সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৩২ বছরে বন্ধুত্ব ছিন্ন করেছিলেন বৃহস্পতিবারই। এর মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রবিবার মায়ার বন্ধন কাটিয়ে পরলোকে পাড়ি দিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রঘুবংশ প্রসাদ সিং (Raghuvansh Prasad Singh)। দীর্ঘদিনের বন্ধুকে হারিয়ে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর লালুপ্রসাদ যাদবের (Laluprasad Yadav) টুইট, “প্রিয় রঘুবংশবাবু, এ কী করলেন আপনি! পরশুদিনই আমি আপনাকে বলেছিলাম, আপনি কোথাও যাচ্ছেন না। কিন্তু আপনি অনেক দূরে চলে গেলেন। আপনাকে ভীষণ মিস করব।” তবে তিনি কেবল প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা লালু প্রসাদ যাদবের দীর্ঘদিনের সঙ্গী ছিলেন, তাই-ই নয়, তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রকল্প মনরেগার স্থপতিও। এদিন বিহারের তিনটি প্রকল্প উদ্বোধনের সময় বারবার প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথা উল্লেখ করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)।
করোনা সংক্রমণ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে সপ্তাহখানেক ধরে দিল্লির এইমসে ভরতি ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী (৭৪)। এর মাঝেই গত বৃহস্পতিবার লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি (RJD) থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। সামনেই বিহার ভোট। তার আগে এতদিনের সম্পর্ক ছিন্ন করায় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে ওঠে। কিন্ত শুক্রবার রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ওদিন রাতেই ১১টা ৫৬ মিনিটে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। এরপর রবিবার সকালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ ১-এর গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল বিহারের (Bihar) সীতামাঢ়ি জেলায় সংযুক্ত সোশালিস্ট পার্টির সচিব হিসেবে। ১৯৭৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করেন তিনি। তারপর মন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকারের মতো দায়িত্ব সামলে ছিলেন। ১৯৯৬ সালে বৈশালি থেকে সাংসদ হন। ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত) ছিলেন। আটের দশকের শেষ থেকে লালুপ্রসাদ যাদবের বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ভারতের বৃহত্তম জনকল্যাণ কর্মসূচির (মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুবাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট বা MGNREGA ) স্থপতি ছিলেন তিনিই। প্রাথমিকভাবে সেই প্রকল্পের খসড়া তৈরি করেছিল সোনিয়া গান্ধীর (Sonia Gandhi) নেতৃত্বাধীন জাতীয় উপদেষ্টা কাউন্সিল। কংগ্রেসের (Congress) একাধিক হেভিওয়েট নেতা প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন না। একদিন বিকেলে সংসদের সেন্ট্রাল হল দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন সোনিয়া। সেই সময় তাঁর কাছে এসে প্রকল্প কাঠামো তৈরি নিয়ে বিলম্ব নিয়ে কথা বলেন রঘুবংশ প্রসাদ। তারপরই এই প্রকল্পে গতি আসে। শেষপর্যন্ত ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২০০টি জেলায় ভারতের প্রথম নিশ্চিত চাকরির প্রকল্প শুরু হয়। করোনা পরিস্থিতিতে কাজ হারিয়েছেন লক্ষাধিক পরিযায়ী শ্রমিক। ঘরে ফিরে আসার পর তাঁদের জীবনধারণের একমাত্র লাইফলাইন হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মনরেগা। তারই স্থপতি চলে গেলেন রবিবার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.