সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এ যেন সেই ওড়িশার দানা মাঝির মতোই ঘটনা। রাস্তা নেই, অ্যাম্বুল্যান্স পাঠাতে পারবে না হাসাপাতাল। তাই বিছানার চাদরে স্ট্রেচার বানিয়ে হাসপাতালে আনা হল প্রসূতিকে। নদীর ধার লাগোয়া পিচ্ছিল পাথরের উপর দিয়েই চাদর কাঁধে সাত কিলোমিটার পথ হাঁটলেন চারজন। মঙ্গলবার এই অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে কেরলের পালাক্কাডের উপজাতি অধ্যুষিত পার্বত্য এলাকায় আত্তাপাডিতে। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েই সেই ঘটনা দৃশ্যের ভিডিও।
২৭ বছরের ওই প্রসূতি একজন উপজাতি মহিলা। পালাক্কাডের প্রত্যন্ত পার্বত্য এলাকায় তাঁদের বাড়ি। সেখান থেকে পালাক্কাডের পিচ রাস্তার দূরত্ব সাত কিলোমিটার। ওই পার্বত্য গ্রামটির ভিতরেও সেই অর্থে কোনও রাস্তা নেই। বড় বড় পাথরে পা দিয়ে প্রাণ হাতে করে চলাফেরা করতে হয় বাসিন্দাদের। বর্ষাকালে এই চলাফেরাই রীতিমতো দায় হয়ে ওঠে। পিচ্ছিল আলগা পাথর তখন সাক্ষাৎ মৃত্যুদূতে পরিণত হয়। মঙ্গলবার ওই গ্রামেরই এক মহিলার প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। পরিবারের তরফে অ্যাম্বুল্যান্সের নিকটবর্তী সরকারি হাসপাতালে খবর দেওয়া হয়। তবে কোনও ফল হয়নি। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, রাস্তা না থাকায় কিছুই করা যাবে না। নিজেদের দায়িত্বে পরিবারের লোকজনকেই প্রসূতিকে নিয়ে আসতে হবে। এরপর বিছানার চাদরকেই স্ট্রেচার বানিয়ে চারকোণ চারজন ধরে। সেভাবেই প্রসূতিকে নিয়ে আসা হয়। পাহাড়ি পথে গ্রামের চারজন ছাড়াও প্রসূতির সঙ্গে ছিলেন পরিবারের দুই সদস্য। পরে পাহাড়ি পথ পেরিয়ে বড় রাস্তায় পৌঁছালে গাড়ি ভাড়া করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ওই গৃহবধূকে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ওই মহিলা।
এদিকে পাহাড়ি পথে চাদর কাঁধে প্রসূতিকে বয়ে আনার ছবি ভাইরাল হতেই নজরে এসেছে হাসপাতালটি। উঠেছে সমালোচনার ঝড়। বিতর্ক এড়াতে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, প্রসূতির শারীরিক পরিস্থিতির খবর পেয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছিল। তবে তার আগেই নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে প্রসূতিকে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা।
#Kerala: A pregnant tribal woman carried to hospital by her family members in Palghat’s Attappadi, due to unavailability of an ambulance. pic.twitter.com/NSrdzSC7QV
— ANI (@ANI) June 7, 2018
উল্লেখ্য, কেরলের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকা হচ্ছে এই আত্তাপাডি। গ্রামটিতে কোনও রাস্তা না থাকার কারণে আগেও সদ্যোজাত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই জন্যই বারবার খবরের শিরোনামে আসে আত্তাপাডি। কেননা প্রয়োজনের সময় হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না প্রসূতির পরিবার। গ্রামে আর একটি রাস্তা রয়েছে যেটি কাদায় ভরা। প্রধানত জিপ একমাত্র যাতায়াত করে ওই রাস্তা দিয়ে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছানোর রাস্তা না থাকায় ৬৬ থেকে ১০০০ সদ্যোজাতর মৃত্যু হয়েছে ওই এলাকায়। এই ঘটনায় তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। এরপরই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে ইউপিএ সরকার। গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২০১৩-তে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকার প্রত্যন্ত আত্তাপাডিতে রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু আজও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.