সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘ টানাপোড়েন, জটিলতা, আইনি লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে ৪৮০০-রও বেশি হলে মুক্তি পেল সঞ্জয় লীলা বনশালির ‘পদ্মাবত’। দীপিকা পাড়ুকোন, রণবীর সিং ও শাহিদ কাপুর অভিনীত এই সিনেমা দেশের চার রাজ্যে দেখানো হচ্ছে না। এই ঘটনায় আদালতের নির্দেশ অবমাননা করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দায়ের করলেন এক মামলাকারী, খবর সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে। মামলা দায়ের হয়েছে লোকেন্দ্র কালভি, করণ সিং-সহ কর্ণি সেনার তিন সদস্যের বিরুদ্ধে। সোমবার এই মামলার শুনানি। দিল্লি হাই কোর্ট এদিন ‘পদ্মাবত’-এর বিরুদ্ধে একটি মামলা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে মামলাকারীদের সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা বলে। কর্ণি সেনার তাণ্ডবের ছবি ধরা পড়েছে বিহারে। মুজফফরনগরে প্রকাশ্য রাস্তায় তরবারি হাতে ‘পদ্মাবত’-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায় মুখোশ পরিহিত একদল বিক্ষোভকারী।
কর্ণি সেনার মতো ভুইফোঁড় সংগঠনের আড়ালে হাতে গোনা কয়েকজন দুষ্কৃতী স্রেফ একটি সিনেমার মুক্তি রদ করতে শিশুদেরও রেয়াত করছ না। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। সিনেমাটির মুক্তির বিরুদ্ধে গত ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় কয়েকটি রাজপুত সংগঠন। তাঁদের অভিযোগ, রানি পদ্মাবতীর ভাবমূর্তি কলুষিত করা হয়েছে এই সিনেমায়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, এই সিনেমার মুক্তি আটকানো যাবে না। আইন ও শৃঙ্খলার কোনওরকম অবনতি হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য কড়া পদক্ষেপ করুক। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, সেন্সর, প্রশাসন এমনকী দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কর্ণি সেনা গলা ফুলিয়ে জানিয়ে দেয়, বনশালি পরিচালিত এই রাজপুত পিরিয়ড ড্রামা যদি রাজস্থানের একটিও প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়, তাহলে হাজার হাজার রাজপুত রমণী আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দেবেন। পালন করবেন মহান ‘জহর’ ব্রত। ঠিক চিতোরের রানি পদ্মিনীর মতোই। উত্তাল এই পরিস্থিতির নাড়ি মেপে মাল্টিপ্লেক্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া এক বিবৃতিতে জানিয়ে দেয়, রাজস্থান, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ এবং গোয়ার কোনও মাল্টিপ্লেক্সে ‘পদ্মাবত’ ছবি প্রদর্শিত হবে না। মহাকাল সেনার স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় সিং রাঠোর প্রকাশ্যে বলেন, ”আইন কানুন মানি না। গুজরাটে এই সিনেমা মুক্তি পেতে দেব না।’
বৃহস্পতিবার কর্ণি সেনার তাণ্ডবে গুরুগ্রামের এক মলে ‘পদ্মাবত’ দেখানোর কথা থাকলেও শেষে তা বাতিল হয়। আমেদাবাদে মাল্টিপ্লেক্সের মালিকরা একযোগে জানিয়েছেন, ‘পদ্মাবত’ নিয়ে যাবতীয় বিতর্ক মেটার আগে তাঁরা কোনও সিঙ্গল স্ক্রিন বা মাল্টিপ্লেক্সে এই সিনেমা দেখাবেন না। এখানেই প্রায় ২ হাজার বিক্ষোভকারী গতকাল মলে আগুন ধরিয়ে দেয়। কর্ণি সেনার প্রধান লোকেন্দ্র সিং কালভি ‘জনতা কারফিউ’-এর ডাক দিয়েছেন। বুধবার ভোপালে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। আজ সকাল থেকে অগ্রায় সিনেমা হলের বাইরে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ। হরিয়ানার গুরুগ্রামে একটি স্কুল বাসে তাণ্ডব চালানো হয়। ওই ঘটনায় ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ তাদের সোহনা আদালতে তোলা হবে। হায়দরাবাদে সিনেমা হলের বাইরে বসেছে পুলিশি প্রহরা। রাজস্থানের চিতোর দুর্গের বাইরেও আজ নিরাপত্তার বেষ্টনী মজবুত করা হয়েছে। মুসলিম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ‘পদ্মাবত’ নিয়ে যাবতীয় অশান্তির পিছনে বিজেপিকে দায়ী করে বলেছেন, ‘এটা প্রধানমন্ত্রীর পকোড়া পলিটিক্স। উনি হিন্দুদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারেন না। তাহলে কি মোদিজির ৫৬ ইঞ্চির ছাতি শুধুই মুসলিমদের জন্য?’
দেশ জুড়ে ক্ষোভ-পালটা ক্ষোভের মধ্যেই বিতর্ক বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিংয়ের মন্তব্য। তিনি এদিন বলেছেন, ‘অভিব্যক্তি প্রকাশ্যের স্বাধীনতা ইতিহাসকে বিকৃত করার অনুমতি দেয় না। যাঁরা এর বিরোধিতা করছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিরোধ মেটাতে হবে। কিন্তু যখনই আপনি কারও সম্মতি না নিয়েই কোনও কাজ করবেন, গন্ডগোল তো হবেই।’ রাজধানী দিল্লি, বাণিজ্যনগরী মুম্বই বা কলকাতার ছবিটা অবশ্য একেবারেই আলাদা। সেখানে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবেই সিনেমা দেখছেন। দিল্লির রাজৌরি গার্ডেনের এক হলে ফার্স্ট দে ফার্স্ট শো দেখতে আসা এক দর্শকের মন্তব্য, ‘কী এমন রয়েছে এই সিনেমায় যা নিয়ে দেশ জুড়ে এমন অশান্তি, সেটাই দেখতে এসেছি।’ দ্বিগ্বিজয় সিংয়ের মন্তব্য, ‘যে সব সিনেমা মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করে, তেমন সিনেমা না বানানোই ভাল।’ আমেদাবাদে পুলিশের পাশাপাশি নামানো হয়েছে সেনা। সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর মন্তব্য, ‘পুরনো ঘা খুঁচিয়ে রক্ত বের করার কী দরকার? এরকম সিনেমা বানানো উচিত নয়। এর কী ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে? শূন্য। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল, রাহুল গান্ধী এই প্রসঙ্গে চুপ কেন?’ রাজস্থানের উদয়পুরে একটি বাজারে আজ তাণ্ডব চালায় বিক্ষোভকারীরা। পরে পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.