কৃষ্ণকুমার দাস: ফের নীলাচলে মহাপ্রভু জগন্নাথদেবের শ্রীমন্দিরের শীর্ষে ধ্বজা নিয়ে বড়মাপের বিপত্তি। আমফান নামের সুপার সাইক্লোন আছড়ে পড়ার আগেই সোমবার উড়ে গেল মন্দির শীর্ষের ধ্বজা। সুদর্শন চক্রের উপরে ত্রিশূলে আটকে থাকা সাদা রঙের ধ্বজা উড়ে যেতেই পুরী থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের জগন্নাথ ভক্তদের মধ্যে ‘বড় বিপদের বার্তা’ বলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কারণ, দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর ঠিক আগে পাপমোচনী একাদশীর সন্ধ্যায় মন্দির শীর্ষে হনুমান মন্দিরের সন্ধ্যা প্রদীপ থেকে ধ্বজায় আগুন লেগেছিল। তারপর ধীরে ধীরে দেশজুড়ে করোনার দাপট শুরু। যদিও পুরীতে এখনও পর্যন্ত একজন কোভিড রোগী পাওয়া যায়নি। বস্তুত এই কারণেই পুরীর সেবায়েতদের একাংশ ও ভক্তদের ভয় মেশানো প্রশ্ন, ‘আমফান’ সব ধ্বংস করে দেবে না তো?
গত বছর এমন সময়েই ফণী পুরীর সমুদ্রতীরের হোটেল, বাড়িকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল। মাস কয়েক আগে মন্দির শীর্ষে গিঁট বেঁধে যাওয়ায় ধ্বজা আটকে বিপত্তি ঘটে। এদিনের ঘটনা নিয়ে একবছরে তিনবার পুরীতে ধ্বজা বিভ্রাট ঘিরে প্রবল আতঙ্ক।
পুরীর শ্রীমন্দিরে দেবতার তখন বিশ্রাম পর্ব চলছিল। ঘড়িতে বিকেল তিনটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোনও ঝোড়ো হাওয়া না হওয়া সত্বেও মন্দিরশীর্ষের সাদা ধ্বজা উধাও হয়ে যায়। নিয়ম মেনে মন্দিরের অপরাহ্নের পুজো-আরতি বন্ধ রাখা হয়।
শ্রীমন্দিরের পরিচালন কমিটির অন্যতম সদস্য নীলকণ্ঠ মহাপাত্র জানান, “ধ্বজা উড়ে যাওয়া সবসময়ই খারাপ। এর আগেও নানা সময়ে ধ্বজা খুলেছে। ফের সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তদের পাঠিয়ে নতুন পতাকা লাগিয়ে মন্দিরের পুজো-আচার-অনুষ্ঠান শুরু করা হয়েছে। কারণ, মন্দিরের শীর্ষে যতক্ষণ ধ্বজা থাকবে না ততক্ষণ দেবতার কোনও পুজো-উপাচার হয় না।” করোনার আগে দৈনিক মন্দিরে ভক্তদের তরফে হাজার-বারোশোর বেশি ‘মানত’ ধ্বজা লাগানো হত। ধ্বজা পরানো দেখতেন হাজার হাজার পুণ্যার্থী। কিন্তু কোভিডের জেরে এখন ভক্তদের প্রবেশ নিষেধ, শুধু মাত্র সেবক ও প্রশাসন থেকে ১০-১২টি ধ্বজা লাগানো হচ্ছে।
মন্দিরের প্রধান উপাসক পুরীর মহারাজা দিব্যসিং। সেই রাজপরিবারের রাজগুরু দেবীপ্রসাদ জানান, “ধ্বজা উড়ে যাওয়া মানেই অমঙ্গলসূচক। ফনী ঘূর্ণিঝড়ের একদিন আগে ঠিক এমনভাবে মন্দিরের পতাকা উড়ে গিয়েছিল।” পুরীর মন্দিরের অন্যতম সেবায়েত জগন্নাথ দৈতাপতি অবশ্য ভক্তদের অভয় দিয়ে জানিয়েছেন, “চিন্তার কিছু নেই। মাঝে মধ্যে বাতাসের দাপটে এমন পতাকা উড়ে যায়। প্রভু জগন্নাথ সমস্ত অমঙ্গল থেকেই ভক্তদের রক্ষা করবেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.