দীপাঞ্জন মণ্ডল, দিল্লি: স্বাধীনতা দিবসের দিন মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে বাস পরিষেবার ঘোষণা করেছিলেন। মঙ্গলবার ভাইফোঁটায় সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। গত ২৯ আগস্ট মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে বাস চালুর প্রকল্পে নীতিগত অনুমোদন দেন মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা। তারপর আজ এই প্রকল্প চালু করা হল। অন্য মহিলাদের জন্য নিয়ম না থাকলেও রাজ্য সরকারের অধীনস্ত মহিলা কর্মচারীদের এই সুবিধা নিতে হলে পরিবহণ ভাতা নেওয়া ছাড়তে হবে। এর পাশাপাশি মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে আজ থেকে দিল্লির বাসগুলিতে থাকছে ‘বাস মার্শাল’। এই কারণে প্রায় ১৩ হাজার সুরক্ষা কর্মী নিয়োগ করেছে কেজরিওয়াল সরকার।
মঙ্গলবার এই বিষয়ে টুইট করে দিল্লিবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। উল্লেখ করেছেন, মহিলাদের উন্নতি হলেই দেশের উন্নতি হবে। তাই তাঁর সরকার আজ অভিনব একটি ভ্রমণ প্রকল্প চালু করেছে। যার জন্য দেশের রাজধানীতে এখন থেকে মহিলারা ৫৫ হাজারের বেশি রাজ্য সরকারি বাসে ফ্রি-তে চাপতে পারবেন। ‘ফ্রি রাইড’ প্রকল্পটিতে মহিলাদের দিল্লি পরিবহণ কর্পোরেশন (ডিটিসি) এবং ক্লাস্টার বাসগুলিতে গোলাপি টিকিট দেওয়া হবে। হিন্দিতে লেখা তাঁর টুইটটি ছিল, ‘অভিনন্দন দিল্লি। মহিলাদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। দিল্লির সকল বোনকে আমি ভাইফোঁটার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আপনারা নিরাপদে থাকুন এবং অগ্রগতি করুন। মহিলারা যখন অগ্রগতি করেন তখনই দেশের উন্নতি হয়।’ এই টুইটের সঙ্গে সরকারি বাসে গোলাপি টিকিট হাতে বসে থাকা একজন মহিলার ছবিও রিটুইট করেছেন কেজরিওয়াল। আজ সকালে পরিষেবা শুরু হওয়ার পর ওই ছবিটি টুইটারে পোস্ট করেছিলেন দিল্লির পরিবহণ মন্ত্রী।
গতরাতে বিনামূল্যের বাস পরিষেবা সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনটি প্রকাশ করে দিল্লি সরকার। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে নয়ডা-এনসিআর, বিমানবন্দর এবং ডিটিসি ও ক্লাস্টার স্কিম অপারেটর পরিচালিত অন্য বিশেষ পরিষেবাগুলিতেও এই সুবিধা পাওয়া যাবে। রাজ্য সরকার জারি করা গোলাপি টিকিটের সংখ্যার ভিত্তিতে পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে টাকা মিটিয়ে দেবে।
সোমবার ত্যাগরাজ স্টেডিয়ামে বাস মার্শালদের অনুষ্ঠানে কেজরিওয়াল বলেন, ‘প্রত্যেকটি সরকারি বাসে মহিলাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনাদের উপরে। সরকারি বাসে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। যাতে তাঁরা বাসে চড়ে স্বস্তি পেতে পারেন। দিল্লি একটি বড় পরিবারের মতো। সেই পরিবারের বড় ছেলে আমি। বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে আগামিকাল থেকে আমাদের মা, বোন ও মেয়েদের বাসভাড়ার দায়িত্ব নিচ্ছি।’ এর পাশাপাশি তিনি জানান, ইতিমধ্যে মার্শালদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। ১৩ হাজার নিয়োজিত মার্শালের মধ্যে ১০ শতাংশ মহিলা রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘মহিলাদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে শহরজুড়ে বসানো হয়েছে সিসিটিভি, লাগানো হয়েছে আলো।’
এদিন ১০৪টি নতুন বাসেরও উদ্বোধন করেন কেজরিওয়াল। মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য তাতে উন্নত প্রযুক্তির বন্দোবস্ত রয়েছে। রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা, প্যানিক বাটন। এমনকী, বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের বাসে উঠতে সুবিধার জন্য রয়েছে হাইড্রোলিক লিফ্টসও। আগামী দিনে তাঁদের জন্য ১০০০ অপেক্ষাকৃত নিচু বাস চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন কেজরিওয়াল।
উল্লেখ্য, গত ২৯ আগস্ট একটি বড়সড় সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি ক্যাবিনেট। ঠিক হয় রাজধানীতে সরকারি বাসে মহিলাদের কোনও ভাড়া নেওয়া হবে না। এর জন্য প্রয়োজনীয় ভরতুকি দেবে রাজ্য সরকার। তার জন্য কেজরিওয়াল সরকারের তরফে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। তবে যেহেতু এটি সরকারি পরিষেবা, কেউ চাইলে টিকিট কাটতেও পারেন। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জুন মাসে দিল্লি সরকার রাজধানীর মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে মেট্রোতে চড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তবে তা নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছে প্রায় সমস্ত বিরোধী দলই। এতে সরকারের ঘাড়ে বাড়তি ৭০০ কোটি টাকার বোঝা চাপবে বলে দাবি তাদের। তার দু’মাস বাদেই গত ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কেজরিওয়াল রাজধানী শহরের মহিলাদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বিনামূল্যে বাস পরিষেবা চালু করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, সামনেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন। আর এই সমস্ত ঘোষণা আসলে তাঁর রাজনৈতিক চাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.