সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: দাবিপূরণ হয়েছে। এবার ঘরে ফেরার পালা। ‘নেতা’-রা বলেছিলেন, বাড়ি ফেরা হবে শনিবার। কিন্তু আর যেন তর সইছিল না দিনের পর দিন ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বসে থাকা কৃষকদের। তাই লক্ষ্মীবারে শান্তির বার্তা আসার পরই বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছেন আন্দোলনকারী কৃষকেরা (Farmer Protest)। শনিবার সকালেও দিল্লি সীমানায় দেখা গিয়েছে একই দৃশ্য। গাজিপুর, সিংঘু, টিকরি সীমানার তাঁবু গোটানো শুরু হয়ে গিয়েছে। একে একে রাজধানী ছাড়ছে বহু ট্রাক্টর।
জেনারেল বিপিন রাওয়াতের শেষকৃত্যের সম্মানে খাতায়-কলমে সেলিব্রেশন না হলেও বিক্ষিপ্তভাবে হয়েছে ছোট ছোট ‘সেলিব্রেশন’-ও। ঢোল-নাকাঢ়ার তালে হয়েছে ভাঙড়াও। শুক্রবার সকাল থেকেই পুরোদমে চলেছে ‘প্যাকিং’। সারি সারি ট্রাক্টর-ট্রলিতে উঠতে শুরু করেছে গত এক বছরের সংসার। সংযু্ক্ত কিষান মোর্চা (এসকেএম)-র শীর্ষনেতৃত্বে জানাচ্ছে, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আন্দোলনকারীরা ফিরে যাবেন। আর সকলে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরই ১৫ তারিখ সকালে ফিরবেন কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতরা।
এ তো না হয় গেল সাধারণ আন্দোলনকারীদের হাল হকিকত, নেতারা অবশ্য আনন্দের আতিশয্যে ভেসে যেতে নারাজ। তাঁদের দায়িত্ব যেন বেড়ে গিয়েছে আরও। তাঁদের সাফ বক্তব্য, সওয়া এক বছর আগে যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষক আন্দোলন শুরু হয়েছিল, এক বছর আগে যখন শাসকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে দিল্লিতে ঢুকতে গিয়ে লাঠি খেতে হয়েছিল, তখনও পর্যন্ত তাঁরা কেউ ছিলেন পাঞ্জাব, কেউ হরিয়ানা, কেউ বা উত্তরপ্রদেশ, কেরল, বাংলার কৃষক। তবে এখন তাঁরা সংযুক্ত কিষান মোর্চা। যারা ভারতে আন্দোলনের নতুন অধ্যায় চালু করেছে। যারা রাষ্ট্রের চোখে চোখ রেখে নিজেদের হক আদায় করে তবে ছেড়েছে।
অখিল ভারতীয় কিষান সভার কোষাধ্যক্ষ তথা এসকেএম-এর প্রথম সারির অন্যতম নেতা পি কৃষ্ণপ্রসাদ বলছিলেন, “যেদিন আমরা এসেছিলাম, সেদিন রাষ্ট্র লাঠি দিয়ে বরণ করেছিল। ফেরার সময় সবাই ফুল দিয়ে বিদায় জানাবে। এটাই পার্থক্য। এই দু’টো ছবিই যা বলার বলে দিচ্ছে। মোদির অশ্বমেধের ঘোড়ায় আমরাই লাগাম লাগালাম। প্রমাণ করে দিলাম সত্যের কাছে কোনও কিছুই অটল নয়।”
আগেরদিনই রাকেশ টিকায়েত জানিয়েছিলেন, এসকেএম শুধু কৃষক সমস্যায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। দেশের যে কোনও প্রান্তে যে কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হবে তারা। সেসব অবশ্য ভবিষ্যতের গর্ভে। আপাতত শনিবারের সকাল থেকেই শুরু হয়েছে বিজয় উৎসব। লাড্ডু ও ক্ষীর দিয়ে মিষ্টিমুখ করে ‘ঘর ওয়াপসি’। তবে তার আগে রাতের সেরে ফেলা হয়েছে যুদ্ধজয়ের পর রাজকীয়ভাবে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি। সাজানো হয়েছে এতদিন ধরে নিজেদের ‘ঘর’ ট্রাক্টর-ট্রলিগুলি। ফুল, মালায় সেসব সেজে উঠছে রথের মতো। লাগানো হয়েছে ঢাউস ঢাউস সাউন্ড সিস্টেম। আনন্দের আতিশয্যে বাড়ি ফেরার পথে যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে যায়, তাই দিল্লি পুলিশকে জারি করতে হল বিভিন্ন নির্দেশিকা। যানজট এড়াতে বেঁধে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন রুট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.