সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিরোধীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে রাজ্যসভায়ও পাস হয়ে গেল দুই বিতর্কিত কৃষি বিল (Farm Bill, 2020)। যদিও বিলদু’টিকে চাষিদের ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ বলে কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা। উলটোদিকে এই বিল পাসকে যুগান্তকারী বলে উল্লেখ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। তবে রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যেই পাঞ্জাব, হরিয়াণা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই বিলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশ-প্রশাসনকে তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার।
এই বিলগুলি নিয়ে রবিবার সকাল থেকেই তুমুল উত্তেজনা তৈরি হয় রাজ্যসভায়। বিরোধীরা ওয়ালে নেমে এসে প্রতিবাদ দেখান। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন ‘সংসদীয় গণতন্ত্রের হত্যা’ বলে উল্লেখ করেন ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ সিংয়ের দিকে ছুটে যান। এমনকী, রাজ্যসসভার রুলবুক ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করেন তিনি। ডেপুটি চেয়ারম্যানের মাইক্রোফোনও কেড়ে নেন তিনি। এরপরই ১০ মিনিটের জন্য অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়। এদিন সকালেই বিলগুলিকে ‘কৃষি-বিরোধী কালো আইন’ বলে অভিহিত করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। প্রশ্ন তোলেন, “ন্যূনতম সমর্থন মূল্য (MSP) নিয়ে কেন কোনও গ্যারান্টির উল্লেখ নেই বিলে?”
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা জেডি(এস) নেতা এইচ ডি দেবেগৌড়া জানতে চান, কোভিড মহামারীর মাঝেই বিল পাশ করার এত তাড়াহুড়ো কেন, তা প্রধানমন্ত্রীকে ব্যাখ্যা করতে হবে। এই বিল কৃষক সম্প্রদায়কে কী কী স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী সুবিধা দেবে, তাও সবিস্তারে ব্যাখ্যা করতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার বিষয় মোদি সরকারের প্রতিশ্রুতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। একই প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনও। তিনি বলেন, “আপনারাই (কেন্দ্র) বলেছেন, ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হবে। কিন্তু বর্তমানের বাজারদরের ভিত্তিতে বলা যায়, ২০২৮ সালের আগে কৃষকদের রোজগার দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।” একই সুরে কেন্দ্রকে বিঁধেছেন ডিএমকে, সপা-র সাংসদরাও।
পালটা জবাব দেয় বিজেপিও। বিল পাশ হওয়ার পরই ‘যুগান্তকারী পদক্ষেপ’ বলে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টুইটার হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, দীর্ঘদিনের মধ্যস্বত্বভোগী প্রথার বিনাশ করবে এই বিল। কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়মের জন্য নয়া প্রযুক্তি প্রয়োজন। তার ব্যবস্থা করবে এই বিল।” একইসঙ্গে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়েও চাষিদের আশ্বাস দেন তিনি। জানিয়ে দেন, চাষিরা যেমন ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পাচ্ছিলেন তেমনই পাবেন। সরকার যেমন ফসল কিনত তেমনই কিনবে।” বিরোধীরা চাষিদের ভুল বোঝাচ্ছে বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন একই সুর শোনা গেল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার গলাতেও। তিনি অভিযোগ করেন বিরোধীরা রাজ্যসভায় দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো আচরণ করছে। চেয়্যারম্যানকে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতেও আরজি জানান। একইসঙ্গে বিরোধীদের কৃষি বিরোধী বলে কটাক্ষ করেন জেপি নাড্ডা। এই বিলের প্রশংসা করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও।
এদিকে ইতিমধ্যেই পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরা এই বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। আগামী ২৪-২৭ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবে রেল রোকো কর্মসূচি নিয়েছে কৃষকদের একটি সংগঠন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ডাকা হয়েছে ভারত বনধ। এদিন সকাল থেকে সাদা পোশাক পরে ট্রাকটরে চেপে হরিয়ানার বিভিন্ন প্রান্তে কৃষকরা জড়ো হন। মুখে বিল বিরোধী স্লোগান। বিক্ষোভ রুখতে আম্বালায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
#WATCH Haryana: Police use water cannon to disperse Youth Congress workers protesting over #FarmBills, at Sadopur border in Ambala. pic.twitter.com/1OfFJlcKFo
— ANI (@ANI) September 20, 2020
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.