Advertisement
Advertisement

Breaking News

প্রণব মুখার্জি

‘সিংহের গুহায় ঢুকেছিলাম ভুল বোঝাতে’, RSS-এর অনুষ্ঠানে যোগ নিয়ে বললেন প্রণব

সোনিয়া সিংয়ের ‘ডিফাইনিং ইন্ডিয়া : থ্রু দেয়ার আইজ’-এ প্রণববাবু ‘ভারতরত্ন’ নিয়ে কথা বলেছেন৷

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:May 22, 2019 11:22 am
  • Updated:May 22, 2019 11:42 am  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত বছর ৬ জুন নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সদর দপ্তরে গিয়েছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে বেশ চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল৷ আজীবন কংগ্রেসি প্রণববাবু হিন্দুত্ববাদীদের দপ্তরে যাচ্ছেন কেন? সম্প্রতি সোনিয়া সিং নামে এক সাংবাদিককে তার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। সোনিয়ার সদ্য প্রকাশিত বইতে প্রণববাবু বলেছেন, ‘আমি সিংহের গুহায় ঢুকেছিলাম। সেখানে ঢুকেই ওদের বোঝাতে চেয়েছিলাম, ওরা কোথায় ভুল করছে।’

[আরও পড়ুন: নৈশভোজেও আলোচনার কেন্দ্র বাংলা, হিংসার নিন্দায় সরব বিজেপির শরিকরা]

সোনিয়া সিংয়ের বইটির নাম ‘ডিফাইনিং ইন্ডিয়া : থ্রু দেয়ার আইজ’। বইতে প্রণববাবুর সাক্ষাৎকার রয়েছে। সেখানে তাঁকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার প্রসঙ্গ থেকে শুরু করে নরেন্দ্র মোদি ও ইন্দিরা গান্ধীর তুলনা, নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন প্রণববাবু।সোনিয়া লিখেছেন, প্রণব মুখোপাধ্যায় এখন আর সক্রিয় রাজনীতিতে নেই বটে, কিন্তু রাজনীতিতে এখনও ভীষণ প্রাসঙ্গিক। তাই তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি জানা খুব প্রয়োজনীয়। সে প্রসঙ্গেই সংঘ দপ্তরে তাঁর যাওয়ার বিষয় উঠে আসে। কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রকাশ্যেই তাঁকে নিষেধ করেছিল। বিষয়টি নিয়ে এতটাই হইচই হয় যে, প্রায় সমস্ত বৈদ্যুতিন মাধ্যম তাঁর ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করে। মঞ্চে বসে প্রণববাবুর ভাষণ মন দিয়ে শোনেন সংঘপ্রধান মোহন ভাগবতও। এবং ‘সিংহের গুহা’য় দাঁড়িয়ে ভারতের বহুত্ববাদী চরিত্র সম্পর্কে সংঘকর্মীদের উপদেশ দেন প্রণববাবু। উদ্ধৃত করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ‘ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া’ থেকে। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ধর্ম-জাতি-ঘৃণা-অসহিষ্ণুতার ভিত্তিতে জাতীয় চরিত্র ব্যাখ্যা করতে গেলে আখেরে ভারতের আসল পরিচয়টাই হারিয়ে যাবে। তিনি বলেছিলেন, “ভারতের আত্মার মধ্যে রয়েছে বহুত্ববাদ ও সহিষ্ণুতা। শত শত বছর ধরে নানা মতাদর্শকে আমরা আত্মস্থ করেছি। এইভাবে আমাদের বহুত্ববাদের আদর্শের জন্ম হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি ধর্মনিরপেক্ষতায়। পরকে আপন করে নেওয়াই আমাদের ধর্ম। এই সংস্কৃতিই আমাদের জাতি হিসাবে গড়ে তুলেছে।” মুচকি হেসে বইটির লেখিকাকে প্রণববাবু জানিয়েছিলেন, সিংহের গুহায় ঢুকে ওদের ভুলটা ধরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।

