নন্দিতা রায়, ভদোদরা: ঊর্বশীকে প্রত্যাখ্যান করার জেরে অভিশাপগ্রস্ত অর্জুনকে একবছর ‘বৃহন্নলা’ সেজে আত্মগোপন করতে হয়েছিল বিরাট রাজার প্রাসাদে। রাজকন্যাকে নাচ—গান শিখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছিলেন পাণ্ডবশ্রেষ্ঠ।
[আবদুল্লাহকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে লালচকে তেরঙ্গা ওড়াল শিব সেনা]
অথচ এ যুগের বৃহন্নলাদের একটা বড় অংশ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে বা ট্রেনে অথবা সন্তান জন্মের পর সদ্যোজাতের বাড়িতে চড়াও হয়ে জোর করে ইচ্ছামতো টাকা দাবি করছে। আপত্তি করলেই তীব্র ভর্ৎসনার পাশাপাশি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আবার এদের একটা অংশকে আবার নকল বৃহন্নলা বলে দাবি করছে প্রকৃত বৃহলন্নাদের সংগঠন। তবে গুজরাট ভোটে এই সমস্ত বৃহন্নলা, চলতি কথায় কিন্নরদের সচিত্র পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। অনেকেই বলছেন, কমিশনের এই সিদ্ধান্তে নকল বৃহন্নলাদের দৌরাত্ম্য কমবে। বন্ধ হবে ‘তোলাবাজ’ বৃহন্নলাদের দাপট।
[‘ফের তৈরি হবে বাবরি মসজিদ’, পোস্টার ঘিরে উত্তেজনা উত্তরপ্রদেশে]
আসল তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নাকি নকল! এবার থেকে সেই ফয়সালা করা যাবে সহজেই। আর সেই আশাতেই দিন গুনছেন গুজরাটের আসল তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা। শুধু গুজরাট নয়, কলকাতা—সহ দেশের সর্বত্রই বহু নকল তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের দেখা মেলে৷ ছেলেরা মেয়ের মতো সাজসজ্জা করে। বৃহন্নলা সেজে ঘুরে বেড়ায়৷ রাস্তার দাঁড়িয়ে লোকের কাছ থেকে জোর করে টাকা তোলে। নানা অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে্ যুক্ত এরা। ফলে কিন্নরদের প্রতি মানুষের বিরক্তির উদ্রেক হয়। সমাজের মূলস্রোত থেকে তাঁরা আরও বেশি করে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আর সেটিই সবচেয়ে বড় সমস্যা আসল কিন্নরদের৷ ‘কিন্নর’দের নিয়ে সমাজে বহু ভ্রান্ত ধারণা আছে৷ তাঁদের দৈনন্দিন জীবনেও সমস্যার শেষ নেই৷ তার উপর নকল কিন্নরদের দাপটে জীবন আরও দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের৷এমনটাই দাবি ভদোদরার বারণপুরা এলাকার ‘বৃহন্নলা’ আশা কুঁয়ের৷
[‘সেনারা দেশের জন্য প্রাণ দেন, ওঁদের সন্তানদের পড়ার খরচে কার্পণ্য নয়’]
গুজরাটের বারণপুরায় প্রায় একশো কিন্নরের বাস৷ তাদের দলপতি আশা৷ ‘মাসি’ বলে তাঁকে সবাই ডাকে৷ ভোটার কার্ড পেয়েছেন। প্রায় ষাট বছর বয়সে এবারই জীবনের প্রথম ভোট দেবেন৷ নকল কিন্নররা এবার ধরা পড়বে বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন৷ বললেন, “এমন বহু দল রয়েছে যারা সবাই নকল কিন্নর৷ হয় মেয়েদের মতো সেজে থাকে নতুবা লিঙ্গচ্ছেদ করিয়েছে৷ আমরা চাই, যাঁরা জন্মসূত্রে কিন্নর তাঁদের চিহ্নিত করা হোক৷ তাতে কারা আসল আর কারা নকল তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের প্রতি লোকজনদের মনোভাব পরিবর্তন হবে৷”
[কুষ্ঠ রোগী বলে মিলছে না আধার, পেনশন না পেয়ে বিপাকে বৃদ্ধা]
ভোটার কার্ড তৈরি হওয়াতে তাদের আসল পরিচয়ে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা বা সরকারি অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে বলেই আশা করছেন বারণপুরার কিন্নররা৷ ভোটার কার্ডে তৃতীয় লিঙ্গ উল্লেখ করার কোনও নিয়ম আগে ছিল না। তাই বহু আসল কিন্নর নারী পরিচয় দিয়েই পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন৷ কারণ, বিদ্যুৎ বা গ্যাসের লাইন থেকে শুরু করে মোবাইল কানেকশন নেওয়া, সবকিছুতেই পরিচয়পত্রের প্রয়োজন রয়েছে৷ বারণপুরার ১০০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মধ্যে ৭৭ জন তাঁদের ভোটের সচিত্র পরিচয়পত্র পেয়েছেন৷ সুরাটের কিন্নররাও তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে সচিত্র পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন৷ কিন্তু, তাঁদের ভোটার কার্ড তৈরিই হয়নি৷ প্রসঙ্গত, ভোটার তালিকায় তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে পরিচয় দেওয়া যেত না৷ কিন্তু, ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময়েই ভোটার হিসেবে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে৷
[অভিনব উদ্যোগ, এবার বিমানবন্দরে বসছে অন্তর্বাসের ভেন্ডিং মেশিন]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.