সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: “আগামী ১০-১৫ দিন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মোদিভক্তরা আমাদের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার চালাবে। সেসবে কান দিলে চলবে না। ঠান্ডা মাথায়, কোনও প্ররোচনায় পা না দিয়ে চুপচাপ চালিয়ে যেতে আন্দোলন।” স্থান – গাজিপুর সীমানা। বক্তা – রাকেশ টিকাইত (Rakesh Tikait)। প্রেক্ষাপট – কৃষক আন্দোলনের বর্ষপূর্তি।
কয়েকদিন আগেও সীমানাগুলোয় ছিল কৃষক-অ্যানিমিয়া। অথচ আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে যেন গাজিপুর, সিংঘু, টিকরি সীমানায় জনসুনামি। এই ভিড়ে শুধু কৃষকরাই নন, আছেন প্রচুর সংবাদকর্মী। এমনকী তাতে শামিল হতে দেখা গেল অনেক সাধারণ মানুষকেও। কেউ এসেছেন আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানাতে। কয়েকজন অভিভাবককে আবার দেখা গেল বাড়ির ছোটদের নিয়ে এসেছেন এই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী করাতে। লঙ্গরগুলোয় তিলধারণের জায়গা নেই। গুরু নানকের জন্মজয়ন্তী পালন, খেত থেকে ফসল তোলা, আরও বড় আন্দোলনে নামার আগে কিছুটা অক্সিজেন নিয়ে নেওয়া। মূলত এই তিন কারণেই নিজেদের গ্রামে ফিরেছিলেন একটি বড় অংশের আন্দোলনকারী।
অথচ আজ একেবারে অন্য ছবি। ভরা কোটালের গঙ্গার মতো ফুলেফেঁপে উঠেছে প্রতিটি সীমানার আন্দোলন মঞ্চ। গাজিপুরের সেই মঞ্চ থেকে নেমে রাকেশ টিকাইত যখন হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিলেন নিজের কার্যালয়ের দিকে, সিংহগর্জনে কেঁপে উঠল গাজিপুর সীমানা। গোঁফে তা দিতে দিতে ঠিক সেভাবেই রাজকীয় চালে হাঁটছিলেন কৃষক নেতা। এক সময় তাঁদের বিরুদ্ধে উঠেছে খালিস্তানী, সন্ত্রাসবাদী নানা ধরনের অভিযোগ। কিছুতেই পাত্তা দেননি অন্নদাতারা। মুখ বুজে নিজেদের দাবি আওড়ে গিয়েছেন শুধু। ‘কালা কানুন প্রত্যাহার করতে হবে।’ ‘এমএসপি’র গ্যারান্টি দিতে হবে।’ ‘বিদ্যুৎ বিল, ২০২০ প্রত্যাহার করতে হবে।’ ঠিক সাতদিন আগে গুরু নানক জয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, তিন কৃষি আইন ফেরত নেওয়া হবে। তবু আন্দোলন না তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কৃষকরা।
এই প্রসঙ্গে সংবাদ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে রাকেশ টিকাইত বলেন, “উনি বড় রাজনীতিবিদ। বুদ্ধি করে এই চাল দিয়েছেন। আমাদের অনেকগুলো দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল কালা কানুন প্রত্যাহার করা। একমাত্র দাবি কিন্তু নয়। তাও এখনও প্রত্যাহার হয়নি, ঘোষণাটাই হয়েছে শুধু। এইটুকু করে ভাবছে আমাদের তুলে দেবে। তা হচ্ছে না। আমরা জানি, ঠিক যেদিন সংসদে এই আইন প্রত্যাহার হবে, তারপর থেকেই ওঁর ভক্তরা নখ-দাঁত বার করে বলবে, এই তো দেখো, আমাদের মহান প্রধানমন্ত্রী ওদের কথা মেনে নিল, তাও ওরা রাস্তা আটকে বসে আছে। অনেক অপপ্রচার চলবে আমাদের বিরুদ্ধে। আগামী ১০-১৫ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বিরুদ্ধে জোরালো প্রচার চালানো হবে। তবে আমরা তৈরি। সবাইকে বলে রেখেছি, কিছুতেই মাথা গরম করা যাবে না। কোনও প্ররোচনায় পা দেওয়া যাবে না। যেভাবে আন্দোলন চলছে, সেভাবেই শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে যেতে হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.