গৌতম ব্রহ্ম, পাটনা: ‘আয়ুষ্মান ভারত যোজনা‘ নিয়ে বিজেপির গনগনে উচ্ছ্বাস এবং লাফালাফির মাঝে একটি বিস্ময়কর গরমিল দেখা গেল। ধরা পড়ল এমনই এক চিত্র, যা সামলাতে প্রাক-ভোট লগ্নে খানিক বেকায়দাতেই তাঁরা। কাণ্ডটি ঘটেছে পাটনা, ৩৮নং ওয়ার্ডে। এই ‘আয়ুষ্মান ভারত যোজনা’-র তালিকায় রয়েছে শত্রুঘ্ন সিনহার নাম!
বিহারিবাবু ছাড়াও সেখানে লাখপতি, কোটিপতির রয়েছে যথেচ্ছ উপস্থিতি। দরাজ প্রতিবাদ করেছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ড. আশিস কুমার সিন্হা, জানিয়েছেন ‘বিপিএল‘ অর্থাৎ দারিদ্রসীমার নিচে থাকা রেশন কার্ডধারীদের নাম নেই। তিনি আয়ুষ্মান তালিকাটিও দেখান, যেখানে শত্রুঘ্ন সিন্হা-সহ বিজেপির বিহার ফায়ার ব্র্যান্ড নেত্রী সুষমা সাহুরও নাম রয়েছে। এমনকী, রয়েছে শত্রুঘ্ন সিন্হার স্ত্রী পুনম সিনহারও নাম। বলাই বাহুল্য যে, এঁরা কেউই কিন্তু বিপিএলের আওতায় পড়েন না। তবে সাধারণ মানুষ এতে শত্রুঘ্ন সিন্হার ডায়ালগানুসারে ‘খামোশ’ থাকেনি।
‘আয়ুষ্মান ভারত যোজনা’-র বয়স মাত্র মাস পাঁচেক। ১০ কোটি দারিদ্রসীমার নিচে থাকা পরিবারের এই যোজনা থেকে সুবিধা পাওয়ার কথা। এমনকী, যে ‘মানসিক অসুস্থতা‘-কে সমাজ এখনও মান্যতাই দিল না ঠিক করে, সেসব ক্ষেত্রেও সুবিধা পাওয়া যাবে। কিন্তু কারা পেতে চলেছে সেই সুবিধা? পাটনার ৩৮ নং ওয়ার্ডে প্রায় ২৫ হাজার ভোটার, কিন্তু মাত্র ১৫০০ জনের নাম পাঠানো হয়েছে-যার মধ্যে অধিকাংশই পরিবারই ধনী। এই তালিকায় নিম্নমধ্যবিত্ত বা গরিব মানুষদের নাম নেই, যা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণের।
তথ্য সামনে আসতেই বিহারের রাজ্য-রাজনীতিতে প্রবল হইচই। তালিকায় পাটনা সাহিব কেন্দ্রের সাংসদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। স্বাভাবিকভাবেই মুখ পুড়েছে বিজেপির। দলের আগমার্ক নেত্রী সুষমা সাহুর নামও রয়েছে তালিকায়। বাদ পড়েছেন ওয়ার্ডের গরিবগুর্বো মানুষজন। এই নিয়ে ভোটের মুখে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। স্থানীয় কাউন্সিলর আরজেডির ড. আশিসকুমার সিন্হার কাছে এসে নালিশ জানাচ্ছেন মানুষজন। আশিসবাবুর দুটো বাড়ির পরেই শত্রুঘ্ন সিনহার বাড়ি। আশিসবাবু জানালেন ‘কী করে এই ভুল হল জানি না। খোঁজ নিচ্ছি। নির্বাচন কমিশনেও জানানো হবে।’
শত্রুঘ্ন সিন্হার দুই সেক্রেটারি অভিষেক শ্রীবাস্তব ও সঞ্জয় রায়কে এ বিষয়ে ফোন করা হলে, তাঁরা ফোন ধরেননি। ‘বিজেপি যুব মোর্চা‘-র অধ্যক্ষ নীতিন নবীন এখন সিকিমে, অবজার্ভার রূপে গিয়েছেন। তাঁকে ফোনে ধরা হলে বলেন, ‘বিষয়টা অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক, দেখতে হবে কোনও গূঢ় অভিসন্ধি রয়েছে কিনা!’ একইসঙ্গে আশ্বাস দিলেন ৯ তারিখ ফিরে এলে তিনি এ বিষয়ের হেস্তনেস্ত করবেন।
এই পাটনা সাহিব কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে জিতে শত্রুঘ্ন সিনহা সংসদ হয়েছেন। কিন্তু বারবার মোদি-বিরোধী মন্তব্য করে বিজেপিকেই বিপাকে ফেলেছেন বিহারিবাবু। এবার শত্রুঘ্ন লড়ছেন কংগ্রেসের টিকিটে। ‘মহাগঠবন্ধন‘-এর অংশ হিসাবে আরজেডির সমর্থনও সঙ্গে রয়েছে। কিন্তু ‘আয়ুষ্মান ভারত যোজনা’ তালিকা কি তাঁর ভক্ত-সমর্থক তালিকা খানিক হালকা করে দিল? জবাব পেতে অবশ্য খুব বেশি দেরি নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.