সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রান্নার তোড়জোড় চলছিল দিনের বেলা। কিন্তু রান্না করবেন কী? রান্নাঘরে ঢুকতে গিয়েই চক্ষুচড়কগাছ গেরস্থের। এ কে বসে? জ্বলজ্যান্ত একটা বাঘিনি (Tigress)! যদিও ডোরাকাটা প্রাণীটি অসুস্থ থাকায় কোনও আক্রমণ করেনি। ঘটনার সাক্ষী অসমের কাজিরাঙ্গা বনাঞ্চল লাগোয়া বাঘমারি গ্রামের বাসিন্দারা। খবর পেয়ে বনদপ্তরের কর্তারা সেখান থেকে ২৪ ঘণ্টারও বেশি চেষ্টায় তাকে উদ্ধার করেছেন।
বন্যার জল বাড়ছে প্রতিদিন। কার্যত ভেসে গিয়েছে অসমের জাতীয় উদ্যান কাজিরাঙ্গা বনাঞ্চল Kaziranga National Forest)। অসমে এ প্রায় ফি বছর বর্ষার চিত্র। কিন্তু এবছরের বন্যা কাজিরাঙ্গার বাসিন্দাদের যেন ভিন্ন রূপ চেনাচ্ছে। বানের জলে আতঙ্কিত জাতীয় উদ্যানের প্রাণীরা বেরিয়ে আসছে বাইরে। ঠাঁই নিচ্ছে লোকালয়ে। আবার বিপদ কেটেছে বুঝলে, কারও কোনও ক্ষতি না করে, কাউকে ভয় না দেখিয়ে ফিরে যাচ্ছে স্বস্থানে। তেমনই এক বাঘিনির দেখা মিলল জঙ্গল লাগোয়া বাঘমারি গ্রামে। কুঁড়েঘরের বাসিন্দারা রান্না করতে গিয়ে দেখলেন, সেখানে বসে বাঘিনি! সঙ্গে সঙ্গে খবর পাঠানো হয় বনদপ্তরে। তবে তাঁরাও এসে সহজে বাঘিনিটিকে উদ্ধার করতে পারেনি। প্রায় ৩০ ঘণ্টার চেষ্টায় তবে তাকে কব্জা করা গিয়েছে।
বনদপ্তরের ওই দলে থাকা এক পশু চিকিৎসক জানিয়েছেন, বন্যার জলে ভাসতে ভাসতেই বাঘিনি পৌঁছে গিয়েছিল গেরস্থের রান্নাঘরে। তাই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বনদপ্তর সেখানে পৌঁছে আগে বাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থান সরিয়ে দেয়। আশেপাশের আটটি গ্রামের বাসিন্দাদেরও সরানো হয় অন্যত্র। ভাবনা ছিল, যদি বাঘিনি নিজে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে, তাহলে সামনে মানুষকে পেলে আক্রমণ করতে পারে। সেই আশঙ্কায় এই পদক্ষেপ বনদপ্তরের। কিন্তু ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও বাঘিনির নো নড়নচড়ন। এরপর আর অপেক্ষা করেননি বনকর্মীরা। ঘুমপাড়ানি গুলি ছুঁড়ে তাকে অচেতন করা হয়। তারপর উদ্ধার করে পশু চিকিৎসালয় নিয়ে যান তাঁরা। শেষ খবর পাওয়া অনুযায়ী, ঘুম ভেঙেছে তার। সুস্থই আছে। কিছুদিন নজরে রেখে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে।
তবে কাজিরাঙ্গার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের অবসান হচ্ছে না কিছুতেই। এখনও পর্যন্ত এখানকার দেড়শোর বেশি বনশিবির জলমগ্ন। মৃত্যু হয়েছে ৬৬টি বন্যপ্রাণীর। তবে এর মধ্যে মন ভাল করা দৃশ্যও আছে। বন্যার জেরে সম্প্রতি ঘন জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসেছিল ভারতের একমাত্র সোনালি বাঘ। জনসমক্ষে দেখা গিয়েছে তাকে। যা মন কেড়েছে সকলের। বন্যার অভিশাপের মাঝে এ তো কম বড় আশীর্বাদ নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.