সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভোপাল জেল থেকে পলাতক আট সিমি সদস্যকে পুলিশের এনকাউণ্টার করে মারার ঘটনায় জেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে সরব হল মধ্যপ্রদেশ মানবাধিকার কমিশন৷ এনকাউণ্টার নিয়ে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ যে বয়ান দিয়েছে তাতে বহু অসংগতি রয়েছে বলে দাবি করেছে কমিশন৷ হেড কনস্টেবলকে গলা কেটে খুন করে ভোপাল সেণ্ট্রাল জেল থেকে পলাতক নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী সিমির আট সদস্যকে নিকেশ করার একাধিক দৃশ্যের ভিডিও এদিন ফাঁস হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে৷
ভিডিও সৌজন্যে ‘দ্য কুইন্ট’
এরপরই কমিশন বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছে৷ ঘটনাটি এনকাউণ্টার না কি পরিকল্পিত? যদি এই ঘটনা সাজানো না হয়, তাহলে ভোপাল জেল থেকে আট কিলোমিটার দূরে আচারপুরা গ্রামে পুলিশের এনকাউণ্টারের দৃশ্য কী করে মোবাইলে রেকর্ড করা হল? জেলের পাঁচিল টপকানোর আগে একসঙ্গে এতজন বন্দি দাঁড়াল কেন কারও চোখে পড়ল না? সিসিটিভি ক্যামেরা খারাপ জানা সত্ত্বেও কেন জেল কর্তৃপক্ষ তা সারায়নি? পলাতকরা গারদ ভাঙার সময় টুথব্রাশকে চাবি হিসাবে ব্যবহার করেছিল বলে জেলের তরফে জানানো হয়েছে৷ রবিবার গভীর রাতে জেলে প্রহরারত কোনও কারারক্ষী সেই দৃশ্য দেখতে পেলেন না কেন? আদৌ কি প্লাস্টিকের ব্রাশ দিয়ে এতগুলো দরজার তালা খোলা যায়?
এনকাউণ্টারের ভিডিও ক্লিপিং দেখে বোঝা যাচ্ছে, পাঁচজন জঙ্গি পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে চাইছিল৷ পালানোর চেষ্টা করলে তারা হঠাৎ কথা বলতে চাইবে কেন? জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করতে না চাওয়ায় পুলিশ কেন তাদের আহত না করে একবারে খতম করে দেবে? জঙ্গিরা কী করে অস্ত্র পেল? কেউ তাদের জন্য জেলের বাইরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল? জেলে ৭০ জন রক্ষী পাহারা দেন৷ কিন্তু ঘটনার রাতে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৩০ জন৷ দীপাবলির জন্য ৪০ জন ছুটিতে যান৷ এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও একসঙ্গে কেন এতজন রক্ষীকে ছুটি দেওয়া হল?
মানবাধিকার কমিশনের দাবি, জঙ্গি নিকেশ করার বিষয়টি আগে থেকে পরিকল্পনা করা থাকলে তবেই পুলিশের কেউ দৃশ্যটি ভিডিও করে থাকতে পারেন৷ সাধারণত এনকাউণ্টার আচমকা হয়, সেক্ষেত্রে দুষ্কৃতীদের পিছু ধাওয়া করে গুলি চালায় পুলিশ৷ এনকাউণ্টার এতই তাড়াতাড়ি হয় যে কারও পক্ষে তা তৎক্ষণাৎ ভিডিও করা সম্ভব নয়৷ এছাড়া পুলিশ দাবি করেছিল, সিমি জঙ্গিরা যখন জেল থেকে পালায় তখন তারা বন্দিদের পোশাক পরেছিল৷ কিন্তু গুলিবিদ্ধ সিমি সদস্যরা নতুন জিনসের প্যাণ্ট, টি শার্ট, ঘড়ি, নতুন বেল্ট, স্পোর্টস শু পরেছিল৷ প্রশ্ন উঠছে, এগুলো এল কোথা থেকে? পোশাক পরিবর্তন করার সময় পেল কী করে? পুলিশকে গুলি করার জন্য ওয়ান শটার বন্দুকই বা পেল কী করে?
জঙ্গিদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ‘পরিকল্পিত’ বলে যখন বিভিন্ন মহল সরব হয়েছে, তখন পুলিশের এই অভিযানের ভূয়সী প্রশংসা করলেন মধ্যপ্রদেশের কারামন্ত্রী কুসুম মেহদালে৷ তিনি বলেন, “সমালোচনা না করে আপনাদের উচিত আমাদের প্রশংসা করা৷ জেল পালানো বন্দিদের ধরে আমরা খতম করতে তো পেরেছি৷” অন্যদিকে মঙ্গলবার সকালে ভোপাল জেলে জঙ্গিদের হাতে খুন হওয়া হেড কনস্টেবল রমাশঙ্করের শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং৷ রমাশঙ্করের পরিবারকে দশ লাখ টাকা ও তাঁর মেয়ের বিয়েতে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে সাহয্যের কথা ঘোষণা করেন তিনি৷
জেলের সিসিটিভি ক্যামেরা খারাপ থাকায় বন্দিরা সহজেই পালাতে পেরেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলের সদস্যরা৷ তবে এই ঘটনায় এনআইএ তদন্ত করলেও আর কোনও পৃথক তদন্ত করা হবে না বলে জানিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিং৷ তবে, ঘটনার পরদিনই সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিহত জঙ্গিদের পরিবার৷ কারা-কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ঢাকতে কিংবা ‘পরিকল্পিত এনকাউণ্টার’-এর বিষয়টি চাপা দিতেই মধ্যপ্রদেশ সরকার তদন্তের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চাইছে না বলে সরব হয়েছেন কংগ্রেস-সহ একাধিক বিরোধী দলের নেতারা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.