Advertisement
Advertisement
Manmohan Singh

৩৩ বছর দেশের অর্থনীতির কেন্দ্রে, মনমোহন আমলে পালাবদল রাজ্যেও

বামেদের বিলোপ হয়ে যাওয়া ও তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধির সাক্ষী মনমোহনের প্রধানমন্ত্রিত্বের ১০ বছর।

Former Prime Minister Manmohan Singh's roll in West Bengal
Published by: Sayani Sen
  • Posted:December 28, 2024 11:36 am
  • Updated:December 28, 2024 11:36 am  

অপরাজিতা সেন: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ৩৩ বছরের সংসদীয় রাজনীতির জীবনে দেশের অর্থনীতি পালাবদল দেখেছে। তিনি ছিলেন দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের পুরোধাপুরুষ। ৩৩ বছর ধরে দেশের অর্থনীতি নিয়ে যাবতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তিনিই থেকেছেন। একইরকমভাবে মনমোহন সিংয়ের প্রধানমন্ত্রিত্বের ১০ বছর রাজ্য রাজনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঘটনাবহুল। এই সময়েই রাজ্যে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক রংবদলের চালচিত্র তৈরি হয়েছে। বামেরা সংসদীয় রাজনীতির সর্বোচ্চ শিখর ছুঁয়ে বিলীন হওয়ার পথে হেঁটেছে। উলটোদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য রাজনীতিতে তাঁর অপ্রতিরোধ্য জয়যাত্রা শুরু করেছেন।

২০০৪ সালে যখন মনমোহনের নেতৃত্বে ইউপিএ সরকার গঠিত হয়েছে তখন স্বাধীনতার পর সাংসদ সংখ্যার নিরিখে শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছেছিল বামেরা। সেবারের লোকসভা ভোটে বামেরা গোটা দেশে ৬৪টি আসনে জেতে। স্বাধীনতার পর লোকসভায় বামেদের কখনও এতো শক্তি হয়নি। মনমোহনের নেতৃত্বে ইউপিএ সরকারকে সমর্থন জানিয়েছিল বামেরা। রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে বলতে শোনা যেত, ‘দিল্লির সরকারকে আমরা উঠতে বললে উঠবে, বসতে বললে বসবে।’ সরকারে যেতে রাজি না থাকা বামেদের লোকসভার স্পিকার পদটি দেওয়া হয়েছিল। প্রথম বামপন্থী হিসেবে লোকসভার মনমোহন আমলে স্পিকার পদে বসেছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। সোমনাথের স্পিকার পদে বসা দেশের রাজনীতিতে বামেদের প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব বাড়িয়েছিল। কিন্তু এই ছবি বদলে যেতে বিশেষ সময় লাগেনি।

Advertisement

২০০৮ সালে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের পরমাণু চুক্তিকে সামনে রেখে প্রকাশ কারাতরা মনমোহনের সরকার ফেলার জন্য সচেষ্ট হন। সরকার টিকে যায়, কিন্তু প্যাঁচে পড়ে যায় বামেরা। দলের বিরুদ্ধে বিদ্রাহ ঘোষণা করে স্পিকার পদে থেকে যান সোমনাথ। ইউপিএ থেকে বামেদের বেরিয়ে যাওয়া দ্রুত তাদের সর্বভারতীয় রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দেয়। একদিকে ৬৪ জন সাংসদকে সামনে রেখে সরকারকে ব্ল‍্যাকমেল করে নানারকম সুবিধা আদায় করা ও অন্যদিকে সরকারের কিছু নীতির বিরোধিতা করে জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা, বামেদের সুযোগসন্ধানী রাজনীতির খুলে দেয়। মুখোশ ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যখন রাজ্যে ঐতিহাসিক পালাবদল ঘটছে এবং ৩৪ বছরের বাম সরকারের পতন ঘটছে তখন ঘটনাচক্রে মনমোহনই দেশের প্রধানমন্ত্রী।

রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বামেরা গোটা দেশেই কার্যত বিলুপ্ত হওয়ার পথে গিয়েছে। কেরলে ক্ষমতায় থাকলেও পর পর ভোটে তাদের সমর্থন কমছে। ভোটের হার দ্রুত শূন্যের দিকে ধাবমান। কিন্তু ২০১২ সালে এই মনমোহনের সরকার থেকে পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধির বিরোধিতা করে বেরিয়ে এসে তৃণমূল সংসদে তাদের শক্তি বাড়িয়েছে। ইউপিএ সরকার থেকে তৃণমূল বেরিয়ে আসার পর দু’বছরের মধ্যে পতন ঘটে মনমোহন সরকারের। কিন্তু সর্বভারতীয় রাজনীতিতে ক্রমশ গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা বাড়ে তৃণমূলের। নীতির প্রশ্নে অনড় থাকার সুফল পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বামেদের বিলোপ হয়ে যাওয়া ও তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধির সাক্ষী মনমোহনের প্রধানমন্ত্রিত্বের দশ বছর।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement