অজিত দোভালের সঙ্গে গোপনে প্রায় দু'ঘন্টা বৈঠক টিলারসনের।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যে কোনও মূল্যে চিনের দাদাগিরি রুখতেই হবে। এই শপথ নিয়ে ভারত ও আমেরিকা একসঙ্গে এক নতুন পথের দিশায় হাঁটা শুরু করছে। বেজিংয়ের কোটি কোটি মার্কিন ডলারের প্রকল্প ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’-এর পালটা পরিকাঠামো গড়ে তুলতে চাইছে আমেরিকাও। তাও আবার ভারতকে পাশে নিয়ে। উপমহাদেশে ব্যাপক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, বন্দরে ঢালাও পরিকাঠামো গড়ে জলপথে চিনকে ঘিরে ফেলতে চাইছে ওয়াশিংটন।
এই বিষয়ে ইউএস সেক্রেটারি অফ স্টেট ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত রেক্স টিলারসন বুধবারই কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। একদফা কথা হয়েছে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গেও। টিলারসন তাঁর এবারের সফরে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, কাতার ও ইরাকে গিয়েছেন। সেই সব দেশের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে এবার বিশ্বমানের একটি প্রকল্পে শুরু করতে চাইছে আমেরিকা। তার আগে অবশ্য সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের কড়া সমালোচনা করতে ছাড়েননি টিলারসন। অনেকেরই চোখ এড়িয়ে প্রায় দু’ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক করেছেন দোভালের সঙ্গে। এতটা সময় তিনি নরেন্দ্র মোদিকেও দেননি। মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন মাত্র অধঘন্টা। সূত্রের খবর, দোভালের সঙ্গে বৈঠকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের এমন বড় মাপের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চাইছে আমেরিকা, যার ব্যাপ্তি দেখে পাকিস্তানও এই প্রকল্পে শামিল হতে কার্যত বাধ্য হয়।
টিলারসন চাইছেন, বিশ্বের বৃহত্তম দুই গণতন্ত্র একত্রে হাত মিলিয়ে চিনের দাদাগিরি ঠেকাক। সবরকম নিয়ম মেনে ও স্বচ্ছ আর্থিক জোগান নির্ভর বিকল্প ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ নীতি গ্রহণ করতে। চিন বেশ কয়েক বছর ধরেই এই প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং আগ্রাসী মনোভাবে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশের বন্দর, রেলপথ ও সড়কপথকে সিল্ক রোডের মাধ্যমে একসূত্রে বেঁধে ফেলতে চাইছে বেজিং। চিনা পণ্য বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে ও যে কোনও স্থানে চিনা সেনা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে সেখানে যেন দ্রুত রসদ ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা যায়, এখন সেই লক্ষ্যেই অবিচল ড্রাগনের দেশ। ভারত প্রথম থেকেই এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে। কারণ, চিনের এই প্রকল্পের একটি বড় রাস্তা বিতর্কিত পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে যাবে। এর ফলে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তান কখনও যুদ্ধে জড়ালে চিন খুব অল্প সময়ের মধ্যে চিনা সেনার পদাতিক বাহিনী সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে পাকিস্তানকে সাহায্য করতে চলে আসতে পারে। আর এটাই চাইছে না নয়াদিল্লি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভারতীয় কূটনীতিক জানিয়েছেন, শুধু বিকল্প OBOR প্রকল্পই নয়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বিমান ওঠানামা, নজরদারির ক্ষেত্রে নিবিড় সম্পর্ক চাইছে পেন্টাগন। পাশাপাশি, ভারতের মিলিটারিকে সর্বাধুনিক হিসাবে গড়ে তুলতে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন টিলারসন। ভারত চাইলেই নয়া প্রজন্মের মার্কিন যুদ্ধবিমান এফ-১৬ ও এফ-১৮ দিতে রাজি আমেরিকা। সেই সঙ্গে ভারী পণ্য বা সেনাবাহিনীর সদস্যদের বয়ে নিয়ে যেতে সি-১৭ হেভি লিফ্ট ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফটও পেতে পারে ভারত। সুষমার দাবি মেনে নজরদারির কাজে চলে আসছে চালকবিহীন বিশেষ অস্ত্রধারী ড্রোন। দোভালের সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথনে ইরাকে কীভাবে আইএস জঙ্গিদের নিকেশ করেছে মার্কিন সেনা, সে কথা সবিস্তারে বলেছেন টিলারসন। প্রয়োজনে আফগানিস্তান ও ইরাকে স্থায়িত্ব ফিরিয়ে আনতে মিলিটারি নামাতে পারে আমেরিকা। ভারতকে সেক্ষেত্রে সবরকম সাহায্যের জন্য পাশে থাকার দাবি জানিয়ে গেলেন ইউএস সেক্রেটারি অফ স্টেট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.