জ্যোতির্ময় কর্মকার, নয়াদিল্লি: পাঁচশো, হাজার টাকার নোট বাতিলের জেরে দেশজুড়ে অচলাবস্থার পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহেই জিএসটির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রীঅমিত মিত্র৷ স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, চলতি আর্থিক অস্থিরতার আবহে নতুন করে জিএসটি লাগু হলে কার্যত তা হবে গোদের উপর বিষফোড়ার শামিল৷ এই পরিস্থিতিতে জিএসটি কার্যকর করা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে তা নিয়ে অন্যান্য রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলারও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন৷ আর তাতেই নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক৷ এক ইংরেজি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পশ্চিমবঙ্গের নাম না করেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, “যদি কোনও রাজ্য যে কোনও সংস্কারেই নেতিবাচক অবস্থান নেয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা সেই রাজ্য সম্পর্কে আশঙ্কিতই হবেন৷”
প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকে সংসদের ভিতরে-বাইরে বিরোধী শিবিরের আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসই৷ শুধু রাজধানীর রাজপথে ধরনানয়, কানপুর, পাটনা হয়ে দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তে নরেন্দ্র মোদির মূল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে চাইছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জেটলির এহেনমন্তব্যকে আক্ষরিক অর্থেই ‘অ্যাকিলিস’ বা গোড়ালির মতো পায়ের সবচেয়ে সংবেদনশীল জায়গায় আঘাত বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ কারণ বিপুল জনসমর্থনে দ্বিতীয়বার জিতে আসার পর এই মুহূর্তে মমতার পাখির চোখ শিল্পে বিনিয়োগই৷
যদিও অমিতবাবুর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জিএসটি নিয়ে কোনও অনিশ্চয়তা মানতে চাননি জেটলি৷ বরং তাঁর দাবি, “সংবিধান অনুযায়ী জিএসটি বাস্তবায়নে কোনও দেরি সম্ভব নয়৷” ইতিমধ্যেই সংসদে জিএসটি আইন হিসাবে পাস হয়ে গিয়েছে বলে যুক্তি দেন তিনি৷ বস্তুত চলতি শীতকালীন অধিবেশনেই জিএসটির অন্যান্য সহযোগী বিল পাস করিয়ে নিতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে সরকার৷ এমনকী, নোট বাতিল ও জিএসটি লাগুর মতো পরপর দু’টো ‘বিগ ব্যাং’ সংস্কারের প্রভাব অর্থনীতির উপর কী হবে তা কেন্দ্র হিসাব করেছে কি না সেই প্রশ্নের উত্তরেও জেটলি কটাক্ষ করে বলেন, “যাক্, অন্তত এটা স্বীকার করা হচ্ছে যে আমরা বিগ ব্যাং সংস্কার নিয়ে আসছি৷”
প্রসঙ্গত এপ্রিলে নির্ধারিত জিএসটি লাগুর আগেই রাজ্য সরকারগুলি রাজস্বের অর্থ হারাতে শুরু করেছে৷ এরপর জিএসটি লাগু হলে পরিস্থিতি যে খারাপ হবে সে কথা সকলেরই জানা৷ সেকারণেই রাজ্যগুলিকে পাঁচ বছরের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.