নব্যেন্দু হাজরা: ট্রেনের কামরায় খাবার নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ নতুন নয়৷ রেলমন্ত্রীর ওয়েবসাইটে গত এক বছরে খাবার নিয়েই অভিযোগ জমা পড়েছে সবচেয়ে বেশি৷ কখনও খাবারের মান খারাপ৷ আবার কখনও রেলের খাবারে দাম নেওয়া হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত৷ আবার কখনও দেওয়া হচ্ছে পরিমাণের তুলনায় কম খাবার৷ ট্রেনের কামরায় খাবারের এই কারচুপি ধরতে তাই উদ্বিগ্ন রেলমন্ত্রক এবার যাত্রীদের সচেতন করতে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে৷ ‘জাগো গ্রাহক জাগো’৷ দূরপাল্লার ট্রেনের প্রতি কামরায় এবার টাঙানো হচ্ছে খাবারের রেট চার্ট৷ সেখানে লেখা থাকবে খাবারের পরিমাণ, খাবারের দাম৷ এমনকী থাকবে অভিযোগ জানানোর নম্বরও৷ রেলমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, যে ভেন্ডররা খাবার পরিবেশন করেন ট্রেনের কামরায়, তাঁরা অধিকাংশ সময় অতিরিক্ত দাম নেন৷ একাধিকবার রেলের আধিকারিকরা অভিযান চালিয়ে বিষয়টি লক্ষ্য করেছেন৷ নজরে এসেছে মন্ত্রকের কর্তাদেরও৷ তাই তড়িঘড়ি রেলের তরফে যাত্রীদের সচেতন করার জন্য এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ রেলের এক কর্তা জানান, সবসময় যাত্রীরা মেনুকার্ড হাতের কাছে পান না৷ তাই তাঁরা জানতেও পারেন না কোন খাবারের কী দাম! ক্যাটারিংয়ের কাজে নিযুক্ত কর্মীরা যাত্রীদের যা বলেন, তাঁরা তা-ই বিশ্বাস করেন৷ আর যাত্রীদের এই সারল্যের সুযোগ নিয়েই পকেট ভরছে ভারপ্রাপ্ত খাবার সরবরাহকারী সংস্থা৷ এই কারচুপি বন্ধ করতেই রেলের তরফে তাই নতুন এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷
দূরপাল্লার ট্রেনে এক কাপ (১৫০ মিলি) চায়ের দাম নেওয়া হয় সাত টাকা৷ কিন্তু রেলের ঠিক করে দেওয়া রেট চার্ট অনুযায়ী তার দাম পাঁচ টাকা৷ এক লিটার জলের প্যাকেটের দাম ১৫ টাকা৷ ভেন্ডাররা সেই প্যাকেটের দাম নেন ২০ টাকা৷ রেলের ঘরে যদিও জমা পড়ে ১৫ টাকাই৷ রেলমন্ত্রক তাই চাইছে মিডলম্যানদের এই দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে৷ মিডলম্যানদের ফলে একদিকে যেমন যাত্রীদের পকেট কাটা যাচ্ছে, তেমনই রেলের আয় সেই দাম অনুযায়ী হচ্ছে না৷ তাই বাধ্য হয়ে এবার জনসচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দিচ্ছে রেল৷
রেলের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, স্টেশনে নন ভেজিটেরিয়ান স্ট্যান্ডার্ড ব্রেকফাস্টের দাম ৩০ টাকা, ট্রেনের কামরায় ৩৫ টাকা৷ কিন্তু প্রতিক্ষেত্রেই যাঁরা খাবার সরবরাহ করেন তার আসল দামের থেকে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে দেন৷ এটা দীর্ঘদিনের ব্যাধি৷ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে রেলেরই অনেক রাঘববোয়াল৷ রেল চাইছে এই ব্যাধি সারাতে৷ রেলের এক কর্তা বলেন, শুধু দামেই নয়, অনেক ক্ষেত্রেই কমিয়ে দেওয়া হয় খাবারের পরিমাণও৷ অর্থাত্ ২০০ গ্রাম এগ বিরিয়ানির বদলে যাত্রীকে হয়তো দেওয়া হল ৫০ গ্রাম কম৷ কিন্তু সেই মুহূর্তে যাত্রীর পক্ষে খাবারের পরিমাণ মাপার মতো পরিস্থিতি থাকে না৷ ফলে কম খাবার দিয়ে বেশি দাম নেয় খাবার সরবরাহে নিযুক্ত সংস্থা৷ খাবারের এই কারচুপিতে রেল সরাসরি যুক্ত না থাকলেও দায় বর্তায় রেলের উপরই৷
তাই ব্যাধি সারাতে যাত্রী সচেতনতার পাশাপাশি কড়া দাওয়াইয়ের দিকেও হাঁটছে রেল৷ যাত্রীদের জন্য এনেছে ১৮০০-১১১-৩২১ টোল ফ্রি নম্বর৷ এই নম্বরে এবার অভিযোগ জানাতে পারবেন যাত্রী৷ আর অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভারপ্রাপ্ত সংস্থাকে শো-কজ করতে পারে রেল৷ জানিয়েছেন রেলমন্ত্রকের এক কর্তাই৷ তাঁর কথায়, অনেক চেষ্টা করেও ট্রেনের খাবার নিয়ে সমস্যা কমানো যায়নি৷ তাই বাধ্য হয়েই কড়া পদক্ষেপ নেবে রেল৷ একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের কাছে খাবারের যাবতীয় বিবরণ তুলে ধরা হবে প্রতি কামরায়৷ লাগানো হবে মেনু কার্ড৷ সেখানে থাকবে খাবারের দামও৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.