সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সেনাপ্রধানের সতর্কতা মেনে দ্বিমুখী লড়াইয়ের মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুরু করে দিল ভারত। চিন ও পাকিস্তানকে একাই শায়েস্তা করতে সকলের অলক্ষ্যে এক মহাযজ্ঞে নামল ভারতীয় সেনা ও ভারতীয় রেল।
চিন বা পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধলে দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকেই যেন প্রয়োজনীয় রসদ পৌঁছে দেওয়া যায় ‘ওয়ার ফ্রন্টে’! এই লক্ষ্যেই এবার একসঙ্গে ঝাঁপাল ভারতীয় রেল ও সেনাবাহিনী। দেশের পশ্চিম প্রান্তে পাকিস্তানের সঙ্গে ও পূর্ব প্রান্তে চিনের মোকাবিলায় সেনার অস্ত্রশস্ত্র বা খাবারদাবারের যাতে কোনও অভাব না হয়, সেদিকে এবার অতিরিক্ত গুরুত্ব দিচ্ছে দেশের অন্যতম দুই প্রধান স্তম্ভ।
ইতিমধ্যেই ভারতীয় রেল দেশের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিগুলির কাছে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো তৈরি করছে। তৈরি হচ্ছে কামান, হাউৎজার, সেনার গাড়ি ও অস্ত্রশস্ত্র বয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম র্যাম্প। দেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অরুণাচল প্রদেশের ভালুকপং, নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর, সিলাপাথার, মিসামারি ও অসমের মুরকংসেলেকে তৈরি হচ্ছে ব্যাপক রেল পরিকাঠামো। এই দিকের উন্নয়ন মূলত চিনকে নজরে রেখে। যুদ্ধ বাঁধলে যাতে দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে অস্ত্র বা সেনা রেলপথ ব্যবহার করে যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছে দেওয়া যায়, এবার সেই লক্ষ্যেই কোমর বেঁধে নামল রেল ও সেনা।
রেলের এক শীর্ষস্থানীয় কর্তা বলছেন, ‘আরও দ্রুত সেনা ও অস্ত্রশস্ত্রকে ওয়ার ফ্রন্টে পৌঁছে দেওয়াকেই আমরা পাখির চোখ করেছি।’ সেনা সূত্রে খবর, চিনের পাশাপাশি পাকিস্তানকে ‘ঠান্ডা’ রাখতে পশ্চিম ফ্রন্টে বাড়তি মনোনিবেশ করেছে ভারত। ২০০১-এ সংসদে হানা থেকে শিক্ষা নিয়েছে ভারত, বলছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনা কর্তা। তিনি জানিয়েছেন, ব্যাক-আপ যদি ঠিক সময় পৌঁছে দেওয়া না যায়, তার ফল যে কী মারাত্মক হতে পারে সেটা আমরা ২০০১-এই দেখেছি। ১০ মাস ব্যাপী ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে ‘অপারেশন পরাক্রম’ চলাকালীন এই শিক্ষা নিয়েছে ভারত। তাই এবার অতি দ্রুত সেনার কাছে ব্যাক-আপ পৌঁছে দিতে ঝাঁপাল সেনা। আমেরিকার কাছ থেকে এই বিষয়ে খুঁটিনাটি জ্ঞান সংগ্রহ করেছে সেনার একটি বিশেষ দল। ওই স্ট্র্যাটেজিই এবার বাস্তবে প্রতিফলিত হবে।
পোশাকি ভাষায় এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রো-অ্যাক্টিভ কনভেনশনাল ওয়ার স্ট্র্যাটেজি।’ অনেকে একে বলছেন, ‘কোল্ড স্টার্ট’। বস্তুত, শত্রুপক্ষে ভারতীয় সেনাকে কাবু করে ফেললেও নতুন বাহিনী ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়ে সেনার মনোবলকে একধাক্কায় বহুগুণ বাড়িয়ে দিতেই এই মহাযজ্ঞে নেমেছে রেল ও সেনাবাহিনী। যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে গোটা দেশ জুড়ে ৭০০-৮৫০টি ট্রেন যাতে নিয়মিত যাতায়াত করতে পারে, সেদিকেই নজর দিচ্ছে দুই কেন্দ্রীয় দপ্তর। এখন থেকে নিয়ম করে মহড়া হবে। প্রতি মুহূর্তে সতর্ক রাখা হবে সশস্ত্র বাহিনীকে। এবছর নানা পরিকাঠামো গড়ে তুলতে সেনাবাহিনীর তরফে রেলকে প্রায় ২০০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ওই টাকাই এই প্রকল্পে খরচ হবে। এর পাশাপাশি রয়েছে রেলের কিছু নিজস্ব বিনিয়োগও। এ তো গেল শুধুই সামরিক প্রস্তুতির কথা। যে মালগাড়িতে করে সেনার অস্ত্রশস্ত্র পৌঁছে যাবে যুদ্ধক্ষেত্রে- সেই কামরাগুলির উপর জিপিএসের সাহায্যে সর্বক্ষণ নজর রাখবে সেনা। যাতে ওই অস্ত্র অন্যত্র কোথাও বেহাত না হয়ে যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.