Advertisement

জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের বিকল্প হিসাবে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি গেড়ে বসা নিয়েও স্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে প্রণববাবুর। এমনকী হিন্দুত্বের এই সংজ্ঞা ও তার রাজনীতিকরণও সাময়িক বলে তিনি মনে করেন। তাঁর মত, ‘‘কংগ্রেসকে দরকার। কংগ্রেস ছাড়া দেশটা ‘বলকান’ হয়ে যাবে। এই অবস্থা চিরস্থায়ী হবে না। হিন্দুত্ব বিরাট একটা ব্যাপার। তা মানুষকে আপন করে নেওয়ার কথা বলে। আমরা কি পাকিস্তানের মতো হতে চাই? আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট বাইবেল হাতে শপথ নেন। ইংল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীদের শপথ গ্রহণের সময় বাইবেল হাতে নেন রানি। কিন্তু আমাদের দেশে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী শপথ নেওয়ার সময় আমরা সংবিধানকে গুরুত্ব দিই। ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের এই সাধারণতন্ত্রের ভিত্তি”, মন্তব্য প্রণববাবুর।

[আরও পড়ুন: ইসরোর মুকুটে নয়া পালক, সফল উৎক্ষেপণ রিস্যাট-২বি স্যাটেলাইটের ]

২০১৯ সালের সাধারণতন্ত্র দিবসের আগে সকলকে চমকে দিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকার প্রণববাবুকে ভারতরত্ন দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। প্রণববাবু জানিয়েছেন, “২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছ’টায় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ফোন করেন। জানতে চাইছিলেন, আমি ভারতরত্ন গ্রহণ করব কি না। সাধারণতন্ত্র দিবসের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট ভারতে এসেছিলেন। তাঁকে নিয়ে মোদি ব্যস্ত ছিলেন। তাই নিজে আমার কাছে আসতে পারেননি। ফোনেই সম্মতি নেন। তিনি চাইছিলেন, সেই সন্ধ্যাতেই ভারতরত্ন প্রাপকের নাম ঘোষিত হোক। সম্মতি না পেলে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করতে পারছিলেন না। আমি সম্মতি দিই।” প্রণববাবু জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে শর্মিষ্ঠা খুব রেগে গিয়েছিলেন। “ও বলল, তুমি ভারতরত্ন পাচ্ছ। অথচ তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে, কিছুই হয়নি। তুমি আমাকে পর্যন্ত জানাওনি! বললাম, আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না হলে বলা যায় না। শর্মিষ্ঠা বলল, আনুষ্ঠানিক ঘোষণার কী দরকার? প্রধানমন্ত্রী নিজে যখন ফোন করে বলেছেন, তখন কোনও সন্দেহ নেই।” এবং এটা
বিশেষ স্বীকৃতি বলেই মনে করেন প্রণববাবু।

[আরও পড়ুন: রেকর্ড গড়ে ফের নিম্নমুখী সেনসেক্স-নিফটি, বাজারে তুঙ্গে জল্পনা]

ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির তুলনা প্রসঙ্গে প্রণববাবু বলেন, ওঁদের মধ্যে অমিলই বেশি। ইন্দিরা ছিলেন চূড়ান্ত ধর্মনিরপেক্ষ। তাঁরা দু’জনেই দু’বার করে অরুণাচল প্রদেশে গিয়েছেন। ওই রাজ্যে মাত্র দু’টি লোকসভা আসন আছে। কিন্তু দুই প্রধানমন্ত্রীই জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে অরুণাচলে গিয়েছেন। তাঁরা উভয়েই চেয়েছেন, চিনকে কঠোর বার্তা দিতে। এদিকে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার আগাগোড়া যখন নানা ইস্যুতে বিরোধীরা কমিশনকে তুলোধোনা করছে, তখন তাদের ক্লিনচিট দিয়েছেন প্রণববাবু। বিরোধীরা কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সোনিয়া সিংয়ের বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি  বলেন, “আমরা যদি আমাদের দেশের সাংবিধানিক সংস্থাগুলিকে  মজবুত করতে চাই তাহলে মনে রাখতে হবে, এ ধরনের সংস্থা আসলে দেশের কাজে লাগে। আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যদি সাফল্য পেয়ে থাকে তাহলে তার সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে নির্বাচন নির্বিঘ্নে আয়োজন করতে পারার বিষয়টি। সে ব্যাপারে সুকুমার সেন (দেশের প্রথম মুখ্য নির্বাচন কমিশনার) থেকে শুরু করে এখনকার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সকলেরই ভূমিকা রয়েছে। তাঁরা নিজেদের কাজ ঠিক করে পালন করছেন। তাঁদের সমালোচনা করা যায় না। নির্বাচন আয়োজনে কোনওরকম ত্রুটি হয়নি। দেশের সংস্থাগুলি নিজেদের মতো কাজ করছে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় সেগুলি আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যার কাজের দক্ষতা নেই সে যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যার কাজের দক্ষতা আছে সে জানে, কোন যন্ত্রকে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement