতার হেঁশেলে পৌঁছে দেবে এলপিজি সিলিন্ডার!
মানে দস্তুরমতো খয়রাতির নিলামদারি! মহিলাদের মন পেতে এ হেন দড়ি টানাটানির বহর দেখে মুচকি হাসছেন রাজ্যের লক্ষ্মীরা। মধ্যপ্রদেশে এবার মহিলা ভোটারের সংখ্যা ২ কোটি ৭২ লক্ষ। পুরুষদের তুলনায় সামান্যই কম। কন্যাশিশুর জন্মহার বৃদ্ধি ও ভ্রূণহত্যা বন্ধ হতেই লাফিয়ে লাফিয়ে মহিলা ভোটারের সংখ্যা বাড়ছে, একমত প্রধান দুই প্রতিপক্ষ বিজেপি ও কংগ্রেস। বিজেপির প্রদেশ সহসভাপতি সন্ধ্যা রাই জানান, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ অভিযানে ব্যাপক সাড়া মিলেছে মধ্যপ্রদেশে। তার প্রভাব পড়েছে ভোটার তালিকায়। মহিলা ভোটারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁদের আলাদা করে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। দল ক্ষমতায় ফিরলে মহিলাদের স্বাবলম্বী করতে সরকারি চাকরিতে ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ করার কথা আমরাই বলেছি। আবার গৃহবধূদের কথা ভেবে মাসিক ২ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রান্নার গ্যাস ৪৫০ টাকায় পাবেন মহিলারা। মহিলারা ঘরের লক্ষ্মী। তাঁদের স্বাবলম্বী করে তুলতে বিজেপি বদ্ধপরিকর। তাই প্রার্থী তালিকাতেও মহিলার সংখ্যা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।”
পালটা গেরুয়া শিবিরকে টেক্কা দিতে মাসিক ২,৫০০ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে কংগ্রেস। রান্নার গ্যাস ৫০০ টাকায় দেওয়া হবে বলে ঘোষণাপত্রে লেখা হয়েছে। এছাড়াও ‘বেটি বিবাহ যোজনা’য় ১ লক্ষ ১ হাজার টাকা সহায়তা করা হবে বলে জানান প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নেহা সিং চৌহান। তিনি জানান, কংগ্রেসে মহিলাদের গুরুত্ব কতখানি তা রাজে্যর মানুষকে বোঝাতে প্রথম থেকেই প্রচারে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে মুখ করে ভোটযুদ্ধে নামা হয়েছে। তাঁর নির্দেশেই নর্মদা পুজো দিয়ে প্রচারে নামা হয়েছে।
প্রতিশ্রুতি ও দাবিতেই শেষ নয়। মাঠে-ময়দানেও ঘরের লক্ষ্মীদের পুজোয় মেতেছেন প্রার্থীরা। পুরুষ প্রার্থীরা নিয়ম করে স্ত্রী-কন্যা ও দলের মহিলা কর্মীদের সঙ্গী করে প্রচারে যাচ্ছেন। যেমন ইন্দোর দুই বিধানসভা আসনে বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী কৈলাস বিজয়বর্গীয় প্রচারে নামিয়েছেন স্ত্রী সোনম বিজয়বর্গীয়কে। তেমনি গুনা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শাহকিয়া নিজের কেন্দ্রের জাকরি এলাকায় লক্ষ্মীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পুজো দিয়ে প্রচার শুরু করেছেন। ভোপাল দক্ষিণ-পশ্চিম কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী পি সি শর্মা সকলকে চমকে দিয়ে পদযাত্রায় হাতে মা লক্ষ্মীর মূর্তি নিয়ে হাঁটছেন। প্রচারের সময় পুরুষ কর্মীরা থাকছেন পিছনের সারিতে। আর হুজুর কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী নরেশ জ্ঞানচন্দ্রানি পরিবারের প্রমীলা বাহিনীকে প্রচারে নামিয়ে দিয়েছেন। এত সবের পরেও প্রশ্ন থেকেই যায়। মহিলাদের মন কোন পক্ষে যাবে? উত্তর মিলবে ডিসেম্বরের ৩ তারিখ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.